দেহঘড়ি পর্ব-০৫০
2023-12-24 19:06:19

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমের টিসিএম চিকিৎসা কী?

আপনি কি প্রসাবের বেগ ছাড়াই মূত্রাশয়ে ব্যথা ও চাপ অনুভব করেন এবং প্রসাবের বেগ এলে কি সে চাপ ও ব্যথা আরও বেড়ে যায়? এমন হলে আপনি সম্ভবত ইন্টারস্টিশ্যল সিস্টাইটিস বা ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমে ভুগছেন। ইন্টারস্টিশ্যল সিস্টাইটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যার ফলে মূত্রাশয় চাপ ও ব্যথা বোধ করে। এ ব্যথা কখনও কখনও পেলভিক বা শ্রোণী অঞ্চলে অনুভূত হয়। এ ব্যথা হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।

এটি সাধারণত একটি ইউরোলজিক্যাল বা গাইনোকোলজিক্যাল অবস্থা হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে, পুরুষ ও মহিলা যে কারো এ রোগ হতে পারে। ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোম একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগ যা প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় নির্ণয় ও চিকিত্সা করা কঠিন৷ তবে এ রোগের একটি একটি ভালো বিকল্প চিকিৎসা ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএম।

ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমে কেন হয়?

চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি কেন ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোম হয়। তবে ধারণা করা হয়, অটোইমিউন বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার এমন কোনও বিভ্রাট থেকে এটা হতে পারে, যা মূত্রাশয়কে আক্রমণ করে বা মূত্রাশয়ে প্রদাহজনক কোষের বিকাশ ঘটায়।

লক্ষণ

যারা ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমে ভোগেন, তাদের সবার অভিজ্ঞতা এক রকম নয়; আলাদা রকমের। কারো কারো ক্ষেত্রে মূত্রাশয়ে ব্যথা বা চাপের অনুভূতি আসা-যাওয়া করতে পারে আবার কেউ কেউ অবিরাম ব্যথা বা চাপ অনুভব করতে পারেন। তবে এ রোগের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকে বারে বারে প্রস্রাবের বেগ আসা; সারাক্ষণ প্রসাবের তাগিদ বোধ করা; একবারে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া; মূত্রাশয়ে ব্যথা ও চাপ এবং শ্রোণী অঞ্চল ও পেরিনিয়ামে ব্যথা; সহবাসের সময় ব্যথা। ঋতুস্রাবের সময় ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমের আরও বাড়তে পারে।

চিকিত্সা

ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমের চিকিৎসা প্রধানত এর লক্ষণগুলো প্রশমিত করার উপর জোর দেয়৷ লক্ষণভেদে ব্যথানাশক, অ্যান্টিহিস্টামিন ও ডিপ্রেশন প্রতিরোধী ওষুধ দেওয়া হয় এজন্য। তবে কোনটিই এ রোগ নিরাময় করে না। টিসিএম ও আকুপাংচার এর একটি ভালো বিকল্প চিকিৎসা, যা ব্যথা উপশম করতে পারে এবং সমস্যার মূল কারণ দূর করতে পারে।

টিসিএমে মনে করা হয়, কোন একটি রোগ হয় শরীরে বা নির্দিষ্ট কোনও অঙ্গে মূল জীবনীশক্তি বা ‘ছি’ ভারসাম্যহীন হলে। ‘ছি’ আসলে উষ্ণশক্তি বা ‘ইয়াং’ এবং ঠাণ্ডাশক্তি ‘ইয়িন’র সমন্বয়। এ দুটির মধ্যে কোন একটি বাড়লে বা কমলে, রোগ সৃষ্টি হয়। এ চিকিৎসাব্যবস্থায় মনে করা হয়, মূত্রাশয়ের সুস্থতা কিডনি ও প্লীহার উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। কিডনি ও প্লীহা মূত্রাশয়কে ইয়াং শক্তি যোগান দেয়। যখন কিডনিতে ইয়াং কমে যায়, তখন মূত্রাশয়ের প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। কিডনির উষ্ণশক্তি কোনও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে দুর্বল হতে পারে। এমন অসুস্থতার কারণে মূত্রাশয় আকারে সংকুচিত হতে পারে এবং এটি অনেক বেশি সংবেদনশীল হতে পারে। কোনও মানসিক বিপর্যস্ত বা বিষণ্নতার কারণেও এ শক্তির ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।

ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমের টিসিএম চিকিৎসার জন্য একজন নিবন্ধিত টিসিএম চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি আপাত-সম্পর্কহীন লক্ষণসহ সকল লক্ষণ বিশ্লেষণ করে এর কারণ খুঁজে বের করবেন এবং তার ভিত্তিতে চিকিৎসা দেবেন। যদি কোনও রোগীর মূত্রাশয়ের ব্যথার সাথে ক্লান্তি, কানে বাঁশির মতো বাজা এবং হাত-পা ঠান্ডা থাকে, একজন অভিজ্ঞ টিসিএম চিকিৎসক বুঝতে পারেন যে, কিডনি ইয়াংয়ের ঘাটতির জন্য এটা হচ্ছে। রোগী যদি সব সময় তৃষ্ণার্ত থাকে, প্রচুর অ্যালার্জি থাকে, হাত গরম থাকে এবং উদ্বিগ্ন বোধ করতে থাকে, তাহলে সেটা কিডনি ইয়াং খুব বাড়ার লক্ষণ।

মূত্রাশয় ব্যথা উপসর্গ উপশমে আকুপাংচারের পাশাপাশি ভেষজ ওষুধ, মক্সিবাস্টন এবং ইলেক্ট্রো-আকুপাংচারও ব্যবহার করা হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্লাডার পেইন সিন্ড্রোমের রোগীদের পরপর চার সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে একটি আকুপাংচার চিকিৎসা দিলে তাতে প্রস্রাবের বেগ অনেকাংশে কমে যায়। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, তিন মাস ধরে সাপ্তাহিক আকুপাংচার গ্রহণ করেছেন এমন রোগীর বেশিরভাগ পুরোপুরি সেরে উঠেছে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

চীনের অন্যতম সেরা মানসিক হাসপাতাল ইয়ুননানে

ইয়ুননান প্রাদেশিক মানসিক হাসপাতাল চীনের টারসিয়ারি লেভেল বা সর্বোচ্চ স্থরের মানসিক রোগের চিকিৎসপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে ১৯৫৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৭ দশকের যাত্রায় হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাদান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পুনর্বাসন ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে এক আস্থার নাম হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে ‘কুনমিং সাইকোলজিক্যাল ক্রাইসিস রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টারভেনশন সেন্টার’ এ হাসপাতালে অধিভুক্ত এবং পাশাপাশি ‘ইয়ুননান প্রাদেশিক মানসিক স্বাস্থ্য সমিতি’, "ইয়ুননান প্রাদেশিক হাসপাতাল এসোসিয়েশন মনোরোগ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি", "ইয়ুননান প্রাদেশিক পুনর্বাসন মেডিসিন এসোসিয়েশন মনোরোগ পুনর্বাসন পেশাদার কমিটি এবং ইয়ুননান প্রাদেশিক মনোরোগ ফাউন্ডেশনের মতো অনেক একাডেমিক গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

এক হাজার ১৬০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে কর্মরত মোট ৫৪৫জন কর্মী, যার মধ্যে ৪৮৩জন স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী। বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক ও চিকিৎসাশিক্ষকের পাশাপাশি এখানে রয়েছেন ১জন ডক্টরাল সুপারভাইজার, ৮জন মাস্টার সুপারভাইজার, ১৫জন খণ্ডকালীন অধ্যাপক, ৩০জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ৪০জন প্রভাষক।

ইয়ুননান প্রাদেশিক মানসিক হাসপাতালের বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে জরাবিজ্ঞান, মনোরোগ পুনর্বাসন, শিশু ও কিশোর, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, নারী মনোরোগ, অ্যালকোহল অ্যান্ড ড্রাগ ডিপেনডেন্স ট্রিটমেন্ট, ঐতিহ্যবাহী চীনা অ্যান্ড পশ্চিমা চিকিৎসা, নিদ্রা মেডিসিন বিভাগ, জরুরি বিভাগ এবং ফরেন্সাল সেন্টার।

এ হাসপাতাল ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে অনেকগুলো সেবা অনলাইনেও নিয়ে এসেছে। প্রধান অনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশেষজ্ঞ অ্যাপয়েন্টমেন্ট, বিশেষ বহিরাগত রোগী পরিষেবা, নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা, ভিডিওর মাধ্যমে স্বাস্থ্যপরামর্শ, মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, দূরবর্তী পরামর্শ, দূরবর্তী চিকিত্সা মূল্যায়ন, হাসপাতালের ভর্তির ফি প্রদান, খাবারের বিল পরিশোধ ইত্যাদি।

ইয়ুননান প্রাদেশিক মানসিক হাসপাতাল প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কুনমিংয়ের পশ্চিম শহরতলির ছাংপোতে। ১৯৮৯ সালে এটি কুনমিং শহরের চুয়ানজিন রোডে স্থানান্তরিত হয়। তেপ্পান্ন হাজার বর্গমিটারের বেশি জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান হাসপাতাল অবকাঠামো।     

 

#ভেষজের গুণ

লবঙ্গের যত গুণ

লবঙ্গ মসলা হিসাবে অধিক পরিচিত। তবে এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। তাই বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ওষুধের উপকরণ হিসাবে একটি ব্যবহৃত হয়। লবঙ্গের আদি বাস ইন্দোনেশিয়ায়, তবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর সব জায়গায় ব্যবহার করা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে লবঙ্গের কার্যকারিতা সম্পর্কে:

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখে। এটি রক্তচাপ কমাতে, রক্তনালির কার্যকারিতা ঠিক রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো দূর করে রক্তকে পরিশোধন করতে সাহায্য করে।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে: লবঙ্গ রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। এটি ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: লবঙ্গে থাকা ইউজেনল মস্তিষ্কের কোষগুলোকে চাপ ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এটি স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি কমাতে অবদান রাখতে পারে।

শ্বাসযন্ত্রের জন্য উপকারী: সর্দি-কাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।

প্রদাহ কমায়: লবঙ্গে থাকা ইউজেনলে যার শক্তিশালী প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। নিয়মিত লবঙ্গ খেলে আর্থ্রাইটিসের মতো প্রদাহজনিত রোগ থেকে সৃষ্ট কষ্ট উপশম হয়। অস্থিসদ্ধির ব্যথা কমানোর পাশাপাশি পেশি, পিঠ বা হাড়ের ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখে: মাড়ির ক্ষয় বা দাঁতের ব্যথা রোধে লবঙ্গ সাহায্য করে। একারণে অনেক টুথপেস্টের সাধারণ উপকরণ লবঙ্গ। এছাড়া মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গ তুলনাহীন।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।