চীনা প্লেটে অভ্যর্থনা জানানো আলজেরিয়ার শত বছরের পুরনো রেস্তোঁরা
2023-12-25 11:03:34

আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি বিখ্যাত শত বছরের ‘বানর স্রোত’ রেস্তোঁরা আছে। রেস্তোঁরার দরজায় প্রবেশ করার সময় দেয়ালের টাঙ্গানো একটি ছবি চোখে পড়ে। নেপোলিয়ন তৃতীয়, ব্রিটেনের প্রিন্স ফিলিপ এবং দেশটির বেশ কয়েকজন সাবেক নেতারা এখানে এসেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যপার হলো রেস্তোঁরার একেবারে কেন্দ্রে লেখা ‘চীনা প্লেটে স্বাগতম’।

রেস্তোঁরার মালিক আম্বারেক নাজিম জানান, রেস্তোঁরাটি ১৮৫০ সালে খোলা হয়েছিল। এটি এক গিরিখাতের পাশে অবস্থিত এবং এর পাশ দিয়ে স্রোত বয়ে যায়। শুরুর দিকে রেস্তোঁরাটি এটলাস পর্বতমালার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় পর্যটকদের থামার জায়গা ছিল। পর্যটকরা এখানে খাবার খেতেন এবং কিছুটা বিশ্রাম নিতেন। সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং সুন্দর পরিবেশের কারণে রেস্তোঁরাটি আলজেরিয়ার স্বাধীনতার পর এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়।

কিন্তু এমন একটি জনপ্রিয় শত বছরের পুরনো রেস্তোঁরা দশ-বার বছর আগে ভেঙ্গে ফেলার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এটলাস পর্বতমালা অতিক্রম করার সড়ক ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না, দেশটির সরকার দক্ষিণ ও উত্তর দিকের এক্সপ্রেস সড়কের গিফা অংশ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী, গিফা গিরিখাতে সুরঙ্গ+সেতুর রূপে আংশিক পথ নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। তার মানে নির্মাণ এলাকায় বিপুল হারে গাছপালা নষ্ট হবে; প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত বিপন্ন প্রজাতি ম্যাকাকা সিলভানার আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ‘বানর স্রোত’ রেস্তোঁরাও অপসারণ করা হবে।

সড়কের এই অংশের নির্মাতা চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের (সিএসসিইসি) একটি দল ওই এলাকা পরিদর্শন করার পর ‘অতিবিরল প্রাণীর জন্মস্থান রক্ষা এবং স্থানীয় জনগণের জন্য ইতিহাস সংরক্ষণের”র প্রত্যয়ে এক্সপ্রেস সড়ক ব্যুরোর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে। এর ফলে এক্সপ্রেস সড়ক ব্যুরো প্রাথমিক নকশা পরিবর্তন করে পুরো লাইনটি পশ্চিম দিকে সরিয়ে নেয় এবং আরও জটিল দীর্ঘ সুড়ঙ্গ ‘বানর স্রোত’ রেস্তোঁরার পশ্চিম দিক থেকে এটলাস পর্বতমালার মধ্য দিয়ে নির্মাণে রাজি হয়, যাতে গাছপালার ক্ষতি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থাপত্য রক্ষা করা যায়।

গিফা অংশের প্রকল্প মহাব্যবস্থাপক থান শিয়াওজু বলেন, এ পরিবর্তনের মানে সুড়ঙ্গটি আরও জটিল ভূতাত্ত্বিক কাঠামোতে গঠিত পাহাড়ের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। একেকটি টানেলের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়বে। সঙ্গে জটিলতাও বাড়াবে। শুধু টানেলের মুখ খোলার জন্যই প্রকল্প গ্রুপের এক বছরের বেশি সময় লেগেছে। তারা দশ-বারটি খননযন্ত্র দিয়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার বর্গমিটার জায়গার পাথর অপসারণ করে ৬শ’ মিটার দীর্ঘ পথ নির্মাণ করে। নির্মাণস্থলে উচ্চতার তারতম্য ৬০ মিটারের মতো।

কিন্তু এগুলো প্রকল্পের অগ্রগতি ও মানের ওপর কোনও প্রভাব ফেলকে পারেনি। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ, গিফা অংশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চালু হয়। ফলে এটলাস পর্বতের মধ্য দিয়ে গাড়ি অতিক্রম করার সময় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। দেশটির তখনকার প্রধানমন্ত্রী আবদেলাজিজ জেরাদ প্রকল্পটিকে ‘দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগতভাবে তাত্পর্যপূর্ণ মহান প্রকল্প’ বলে অভিহিত করেন।

আশপাশের গ্রামবাসীদের বাচ্চারা রেস্তোঁরার ইয়ার্ডে বাদাম দিয়ে গাছ থেকে বানর ডাকছে দেখে নাজিম বলেন, চীনা নির্মাতারা পরিকল্পনা পরিবর্তন না করলে, এমন দৃশ্য আর কখনও দেখা যেতো না। সুতরাং দু’দেশের বন্ধুত্ব ও হাতে হাত রেখে প্রকৃতি ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার রক্ষা করার গল্প স্মরণ করার জন্য তিনি রেস্তোঁরা মাঝখানে ‘চীনা প্লেটে স্বাগতম’ লিখে রেখেছেন। (প্রেমা/রহমান)