২০২৩ সাল হলো যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নির্মাণের প্রক্রিয়ায় চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন ‘ক্ষুদ্র তবে সুন্দর’ প্রকল্পগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে এবং তাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছে।
আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে সবাই মিলে রুয়ান্ডা যাবো। জিনহুয়া পলিটেকনিক কলেজের রুয়ান্ডা লুবান ওয়ার্কশপ রুয়ান্ডার দ্য ইন্টিগ্রেটিড পলিটেকনিক রিজিওনাল কলেজ মুসাজে নামে পরিচিত। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ কলেজটি রুয়ান্ডার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বাস্তবসম্মত চাহিদা অনুযায়ী সেদেশের জন্য প্রয়োজনীয় ধীশক্তি প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে দেশ দু’টির সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জনগণের বন্ধনের প্লাটফর্মও স্থাপন করেছে।
রুয়ান্ডা লুবান ওয়ার্কশপ হলো চীনের চেচিয়াং প্রদেশের জিনহুয়া পলিটেকনিক কলেজের ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় যৌথ নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের অন্যতম। রুয়ান্ডার ‘রূপকল্প ২০৫০’ উন্নয়ন পরিকল্পনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিকে জাতীয় উন্নয়নের মূল উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রুয়ান্ডার লুবান ওয়ার্কশপ দেশটির শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ প্রতিভাকে জরুরিভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। জিনহুয়া পলিটেকনিক কলেজের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক চু মো ছি বলেন,
“আমার পেশাগত দক্ষতার বিবেচনায় আমি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি উন্নয়ন ডেটা টীকাকে জনপ্রিয় করার দিকে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলাম এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে রুয়ান্ডার ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোকে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি আশা করি, নিজের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আমি রুয়ান্ডার অংশীদার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি’র উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারবো।”
নামাহারউই জ্যঁ নেপো হচ্ছেন লুবান ওয়ার্কশপের একজন শিক্ষার্থী। তার মতে, চাইনিজ কোর্স বা তাদের জন্য তৈরি করা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, যাই হোক না কেন, সবকিছু তাদের দক্ষতা উন্নত করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দিগন্ত প্রসারিত করেছে।
তিনি বলেন,
“রুয়ান্ডার লুবান ওয়ার্কশপের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের ফলে আমার প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নত হয়েছে এবং ভবিষ্যত উন্নয়নের একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। এটি কর্মক্ষেত্রে আমার প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং আমার কর্মজীবনের বিকাশকে আরও মসৃণ করেছে। এই সেমিস্টার শেষে আমরা জিনহুয়া পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়ন করতে চীনে যাবো। এটি আমার ও আমার সহপাঠীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। আমি বিশ্বাস করি, এই যাত্রাটিও আমার জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে!”
প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী শিক্ষাদানের পরিকল্পনা নির্ধারণ করা ছাড়াও ‘শিক্ষাদানের পদ্ধতি সৃজনশীল করা’ হলো রুয়ান্ডার লুবান ওয়ার্কশপের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এ ওয়ার্কশপ ‘চীনা ই-কমার্সের অভিজ্ঞতা লাভ করা’ এবং ‘চীনা ভাষার সেতু’সহ অনলাইনে কয়েকটি আদান-প্রদান প্রকল্প চালু করে। এলি এনদাইয়ামবাজে হচ্ছেন এসব অনলাইন কোর্সের অনুরাগী। নিজের ই-কর্মাস স্বপ্ন পূরণে তিনি সবসময়ই সময়মতো অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকের জন্য অপেক্ষা করতেন এবং শিক্ষকের সঙ্গে সক্রিয় আদান-প্রদান করতেন। তিনি বলেন,
“অনলাইনে এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি ই-কর্মাসের অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। চীনের ই-কর্মাস সংস্কৃতি প্রসঙ্গে আমার জানাশোনা গভীর হয়েছে এবং চীনা ভাষার মানও বেড়েছে। ভবিষ্যতে আমি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই।”
রুয়ান্ডার লুবান ওয়ার্কশপের উপপ্রধান এসড্রাস এনশিমিয়ুমুরেমিয়ি বলেন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিক্ষক উভয়ই লুবান ওয়ার্কশপের প্রশিক্ষণ থেকে অনেক কিছু শিখেছে। ফলে স্কুলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের স্তরকে উন্নত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন,
“লুবান ওয়ার্কশপ-প্রদত্ত প্রশিক্ষণ ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। তাই প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের দক্ষতা উন্নত করার সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ। প্রশিক্ষণটি শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা লুবান ওয়ার্কশপের প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হন। লুবান ওয়ার্কশপ শিক্ষকদের যোগাযোগ ও আলোচনার একটি প্ল্যাটফর্মও প্রদান করেছে; স্কুলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সামগ্রিক স্তরের উন্নতি করেছে।”
এটি শিক্ষার্থী ও কর্মীদেরকে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ব্যাপক জ্ঞান ও মূল্যবান বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এছাড়া এটি অংশগ্রহণকারীদের কর্মক্ষমতা উন্নয়নে এবং সাংগঠনিক বিস্তৃতিকে সমর্থন দিতে তাদের নতুন দক্ষতা প্রয়োগের প্রতি আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সহায়ক হবে।
আজ, লুবান ওয়ার্কশপ চীন ও রুয়ান্ডার মধ্যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ-মানের যৌথ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় মানুষের সঙ্গে মানুষের আদান-প্রদান এবং জনগণের বন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহক হয়ে উঠেছে। জিনহুয়া পলিটেকনিক কলেজের উপপ্রধান ছেন হাইরোং বলেন,
“ছয় বছরের অন্বেষণ ও অনুশীলনের পর রুয়ান্ডার দ্য ইন্টিগ্রেটিড পলিটেকনিক রিজিওনাল কলেজ মুসাজে বা লুবান ওয়ার্কশপ ভাষা দক্ষতার সাথে একদল প্রযুক্তিগত দক্ষ প্রতিভা গড়ে তুলেছে। তাছাড়া, চীন ও রুয়ান্ডার মধ্যে শিক্ষাদান ক্ষেত্রের যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতাকে উন্নীত করেছে এই ওয়ার্কশপ।
লিলি/রহমান