‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৪৯
2023-12-19 21:22:33

 

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।       

১. লাইভস্ট্রিমিং ই-কমার্স অনেক তরুণ-তরুণীকে চাকরির জন্য আকৃষ্ট করে 


লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার একটি নতুন ধারা। আর এটি  চীনের ই-কমার্স ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ বর্তমানে উচ্চশিক্ষিত অনেক তরুণ-তরুণী অনলাইন ব্যবসার দিকে আগ্রহী হচ্ছেন; লাইভ প্রেজেন্টার বা অনলাইন উপস্থাপক পেশাকে বেছে নিচ্ছেন। ভালো আয়ের আশায় ক্রমবর্ধমান শিল্পের দিকে ছুটছেন তারা।  

  


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়,  ২০২২ সালের শেষ নাগাদ নিয়মিত লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং দেখেন এমন লোকের সংখ্যা ৭৫ কোটি ১০ লাখে পৌঁছায়।  

এই বছরের প্রথমার্ধে, চীনের প্রধান ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো প্রায় ২১ লাখ সক্রিয় উপস্থাপকের মাধ্যমে ১১ কোটি লাইভস্ট্রিমিং সেশন পরিচালনা করেছে। তাদের পণ্য বিক্রি ১ দশমিক ২৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১ শ’ ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।  


লাইভস্ট্রিমিং ই-কমার্স ভোগ, কর্মসংস্থান এবং এমনকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। 

 


ক্রমবর্ধমান লাইভস্ট্রিমিং শিল্প প্রসঙ্গে হাংচৌ কমার্স ব্যুরোর প্রধান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপক উ ছাংহং জানান,  


"যখন অ্যাঙ্কররা লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করেন, তখন ভোক্তাদের দেওয়া রিয়েল-টাইম ফিডব্যাকের মাধ্যমে পণ্যের জনপ্রিয়তা বিচার করেন তারা। তাই ভোক্তাদের চাহিদা ও পছন্দ সম্পর্কে জানা এবং আরও উচ্চ-মানের পণ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে লাইভস্ট্রিমিং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।"    

 


লাইভস্ট্রিমিং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রমবর্ধমানভাবে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। কারণ ব্র্যান্ডের প্রচারের জন্য লাইভস্ট্রিমিং সেশন পরিচালনা করে এমন স্টোরের হার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মতো নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে।      


ভোক্তারা অনেক অনলাইন বিক্রয় প্রচার কার্যক্রম দেখেন। যাচাই-বাছাইয়ের অনেক সুযোগ রয়েছে তাদের হাতে। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী অ্যাঙ্কররাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারে এবং নিজেদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। 




সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লাইভ অ্যাঙ্করিং একটি উন্মুক্ত কাজ। অন্য পেশার পাশাপাশিও অনেক তরুণ-তরুণী এটি করছেন আবার একক পেশা হিসেবেও এটিকে নেয়া সম্ভব। তবে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের দিকেই তারা বেশি জোর দেন। 

 

 

    

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, লাইভস্ট্রিমিং ব্যবসার টেকসই উন্নয়নের জন্য, কিছু বিশেষজ্ঞ মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত প্রচার করে, যা কমিয়ে ভোক্তাদের অধিকারকে আরও ভালভাবে রক্ষা করার জন্য শিল্পকে আরও নিয়মিতকরণ করতে হবে। 


 

"যেকোনো শিল্পের নিয়ম-ভিত্তিক বিকাশের জন্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, শিল্পের স্ব-শৃঙ্খলা এবং সামাজিক তত্ত্বাবধানকে একত্রিত করা খুব জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তারা। 


প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী  

সম্পাদক : শিহাবুর রহমান 


২. চীনের তরুণদের রেসিং কার ডিজাইন ও তৈরি

 

বর্তমান বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতাগুলোর একটি কার রেসিং। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনের তরুণরাও এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। তারা নিজেরাই রেসিং কার ডিজাইন ও তৈরি করছেন। বিশেষ করে রেসিংয়ে চ্যাম্পিয়ন একটি দল দেশটির তরুণদের নতুন পরিবেশ বান্ধব যানবাহন প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তুলছে। 


চীনের চিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনসেপশন রেসিং’টিম। ২০০৭ সালে এই দলটির সদস্যরা একটি বৈদ্যুতিক রেসিং কার তৈরি করেন, যা চীন ও চীনের বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

বর্তমানে এই দলটি চীনের প্রতিভাবান তরুণ প্রজন্মকে নিউ এনার্জি ভেহিকল (এনইভি) প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে উঠতে কাজ করছে।

 

চলতি বছর দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো ‘শেল ইকো-ম্যারাথন চায়না চ্যাম্পিয়নশিপ’ লাভ করে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন কলেজ ও হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেস্ট নিউ এনার্জি ভেহিকল (এনইভি) ডিজাইন ও নির্মাণের প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।


 ‘আমাদের দলের সদস্যরা অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটারিয়ালস, বায়োলজিক্যাল, কৃষি প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন স্কুল ও অনুষদ থেকে এসেছেন। আমরা সবাই স্নাতক পর্বের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করেছি।’


কনসেপশন রেসিং টিমের সাবেক সদস্যরা বর্তমানে অটোমোটিভ সেক্টরেই কর্মরত রয়েছেন।

 

‘আমাদের কনসেপশন রেসিং টিমের সাবেক অনেক সদস্যেরই বেশ ভালো দক্ষতা ছিল৷ তারা স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার পরে তাদের মধ্যে অনেকেই স্বনামধন্য গাড়ি কোম্পানিতে কাজ করছেন। আমাদের রেসিং দলে থাকার সময় তারা যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল, সেসব অভিজ্ঞতা তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগছে।’


দলের প্রশিক্ষক চাও তি জানান, বৈশ্বিক ইভেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা অন্যান্য দেশের অটোমোটিভ ক্ষেত্রের উদীয়মান প্রতিভাবান তরুণদের তুলনায় নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে পারছেন।     

এসময় তিনি আরও বলেন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলগুলো পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখতে পেয়েছেন ঐসব দেশের শিক্ষার্থীরা খুব অল্প বয়স থেকেই হ্যান্ডস-অন স্কিল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাই তারা গাড়ি যন্ত্রাংশ বানানোর মতো কাজগুলো করতে পারছে। এটি চীনের দুর্বলতাগুলোর মধ্যে একটি।

 

বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল উৎপাদনকারী এবং ভোক্তা দেশ চীন। চায়না অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্সের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩১ মিলিয়ন নতুন পরিবেশ বান্ধব যানবাহন উৎপাদন করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের থেকে ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।


 

প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী  


৩. তরুণরা ছোংছিংয়ে রাত্রিকালীন ক্লাসে পরিপূর্ণতা খুঁজে পায় 


 

নাইট ক্লাস, ১৯৮০ এর দশকে চীনকে ঝড় তুলে। এখন দীর্ঘ দিন পর চীনের বিভিন্ন এলাকায় আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠছে এই  রাত্রিকালীন স্কুল।  

 

ছোংছিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পৌর এলাকার যুবকদের মধ্যে আবার জনপ্রিয়তা অর্জন করছে নাইট ক্লাস। এটি তাদের অবসর সময় কাটানোর নতুন এবং আরও অর্থপূর্ণ উপায় বা মাধ্যম হয়ে উঠছে। 


কুয়ানইয়িনছিয়াও সাবডিস্ট্রিক্টের নবম স্ট্রিট বাণিজ্যিক এলাকাটি তার প্রাণবন্ত রাতের অর্থনীতির জন্য বিখ্যাত।   

 

এখানকার তরুণরা আরও পরিপূর্ণ জীবনযাত্রায় নিজেদের পরিচালনা করছে। 

বার এবং নাইট ক্লাবে যাওয়ার পরিবর্তে, এখানকার একদল যুবক কাজের পরে আর্ট ক্লাসে যোগ দিচ্ছে। 


চলতি বছরের আগস্টে কুয়ানইয়িনছিয়াওতে নবম স্ট্রিট নাইট স্কুলটি প্রথম চালু করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।  

এখন এই উপজেলায় ১১ টি নাইট স্কুল রয়েছে যেখানে ৬ শ’ জনেরও বেশি নিবন্ধিত শিক্ষার্থী ২০টি বিভাগে ক্লাস করছেন। 

 


রাত্রিকালীন ক্লাস তরুণদের কাছে আরও জনপ্রিয় করতে কাজ করছেন বলে জানান কুয়ানইয়িনছিয়াও সাবডিস্ট্রিক্ট অফিসের পরিচালক ছিয়ান ফাং। 


"যেহেতু এই জায়গাটি তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় এবং রাতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে তাই আমরা এই জায়গাটাতেই প্রথমে শুরু করি। তবে শুরুতে খুব বেশি আত্মবিশ্বাস ছিলো না। এখন তরুণদের আগ্রহ দেখে আমাদের আত্মবিশ্বসা বেড়েছে।" 


আফ্রিকান ড্রামিং, মিউজিক ডিজে থেকে ইউকুলেলে, নবম স্ট্রিট নাইট স্কুলের আকর্ষণীয় পাঠ্যক্রমে থাকায় এটিকে তরুণ হোয়াইট-কলার কর্মীদের মধ্যে একটি চাওয়া-পাওয়া জায়গা করে তুলেছে। এই ক্লাসের টিকিট কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়।    

 

ওউ তংশেং, যিনি প্রায় ৩০ বছর বয়সী, যখন তিনি সেখানে ইউকুলেলে শিখছিলেন তখন তিনি নাইট স্কুলে ক্যালিগ্রাফি কোর্সের প্রথম প্রশিক্ষক হতে স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর তিনি একটি ক্যালিগ্রাফি স্টুডিও চালাচ্ছেন। এখন তিনি সপ্তাহে দুই রাত নৈশ বিদ্যালয়ে কাজ করছেন। যদিও এটি একটি স্বেচ্ছাসেবা, তবু ওউ সবসময় এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেন। 


"আমি আমার ক্লাসে ক্যালিগ্রাফির ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করি। শিক্ষার্থীরা যদি শেখার প্রক্রিয়ার সময় এটি বুঝতে, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং এটি আয়ত্ত করতে পারে তবে তারা ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য অনুভব করতে সক্ষম হবে," 

 

নৈশ বিদ্যালয়ের ভবিষ্যত উন্নয়ন সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে সাবডিস্ট্রিক্ট অফিস ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাজার সত্ত্বা, সামাজিক সংগঠন এবং শিল্প সমিতির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

  

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী  

সম্পাদক : হাশিম মাহমুদ


আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ। 


পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী  

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী