আকাশ ছুঁতে চাই ৪৯
2023-12-20 22:09:06

 

১. চীন ও ভিয়েতনামের নারীদের মধ্যে বন্ধুত্ব

২. দুই তীরের ভালোবাসার গল্প

৩. নারী শিল্পীর চোখে গ্রেটওয়াল



নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

চীন ও ভিয়েতনামের নারীদের মধ্যে বন্ধুত্ব 

ভিয়েতনামের নারীদের সংগ্রামী জীবনকে তুলে ধরার জন্য রয়েছে একটি বিশেষ নারী জাদুঘর। সম্প্রতি এই জাদুঘর পরিদর্শন করেন চীনের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফেং লি ইউয়ান। তিনি চীন ও ভিয়েতনামের নারীদের বন্ধুত্বের কথা বলেন। চলুন শোনা যাক বিস্তারিত। 

 

ভিয়েতনামের নারীদের বীরত্বময় ইতিহাসে মুগ্ধ হলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের স্ত্রী ফেং লিইউয়ান। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে রয়েছে বিশেষ ‘নারী জাদুঘর’। 

 

এই জাদুঘরে ভিয়েতনামের নারীদের ঐতিহাসিক বীরত্ব, তাদের সংগ্রাম, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের ইতিবৃত্ত রয়েছে। রয়েছে তাদের উন্নয়নের ধারাবাহিক যাত্রার নানা দিক। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফরে তার স্ত্রী ফেং লিইউয়ান দেশটিকে সফর করেন। তিনি ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীর সঙ্গে নারী জাদুঘর ঘুরে দেখেন। 

 


ফেং লি ইউয়ান জাদুঘরে বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখেন ও দেশটির নারীদের উন্নয়ন  সম্পর্কে অবগত হন। তিনি ভিয়েতনামের নারীদের পরিশ্রমী ও সাহসী চরিত্রের আন্তরিক প্রশংসা করেন। 

 

এরপর ফেং লি ইউয়ান ভিয়েতনামের নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেন। ইউনেস্কোর শিশু ও নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে এ খাতে নিজের কাজ সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করেন ফেং লি ইউয়ান। তিনি বলেন, চীন পুরুষ ও নারীকে সমানভাবে দেখার নীতিতে অবিচল রয়েছে। নারীদের বিভিন্ন অধিকারের ওপর উচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভিয়েতনামও নারীর অগ্রগতি, অবস্থান এবং অধিকার রক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে ভালো অভিজ্ঞতা ও পদক্ষেপ রয়েছে। দু’দেশ এ খাতে বিনিময় ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে, যাতে আরও বেশি নারী নিজেদের ভাগ্য বদলে নিতে পারেন এবং জীবনের মূল্যবোধ বাস্তবায়ন করতে পারেন। 

 

চা-চক্রের সময় ফেং লি ইউয়ান ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় কাপড়ের প্রদর্শনও উপভোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, চীন ও ভিয়েতনামের সংস্কৃতির মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। দু’দেশ এ খাতে বিনিময় জোরদার করবে এবং আরও বন্ধুত্বপূর্ণ অধ্যায় সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।  

চীনের ও ভিয়েতনামের নারীদের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনের মাধ্যমে দুইদেশের নারীরা তাদের অধিকার অর্জনে আরও বেশি এগিয়ে যাবে। ফেংলি ইউয়ান যে বন্ধুতের বন্ধন গড়ে তুলেছেন তা আরও বেশি মজবুত হবে ভবিষ্যতে এমনটাই প্রত্যাশা করেন দুই দেশের নারী অধিকার কর্মীরা। 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান 


দুই তীরের ভালোবাসার গল্প 

চীনের তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রেম বিয়ের ঘটনা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের মানুষের যোগাযোগ আরও নিবিড় হচ্ছে। প্রণালীর দুই তীরের মানুষের মধ্যে বন্ধন আরও নিবিড় হচ্ছে।  একটি প্রতিবেদনে শুনবো দুই তীরের মানুষের ভালোবাসার গল্প।

 

বিশ্বের অনেক সমাজেই বাবা মায়েরা দূরের কোন জায়গায় মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। চীনের অনেক স্থানে এমন রীতি রয়েছে। মেয়ে অনেক দূরের শ্বশুরবাড়িতে চলে যাবে এমনটা তারা পছন্দ করেন না। চীনের তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি না হলেও এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অসুবিধাজনক। তাই ফুচিয়ান প্রদেশের অনেক ছোট ছোট গ্রাম ও শহরের পরিবারগুলো একসময় মেয়েকে তাইওয়ানের ছেলের কাছে বিয়ে দিতে চাইতেন না। কিন্তু এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দৃশ্যপট বদলেছে। 

 

চীনের তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীর। মাঝখানে এক ফালি সমুদ্র। দুই তীরের মানুষের মধ্যে প্রেম, বিয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দুই তীরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের চিনচিয়াং সিটির একটি গ্রাম ওয়েইথোও। সমুদ্র তীরের এই গ্রামের মেয়ে উ ইয়ানমিং। এক ফালি সমুদ্র পার হলেই তাইওয়ানের কিনমেন। ওয়েইথোও গ্রামের ১৩০ জনের বেশি নারী বিয়ে করেছেন কিনমেনের পুরুষদের। এমন একজন নারী উ ইয়ানমিং। 

উ বলেন, আমি ২৩ বছর বয়সে কিনমেনের একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে বিয়ে করি। তারপর থেকে আমার বন্ধ্ররা আমাকে সমুদ্রচারী তরুণী বলে ডাকে। কারণ আমার হোমটাউন হলো প্রণালীর অপর তীরে ওয়েইথোও গ্রামে।’

ওয়েইথোও গ্রামের থেকে তাইওয়ানের দ্বীপপুঞ্জ কিনমেন সমুদ্রপথে মাত্র ১০ কিলোমিটার। তবে কিনমেনের যুবককে বিয়ে করার জন্য উর সিদ্ধান্তটা বেশ সাহসী ছিল বলতে হবে।

উ ইয়ানমিংয়ের ভাই উ ছিংউয়ো বলেন, ‘যখন আমার বড় বোন বিয়ে করলেন, সে সময়ের কথা ভাবলে মনে পড়ে, আমরা খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। আমার বোনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়াটা খুব সহজ ছিল না। ’

অবশ্য কয়েক দশক আগে তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরে সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। তখন ওয়েইথোও থেকে কিনমেন যেতে হলে হংকং বা ম্যাকাও ঘুরে যেতে হতো। তাই উ যদিও এমন মানুষকে বিয়ে করেছেন যার বাড়ি মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, তবু মনে করা হতো তিনি অনেক দূরের কাউকে বিয়ে করছেন।

তাইওয়ানের কিনমেন আর  ফুচিয়ানের চিনচিয়াংয়ের মধ্যে সংস্কৃতিগত তেমন পার্থক্য না থাকলেও কেবল যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যা ছিল বলে তখন দুই তীরের মানুষের মধ্যে বিয়েকে  অনেক দূরের বিয়ে বলে মনে হতো। 

 

একজন প্রবীণ গ্রামবাসী বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে প্রণালীর অপর তীরে বিয়ে করতে বাধা দিয়েছিলাম। কারণ দুই তীরের মধ্যে যোগাযোগ ও চলাচল করা বেশ কঠিন ছিল।  যাতায়াতে দুই দিন লেগে যেত। এমনকি ফোন কলের জন্য প্রতি মিনিটে ২০ ইউয়ান খরচ হতো। ’

তবে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন কঠিন নেই। সরাসরি ফেরি চালু হয়েছে।

২০০১ সালে দৃশ্যপট বদলে যায়। কিনমেন থেকে ১৮০ জনের একটা প্রতিনিধিদল দুটি সরাসরি ফেরি রুটে বিভক্ত হয়ে ফুচিয়ানের সিয়ামেন সিটির হ্যফিং বন্দরে এসে পৌছেন। ৫২ বছরে প্রথম বারের মতো কিনমেন এবং সিয়ামেনের মধ্যে সরাসরি ফেরি সার্ভিস চালু হয়। 

 

২০০৮ সালে আরও অনেক বেশি উন্নতি হয়। কিনমেন ও ওয়েইথোওর মধ্যে সরাসরি ফেরি চালু হলো। যেখানে যাতায়াতে দুই দিন সময় লাগতো এখন সেখানে ৩০ মিনিটে যাতায়াত করা সম্ভব হয়।


 

এখন দুই তীরের বন্ধন অনেক নিবিড় হয়েছে। প্রতি বছর ওয়েইথোও গ্রামে ‘ঘরে ফেরা’ উৎসব হয়। একশর বেশি নারী তাইওয়ানের শ্বশুর বাড়ি থেকে আসেন বাপের বাড়ি ওয়েইথোওতে। এ ধরনের উৎসব দুই তীরের মানুষের মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ ও প্রীতির বন্ধনকে আরও গভীর করে তুলছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান


নারী শিল্পীর চোখে গ্রেটওয়াল

চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের একজন নারী শিল্পী চিয়াং ই ক্য। তিনি মহাপ্রাচীরের ছবি এঁকে সোশাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

 

চিয়াং ই ক্য একজন প্রতিভাবান নারী। চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের তানতোং সিটির বাসিন্দা। এখানে গ্রেট ওয়ালের হুশান অংশ রয়েছে। এখানে রয়েছে মহাপ্রাচীরের পূর্বপ্রান্ত।

 

 এখানে মহাপ্রাচীরের অনন্য সৌন্দর্য অনেক পর্যটককে যেমন আকৃষ্ট করেছে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও মুগ্ধ করেছে। 

 

তানতোং শহরের বাসিন্দা চিয়াং ইক্য ছোটবেলা থেকে গ্রেট ওয়ালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তিনি নানা রূপে দেখেছেন মহাপ্রাচীরকে। মহাপ্রাচীরের এই অংশ মিং রাজবংশের শাসনামলে(১৩৬৮-১৬৪৪ সাল) নির্মিত হয়েছিল। এই ইতিহাসও বেশ মনোগ্রাহী। 

 

চিয়াং তার স্কেচবুকে আাঁকা শুরু করেন মহাপ্রাচীর। তার আঁকা মহাপ্রাচীরের স্কেচ সোশাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে অনেক জনপ্রিয়তা পায়। তার শিল্পকর্ম দেখে গ্রেটওয়ালের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়েও মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। 

 


প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান






সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  শান্তা মারিয়া, রওজায়ে জাবিদা ঐশী, শুভ আনোয়ার, আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল