‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫০
2023-12-26 19:10:02


 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে     

১। পর্যটন আকৃষ্ট করবে চীনের তৈরি আডোরা ম্যাজিক সিটি জাহাজ 

২। পর্যটক মুখর হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ড

৩। ঘুরে আসুন তরুণ মাও সেতুও ভাস্কর্য থেকে  

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫০তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।       

১। পর্যটন আকৃষ্ট করবে চীনের তৈরি আডোরা ম্যাজিক সিটি জাহাজ 

পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এবং পর্যটন খাতকে আরও চাঙ্গা করতেই বিশালাকারের আডোরা ম্যাজিক সিটি জাহাজ  তৈরি করেছে চীন। নিজ দেশে এমন ক্রুজ শিপ নির্মাণকে বড় সাফল্য বলে মনে করছে তারা।

সম্প্রতি চীনের শাংহাই উসুংখুউ আন্তর্জাতিক ক্রুজ টার্মিনাল থেকে প্রায় ২ হাজার যাত্রী নিয়ে তিন দিনের জন্য পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু করেছে জাহাজটি ।২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করবে এ জাহাজটি। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় জাহাজটির প্রথম সমুদ্রযাত্রার টিকিট বুকিং ।

দানবাকৃতির এই জাহাজ নির্মাণ করেছে চীনের স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাংহাইয়ের ওয়াইকাওছিয়াও শিপবিল্ডিং লিমিটেড। বিশালাকার ক্রুজ শিপটির ওজন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টনের ওপর। দৈর্ঘ্য ১০৬১ ফুট, যা পাঁচ হাজারের বেশি যাত্রী বহনে সক্ষম। এতে মোট ২ হাজার ১২৫টি অতিথি কক্ষ রয়েছে।

 

১৬ তলা এই জাহাজটির ৪০ হাজার বর্গ মিটারে জনসাধারণের বসবাস এবং বিনোদনের জায়গা রয়েছে। এছাড়া, বিশ্বের প্রথম জাহাজ হিসেবে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের আওতাধীন হবে অ্যাডোরা ম্যাজিক সিটি। বিমান বহনের সক্ষমতাও এই প্রমোদতরীকে দিয়েছে বিশেষত্ব।

এ প্রমোদতরীতে রয়েছে থিয়েটার, রেস্তোরাঁ, কেনাকাটার দোকান, আর্ট গ্যালারি, ওয়াটার পার্কসহ অসংখ্য বিনোদনমূলক সুবিধা। পূর্ব ও পশ্চিম, উভয় সংস্কৃতির মানুষের উপভোগের বিষয়টি রাখা হয়েছে বিবেচনায়। ‘অ্যাডোরা ম্যাজিক সিটি’ বিশ্বের অন্যতম বড় বিলাসবহুল প্রমোদতরী।

চারটি টাগবোটের সহায়তায় বন্দর থেকে জাহাজটিকে ভাসানো হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষামূলক যাত্রাটি ছিল মূলত কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণের জন্য, যা ডকে স্থির অবস্থায় বোঝা সম্ভব ছিল না। ১০০ মিটার গভীরতার পানিতে এর গতি কেমন হয় এবং যান্ত্রিক বিষয়গুলো ঠিক আছে কিনা, তা বুঝতে গভীর সাগরে জাহাজটি চালানো প্রয়োজন ছিল।

এই সফলতা দেশটির সমুদ্রে প্রমোদ ভ্রমণে মাইলফলক সৃষ্টি করবে বলে প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের।অ্যাডোরা ম্যাজিক সিটি নির্মাণের এই সিদ্ধান্ত চীনকে প্রযুক্তিগতভাবে স্বনির্ভর করে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে।

এর আগে গত ২৪ জুলাই পরীক্ষামূলক সফল যাত্রা সম্পন্ন করে এ নৌযানটি। সে সময় প্রমোদতরীটি আট দিনের পরীক্ষামূলক সফল যাত্রা শেষ করে নিজ বন্দরেই ফিরে।

প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা- আফরিন মিম

২। পর্যটক মুখর হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ড

রূপকথার তুষার রানীর রাজ্য যেন বাস্তবে রূপ পেয়েছে। বরফের তৈরি রাজপ্রাসাদ, বরফের তৈরি নানা রকম ভাস্কর্য, বরফঢাকা প্রান্তরে স্লেজে চড়ে ঘুড়ে বেড়ানো আর শুভ্র বরফে নানা রঙের আলোর খেলা সবমিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জমজমাট তুষার ও বরফের জগত দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে চীন দেশে। চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারবিন শহরে প্রতিবছর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় এইজগত,যা , হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ড নামে পরিচিত।

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশ এখন পর্যটকে মুখর একটি আলাদা জগত। কেননা সম্প্রতি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ২৫তম হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ড। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান থিম পার্ক যেখানে রয়েছে  বড় আকারের বরফ এবং তুষার ভাস্কর্য । এখানে বরফের তৈরি এমন সব ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয় যা অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর ও বিশাল আকারের।

 

যেহেতু হারবিন ২০২৫ এশিয়ান শীতকালীন গেমসের আয়োজক শহর হবে, তাই এই বছরের বরফ এবং তুষার সারা বিশ্বের পর্যটকদের জন্য একটি বরফের আশ্চর্যভূমি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব শীতকালীন ক্রীড়াগুলোকে আঞ্চলিক সংস্কৃতি , হেইলংচিয়াংয়ের বরফ এবং তুষার সংস্কৃতির সঙ্গে একত্রিত করে ৷

 

 

৮ লাখ ১০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে পার্কটিতে ২ হাজারের বেশি বরফ এবং তুষার ভাস্কর্য রয়েছে, যা এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্কেল চিহ্নিত করে। আয়োজকরা পার্কে সুপার আইস স্লাইডকে আপগ্রেড করেছেন, বিদ্যমান আটটিতে ছয়টি নতুন যুক্ত করেছেন, যার মধ্যে দীর্ঘতমটি ৫২১ মিটার প্রসারিত হয়েছে।

 

 

আয়োজকরা জানান, এই বছরের বরফ ও স্নো ওয়ার্ল্ড দর্শকদের আরও বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা প্রদান করবে, যেখানে তারা কেবল সূক্ষ্মভাবে ডিজাইন করা বরফ এবং তুষার ভাস্কর্যই দেখবে না বরং বরফ এবং তুষারের বিনোদনমূলক কার্যকলাপ উপভোগ করতে পারবে।  

 

 

হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ল্ড ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, পার্কে প্রতি শীতে কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বরফ এবং তুষার ঘটনা হারবিনে পর্যটনের চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে, যেটি সেন্ট সোফিয়া ক্যাথিড্রালের মতো রাশিয়ান-শৈলীর ভবনগুলোর জন্য "প্রাচ্য মস্কো" নামে পরিচিত।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

৩। ঘুরে আসুন তরুণ মাও সেতুও ভাস্কর্য থেকে 

মধ্য চীনের হুনান প্রদেশ ঐতিহাসিক কারণে যেমন বিখ্যাত তেমনি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনবদ্য। এখানে রয়েছে তরুণ মাও সেতুং ভাস্কর্য বা ইয়াং মাও সে তুং স্ট্যাচু। কেননা  হুনানের শাওশান গ্রামে চীনের এই মহান নেতা মাও সেতুং এর জন্ম।

নিকটবর্তি ছাংশা শহরে তিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। সে সময় তিনি ছিলেন তরুণ নেতা। এই তরুণ বিপ্লবী নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাংশায় স্থাপন করা হয়েছে এক অনবদ্য শিল্পকর্ম।

এই শিল্পকর্মের নাম ত ছাংশার অরেঞ্জ আইল নামক স্থানে এটি স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যটি ৩২ মিটার উঁচু, ৪১ মিটার প্রশস্ত এবং ৮৩ মিটার দীর্ঘ। মাও সেতুং ৮৩ বছর বেঁচে ছিরেন তাই এর দৈর্ঘ্য ৮৩ মিটার। তিনি চুনই সম্মেলন থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ৪১ বছর চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাই এটি ৪১ মিটার প্রশস্ত।

৩২ বছর বয়সে তরুণ মাও সেতুং ছাংশা শহরকে নিবেদন করে কবিতা লেখেন তাই এটি ৩২ মিটার উঁচু। এই ভাস্কর্যে তরুণ নেতা মাও সেতুংয়ের মুখমন্ডলকে তুলে ধরা হয়েছে। পুরো ভাস্কর্যটি গ্রানাইট পাথরে তৈরি।

হুনান প্রাদেশিক সরকার ২০০৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০০৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফুচিয়ান প্রদেশের গ্রানাইট খনি থেকে ৮০০ টন পাথর আনা হয়।

এই ভাস্কর্যের চারপাশে রয়েছে অসাধারণ সুন্দর ফুলের বাগান। আরও রয়েছে প্রশস্ত চত্বর। দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটক এই ভাস্কর্য দেখতে আসেন এবং মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী