ডিসেম্বর ২৫: চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসবকে (চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার নববর্ষ) সম্প্রতি জাতিসংঘ ছুটি হিসেবে নির্ধারণ করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম সম্মেলন এ ঘোষণা আসে। সিদ্ধান্তটি বিশ্ব সংস্থাটির সদস্য দেশ এবং সচিবালয়ের কর্মীদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।
বর্তমানে অনেক দেশ এবং অঞ্চল বসন্ত উৎসবকে সরকারি ছুটি হিসেবে নির্ধারণ করেছে। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নানা পদ্ধতিতে বসন্ত উৎসব উদযাপন করে। প্রশ্ন আসতে পারে, বসন্ত উৎসব কী কারণে জাতিসংঘে সরকারি ছুটি হিসেবে মর্যাদা পেলো?
নিইউয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ছুটির দুটি ধরণ রয়েছে: সরকারি ছুটি এবং ‘ভাসমান ছুটি’। সরকারি ছুটিতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কার্যক্রম বন্ধ থাকে। নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া অন্যদের অফিসে আসতে হয় না। ‘ভাসমান ছুটি’ বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত অতিরিক্ত ছুটি। কর্মীরা নিজের ধর্মবিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিশেষ ‘ভাসমান ছুটি’ নিতে পারেন। এমন দিনে জাতিসংঘ সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম আয়োজন করে না। তবে নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশেষ বিভাগের যদি কাজের প্রয়োজন থাকে, তাহলে এ দিন জাতিসংঘ চাইলে সম্মেলন আয়োজন করতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে ২০২৩ সালের কথা বলা যায়: এ বছরে জাতিসংঘে ৯টি সরকারি ছুটি আছে। যেমন নববর্ষ, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ফেডারেশন ছুটি, গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ছুটি, যেমন বড় দিন, ঈদ ইত্যাদি। চলতি বছরের ভাসমান ছুটি মোট আটটি। এটি প্রধানত ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ছুটি।
চীনের বসন্ত উৎসবকে ‘ভাসমান ছুটি’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ায় জাতিসংঘ এদিন সম্মেলন আয়োজন করবে না। পরবর্তীতে সময়সূচি নির্ধারণের সময়ও এ দিনটিকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।
জাতিসংঘ প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে, অনেক সদস্য দেশ বসন্ত উৎসব উদযাপন করে, এই উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রতি বছর বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে ভাষণ দেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের প্রতিনিধি দলের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তাই বিং বলেন, বসন্ত উৎসবকে জাতিসংঘ ছুটি হিসেবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টা হল বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগ বাস্তবায়ন। বিশ্বের সভ্যতার বৈচিত্রকে সম্মান করার বিষয়টি নিশ্চিত করে চীনের এ উদ্যোগ। বসন্ত উৎসব জাতিসংঘে ছুটি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, যা চীনা সভ্যতা এবং প্রাচ্য সংস্কৃতির প্রচার ও প্রভাব শক্তির পুরোপুরি প্রতিফলন। এটি বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে বিনিময়ের জন্য সহায়ক, যা জাতিসংঘের সহনশীল সাংস্কৃতিক চেতনারও বহিঃপ্রকাশ।
থাই সংগীত শিক্ষক ছেন কুও লি’র পৈতৃক বাড়ি চীনের কুয়াংতুং প্রদেশে। তিনি মনে করেন, চান্দ্র নববর্ষকে জাতিসংঘ ছুটির দিন হিসাবে গ্রহণ করার বিষয়টি চীন এবং প্রাচ্য সংস্কৃতির উপর আন্তর্জাতিক সমাজের গুরুত্বারোপকে প্রতিফলিত করে। অতীতে, পশ্চিমা উৎসবগুলো বিশ্বজুড়ে উৎসবে পরিণত হয়েছিল। এখন আন্তর্জাতিক সমাজ ক্রমবর্ধমানভাবে মানব সভ্যতার জন্য চীনা ও প্রাচ্যের সংস্কৃতির গুরুত্ব দেখছে এবং স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটি সাংস্কৃতিক পর্যায়ে প্রাচ্য এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়াকে প্রতিফলিত করে। এবং এটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে জনগণের বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধের জন্য একটি ভাল সূচনা।
বসন্ত উৎসবের প্রভাব-শক্তি কত বড়?
বসন্ত উৎসব বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বসন্ত উৎসবকে একটি সরকারি ছুটি হিসাবে নির্ধারণ করেছে, এবং স্থানীয় এলাকায় একটি অনন্য এবং বড় আকারের উদযাপন পদ্ধতি তৈরি করেছে।
বসন্ত উৎসব ভিয়েতনামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যখন সাত দিনের ছুটি থাকে। ভিয়েতনামের লোকেরা সাধারণত দ্বাদশ চান্দ্র মাসের শুরু থেকে বসন্ত উৎসবের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে, যেমন নববর্ষের কেনাকাটা, ঘর পরিষ্কার এবং সজ্জিত করা, নববর্ষের ছবি কেনা ইত্যাদি। সৌভাগ্যের আশীর্বাদ বহন করে এমন ফুলও অপরিহার্য নববর্ষের কেনাকাটায়।
দক্ষিণ কোরিয়ায়, নববর্ষের আগের দিন, প্রথম চান্দ্র মাসের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিন হল সরকারি ছুটি, এবং ‘বলিদান’ এবং ‘বছরের পুরানো উপাসনা’ হল মূল বিষয়বস্তু। প্রথম চান্দ্র মাসের প্রথম দিনে খুব ভোরে, পূর্বপুরুষের স্মরণে পূজো-অর্চনার জন্য বাড়িতে বিভিন্ন যজ্ঞের সামগ্রী রাখা হয়। এর পর তরুণ প্রজন্ম পালাক্রমে তাদের বড়দের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। চীনা ‘লাল খাম’ থেকে তা ভিন্ন যা সুখের প্রতিনিধিত্ব করে, কোরিয়ানরা ভাগ্যবান অর্থ ধারণ করার জন্য সাদা খাম ব্যবহার করতে পছন্দ করে। মজার বিষয় হল, ‘বসন্ত উৎসব যাতায়াতে’র বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়াতেও দেখা যায়।
(শুয়েই/হাশিম)