চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ব্রিটেনের ক্ষতি হবে
2023-12-20 13:40:27

ডিসেম্বর ২০: ব্রিটেনের তথ্যমাধ্যমের সাম্প্রতিক খবর অনুসারে, দেশটির জাতীয় গ্রিড নিরাপত্তার অজুহাতে চীনা প্রতিষ্ঠানের উপাদানসমুহ বাদ দিয়েছে। ব্রিটিশ জাতীয় গ্রিড এখন পর্যন্ত এ খবরের সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার করেনি। সংস্থাটি কেবল একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘অবকাঠামো নিরাপত্তার ওপর খুব গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” বিশ্লেষকদের মতে, এটা সত্য হলে এর আসল লক্ষ্য হলো চীনা প্রতিষ্ঠাকে দমন করা এবং তথাকথিত ‘চীনা হুমকি’ তত্ত্ব প্রচার করা। তবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অবরোধ আরোপ করলে ব্রিটেনের নিজেরই ক্ষতি হবে।

ফাইন্যানশিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট চীনা কোম্পানির কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁদের কোম্পানি ব্রিটেনের জাতীয় গ্রিডের সাথে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ করেছে। তখন কোনো সমস্যার কথা কেউ বলেনি। প্রকৌশলীরাও নানান পরীক্ষার পর সম্ভাব্য কোনো ঝুঁকি দেখতে পাননি। তবে, এ চীনা কোম্পানির কর্মীদের যন্ত্রাংশ বসানোর কারখানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্রিটেনের জাতীয় গ্রিড এর কারণ জানায়নি।

ঝুঁকি না-থাকলে নিরাপত্তার অজুহাত দেখানো যেতে পারে কীভাবে! বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তিহীন অভিযোগ আনার রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানিকে দমন করে লন্ডন ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র কথিত বিশেষ মৈত্রীর সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চায়। অন্যদিকে, আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন পার্টি চীনের বিরুদ্ধে শক্ত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের মাধ্যমে আরও বেশি ভোট পেতে চায়।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট চীনা প্রতিষ্ঠান শিল্প নিয়ন্ত্রণ খাত এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এর আছে শক্তিশালী উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এমন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিহার্য। ব্রিটেন বাজারের নিয়মকানুন উপেক্ষা করে, চীনা সরবরাহকারীকে বাদ দিয়েছে, যার কারণে তাঁকে ব্যাপক মূল্য দিতে হবে।

বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাবে, ব্রিটেনের জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের জীবিকার খরচ অনেক বেড়েছে। যার কারণে ব্রিটেনের সরকার জাতীয় গ্রিডে ব্যাপকভাবে সংস্কার করছে। তবে চীনা প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশ বাদ দেওয়ার ফলে জাতীয় গ্রিডের সংস্কারকাজ পিছিয়ে পড়বে এবং খরচ অনেক বাড়বে। আগামী জানুয়ারি থেকে জ্বালানির দামের উচ্চ সীমা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। তাতে সাধারণ পরিবারের বার্ষিক খরচ ১৮৩৪ থেকে ১৯২৮ জিবিপিতে উন্নীত হবে। যার মানে ব্রিটেনের জনগণকে দীর্ঘকাল ধরে উচ্চদামে জ্বালানির খরচ বহন করতে হবে।

তা ছাড়া, ব্রিটেনের সরকার ২০২১ সালে ঘোষণা করেছিল যে, ২০৩৫ সালে শতভাগ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদন করবে ব্রিটেন। তবে জাতীয় গ্রিডের সংস্কার পিছিয়ে পড়ার ফলে দেশটির জ্বালানি রূপান্তরের কাজও পিছিয়ে পড়তে পারে। বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রসর পরিকল্পার অভাব এবং সমৃদ্ধ অভিজ্ঞ চীনা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার ফলে, কার্বন নির্গমনে শীর্ষের একটি দেশ হিসেবে ব্রিটেন তার নির্গমন কমানোর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এটি সারা ইউরোপের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উন্নয়নের গতি শিথিল করবে।

ব্রিটেন চড়া মূল্য উপেক্ষা করে, ব্যবসা ও প্রযুক্তি নিয়ে রাজনীতি করে, তাতে দেশটির বাজারের উন্মুক্তকরণ, সমতা ও বৈষম্যহীনতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে মানুষ। তাঁদের ব্রিটেনে বিনিয়োগের আস্থাও কমে যেতে পারে।

বস্তুত, ব্রিটেনের জন্য চীনা কোম্পানি হুমকি নয়, বরং জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে একশ্রেণীর ব্রিটিশ রাজনীতিক হুমকি সৃষ্টি করছে। কথিত নিরাপত্তার অজুহাতে চেইন বিচ্ছিন্ন করে এবং চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তিহীন অবরোধ আরোপ করলেও চীনের উন্নয়ন ব্যাহত হবে না। ব্রিটেনের যুক্তিবাদী ব্যক্তিবর্গ এ ব্যাপারে সচেতন যে, চীন হলো সহযোগী, অংশীদার এবং পাশাপাশি উন্নয়নের সুযোগ। দু’দেশের বাস্তব সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য অনুকূল এবং এতে সারা বিশ্বই উপকৃত হতে পারে। (রুবি/আলিম/লাবণ্য)