গোলাপ উদ্যানের অসাধারণ সুন্দর জীবন
2023-12-22 15:35:13


প্রতিদিন তাজা গোলাপের সঙ্গে থাকতে পারলে অনুভূতি কেমন হয়? সাইত্রিশ বছর বয়সী চাং সিয়াও হোং এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আনন্দময় ও স্নিগ্ধ। তিনি বলেন, গোলাপ তার জন্য ব্যাপক উপার্জনের পথ সৃষ্টি করেছে। তাকে শ্রষ্ঠ ফুল তোলা কর্মী বানানোর পাশাপাশি তাকে অসাধারণ কৃতিত্ববোধ প্রদান করেছে।

গ্রামীণ একজন সাধারণ নারী থেকে বর্তমানে একজন অফিসকর্মী হিসেবে নতুন পরিচয় পেয়েছেন চাং সিয়াও হোং। স্থানীয় সরকার ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ সহযোগিতায় কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে তিনি নতুন পরিচয় অর্জন করেছেন। 

২০২২ সালে চাং সিয়াও হোং’র গ্রামের বাড়ি কান সু প্রদেশের লিন সিয়া হু জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের লিন সিয়া শহরে ২ লাখ বর্গমিটার আয়তনের হাই-টেক স্মার্ট গ্রিনহাউস প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশেষ করে সতেজ গোলাপ উৎপন্ন হয়। 

এ গ্রিনহাউসে ৬৪ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে পাই ই ই নোং আন্তর্জাতিক ফুলবন্দর। এ প্রকল্পের কারণে চাং সিয়াও হোং’র মতো গ্রামীণ নারীদের চেহারা বদলে গেছে। অত্যাধুনিক কৃষি উত্পাদনের ব্যবস্থার কারণে এ গ্রিনহাউস স্থানীয় গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে ব্যাপকভাবে সহায়ক হয়েছে। স্থানীয়রা এটাকে ‘সুপার গোলাপ উত্পাদনকেন্দ্র’ হিসেবে গণ্য করে।

চাং সিয়াও হোং’র সঙ্গে আমাদের সাংবাদিক যখন গোলাপ উত্পাদনকেন্দ্রে প্রবেশ করেন, তখন উষ্ণ বাতাস ভেসে আসে এবং বাইরের শীত বিলীন হয়ে যায়। কারখানার ভিতরে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হয়েছে, যার কারণে এখানকার গোলাপ সবচেয়ে সুন্দর অবস্থায় থাকে।

মোটা কাপড়ের পরিবর্তে চাং সিয়াও হোং হালকা ইউনিফর্ম ও গ্লোভস ও টুপি পরে বড় কাঁচি হাতে নেন এবং দিনের ফুল কাটা শুরু করেন। তিনি গভীর ও সরু সবুজ করিডোরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন একটি বড় গোলাপের তোড়া নিয়ে। সূক্ষ্ম পাপড়ি থেকে তখনও তাজা শিশির ঝরছে। ফ্ল্যাটবেডের ট্রাকটি জলে ভরা ছিল। অন্য শ্রমিকদের সাথে তিনি যত্ন সহকারে সদ্য তোলা গোলাপগুলো জাল দিয়ে মুড়ে জলে রাখেন। এই গোলাপগুলো দ্রুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও পাঠানো হবে, যা মানুষের জন্য আনন্দ সৃষ্টি করবে।

কৃষিকাজে অভ্যস্ত চাং সিয়াও হোং। তাই ফুল কাটার কাজ তার জন্য প্রশান্তিদায়ক। তিনি বলেন, “চলতি বছরের মার্চ মাসে আমি এখানে কাজ শুরু করি। বেশি কাজ করলে বেশি উপার্জন করা যায়। প্রতি মাসে এখানে আমি ৫-৬ হাজার ইউয়ান উপার্জন করতে পারছি। বাড়ির অনেক কাছে এ উপার্জন করতে পেরে এবং এর জন্য সম্মান পেয়ে মন থেকে এ কাজ পছন্দ করি আমি।”

পাই ই ই নোং আন্তর্জাতিক ফুল বন্দর কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক লি জে থিয়ান জানান, এ প্রকল্পের কারণে ৫০০জনের বেশি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী। তাদের বার্ষিক গড় উপার্জন ৪৫ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।

কান সু প্রদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ, সুর্যালোক, আর্দ্রতা ও পরিবহনসহ নানা দিক থেকে সুবিধা রয়েছে। এখানে স্মার্ট গ্রিনহাউসে ফুল শিল্প উত্পাদনের জন্য উপযোগী। বর্তমানে এ ফুলবন্দরে প্রতিদিন গড় ২ লাখেরও বেশি গোলাপ উত্পাদন করে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ১০ হাজারেরও বেশি গোলাপ কাজাখস্তানে রপ্তানি হয়।

এ গোলাপ ফুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সক্ষমতা বাড়াতে ফুলবন্দরে অনেক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন গোলাপ কেন্দ্রে এককটি গোলাপের উপরে রয়েছে একেকটি পিংক রঙের এলইডি বাতি। এ সব বাতি গোলাপ বড় হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় আলো দেয়, যাতে গোলাপ বড় হওয়ার গতি, গুণ ও উত্পাদনের পরিমাণ উন্নীত করা যায়।

লিন সিয়া চীনের ফুলের হোমটাউন হিসেবে পরিচিত। এখানকার মানুষ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের চেতনায় পরিশ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে অনুর্বর জমিকে প্রাণবন্ত ফুলের সাগরে পরিণত করেছেন।

(রুবি/রহমান)