চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৪৮
2023-12-23 18:58:48

১. সংস্কৃতি সপ্তাহ

সিএমজির মাল্টিমিডিয়া প্রোগ্রাম

চীনা জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসারের লক্ষ্যে চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি’র হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ান প্রোগ্রাম সেন্টারের মাধ্যমে পরিচালিত একটি মাল্টি-মিডিয়া প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। গেল সপ্তাহে ‘রুটস অফ চাইনিজ কালচার’ নামে এই প্রোগ্রামটি চালু করা হয়।


এর প্রতিটি পর্ব এক ঘন্টা করে ক্যান্টনিজ এবং ম্যান্ডারিন সংস্করণে নির্মাণ করা হয়। এটি সিএমজি রেডিও দ্য গ্রেটার বে, সিএমজি ক্রস-স্ট্রেট রেডিও, রেডিও টেলিভিশন হংকং আরটিএইচকে এবং সিএনআর-৬-এ প্রাইম ভিউয়ের সময় প্রতিদিন সম্প্রচার করা হবে।  

আয়োজকরা জানান, অনুষ্ঠানটি হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ান থেকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সৃজনশীল রূপান্তর এবং উদ্ভাবনী বিকাশে এটি চীনা সভ্যতার অসামান্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনের জন্য প্রাচীন ও আধুনিক সময়ের উপাদানগুলোকে একীভূত করে, চীনা আধুনিকায়নের ঐতিহ্যকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

 

চীনের বক্স অফিসে বছর শেষের রেকর্ড

চীনে বছরের শেষ বক্স অফিসে ছুটিতে তুমুল প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। এ সময়ে রেকর্ড সংখ্যক ৭০টিরও বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে এবং টিকিট বিক্রি হয়েছে দুই বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি। 

চীনে বছরের শেষ বক্স অফিস ছুটির মওসুম ২৪ নভেম্বর শুরু হয়ে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলবে। ৩৭ দিনের এ ছুটিতে পুনরায় মুক্তিসহ মোট ৭৭টি চলচ্চিত্র সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে। পাঁচ বছরে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর মধ্যে আবার ৮০ শতাংশই নতুন দেশিয় চলচ্চিত্র।

বছরের শেষের ছুটির বক্স অফিসে ২.৩ বিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে, আর দর্শক সংখ্যা ৫৭ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। বার্ষিক বক্স অফিস আয় ৫৩ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হয়েছে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

২. তালিয়াংশান আন্তর্জাতিক থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল

২৯ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের দূরবর্তী তালিয়াং পার্বত্যাঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছে তালিয়াংশান আন্তর্জাতিক থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল।

সিছুয়ান ও ইয়ুননান প্রদেশের মাঝামাঝি অবস্থিত এখানকার ল্যান্ডমার্ক লুকু লেক, যার পিছনে রয়েছে ছুমুলাংমা বা এভারেস্ট শৃঙ্গের মনোমুগ্ধকর পটভূমি। আর এখানকার ‘ই’ আর ‘মোসুয়ো’ জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিও আকৃষ্ট করে থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে আসা শিল্পীদের।

বিশ্বের ৫০টির বেশি থিয়েটারের শিল্পীরা এতে যোগ দেন। নিজেদের কাজের পাশাপাশি তারা স্থানীয় সংস্কৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন সৃষ্টিও উপস্থাপন করেন ফেস্টিভ্যালে।

যুক্তরাজ্য থেকে আসা শিল্পী ডানিয়েলে কোলানিস জানালেন তার দুর্লভ অভিজ্ঞতার কথা।

‘আমার লেকটিকে ঘিরে প্রচলিত উপকথা শুনেছি এবং পরিচালকের সঙ্গে মিলে নিজেরাই একটি নাট্যাংশ তৈরি করেছি- যার মর্মকথা হলো কিছু একটা খোঁজা, নিজের আত্মপরিচয়কে খোঁজা। আমার স্থানীয় দাদিমাদের কাছে গল্প শুনেছি, এমনকি ছোটদের সঙ্গেও কথা বলেছি, বুঝতে চেয়েছি  পরিবার ও আত্মপরিচয় তাদের কাছে কতটা গুরুত্ববহন করে। এ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এমন একটা কিছু করতে চেয়েছি যা সবার হৃদয়ে অনুরণিত হবে’।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পী স্থানীয় দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি মাতৃতান্ত্রিক মোসুয়ো আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখে মুগ্ধ হন। বংশ পরম্পরায় এ সংস্কৃতি রক্ষার উদ্যোগ দেকেও অভিভূত হন ডানিয়েল কোলানিসও।

‘আমি মনে করি এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার যে শুধু বুড়োরাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করছে তা নয়, বরং তরুণ প্রজন্মও তাদের সংস্কৃতির বিষয়ে আগ্রহী এবং তা সংরক্ষণে কাজ করছে। আমি এ বিষয়ে ভালো স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরবো’।

ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর অনুধাবন শিল্পীদের নতুন উদ্ভাবনের খোরাক জোগায় বলেও মনে করেন ব্রিটিশ এই থিয়েটারকর্মী।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

৩. ছাং আন: দুই কবিকে নিয়ে এনিমেটেড চলচ্চিত্র

থাং রাজবংশের সময়কাল। কবি কাও শি স্মৃতিচারণ করেন তার অতীত জীবনের কথা। বড় হওয়ার সাথে নিজ দৃষ্টিকোন থেকে তাঁর সেরা বন্ধু লি পাইয়ের কথাও তুলে ধরতে শুরু করলেন তিনি। আর এভাবেই শুরু হয় ‘ছাং আন’ সিনেমা।

 

চীনের বিখ্যাত কবি লি পাইয়ের সাথে তার প্রথম দেখা হয় রাজধানী ছাং আনে যাওয়ার সময়। লি পাই প্রথমে তাকে চোর ভেবেছিলেন। ফলে তাদের দুজনের মধ্যে মধ্যে শুরু হয় মারামারি। পরবর্তীতে তারা দুজনই তাদের ভুল বুঝতে পারেন।  আসল চোরকেও ধরতে সক্ষম হন তারা। আর এ অভিজ্ঞতাই তাদেরকে পরিণত করে ভালো বন্ধুতে। 

লি পাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর কাও শি একা একা ছাংআন শহরে চলে আসেন।

ছাংআনে অনেক চেষ্টা করার পরও অভিজ্ঞতার অভাবে সরকারী চাকরি পেতে ব্যর্থ হন তিনি। তাই নিজের মার্শাল আর্ট অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে সিনেমার গল্প।

কবি কাও শি এবং লি পাই, তাদের জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান এবং তাদের সংস্কৃতি সাধনার গল্পই তুলে ধরা হয়েছে সিয়ে চুনউই এবং চৌচিং পরিচালিত সিনেমা ছাং আনে।

এ সিনেমায় কবি কাও শি এবং লি পাই এর জীবনের গল্প ছাড়াও  থাং রাজবংশের আরো অনেক বিখ্যাত কবির কথা তুলে ধরা হয়েছে।  কবি তু ফু, ওয়াং ওয়েই এবং ওয়াং ছাংলিংর বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং তাদের আদর্শের পথে অবিরাম সাধনার বিষয়টিও খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

এই সিনেমায় থাং রাজবংশের ৪৮টি কবিতা উপস্থাপন করা হয়।  এ সব কবিতার বেশিরভাগই চীনা জনগণের কাছে খুব সুপরিচিত। 

চীনের লাইট চেসার অ্যানিমেশন কোম্পানির উদ্যোগে নির্মিত ঐতিহাসিক এই  সিনেমাটি  মুক্তি পায় ২০২৩ সালের ৮ জুলাই।

আপনি যদি চীনের বিখ্যাত কবি লি পাই এবং কাও শির জীবনী উপভোগ করতে চান তাহলে আপনার জন্য ভালো পছন্দ হতে পারে ‘ছাং আন’ সিনেমাটি ।

প্রতিবেদন: হোসনে মোবারক সৌরভ/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।