চালিকাশক্তি বাড়িয়ে উন্নয়ন সাধন করছে চীন
2023-12-19 13:40:59

ডিসেম্বর ১৯: সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-কে কেন্দ্র করে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি, তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে নিয়ে অর্থনীতির উন্নয়ন ও গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে শুরু করে। সেই থেকে সার্বিকভাবে সংস্কারের কাজও চলছে। সরবরাহ-চেইনের কাঠামোগত সংস্কারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কাজ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে চীনের অর্থনীতি আরও গুণগত মানসম্পন্ন, কার্যকর, সমতাসম্পন্ন, টেকসই ও নিরাপদ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে চীনে ২ কোটিতম নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি কুয়াংচৌ শহরে উত্পাদিত হয়। সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ১১ মাসে চীনে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির উত্পাদন ও বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৪.২৬ ও ৮৩.০৪ লাখ। এক্ষেত্রে উত্পাদন ও বিক্রি বেড়েছে ৩৪.৫ ও ৩৬.৭ শতাংশ করে। গাড়ি বাজারের ৩০.৮ শতাংশও এখন নতুন জ্বালানিচালিত যানের দখলে।

চীনের নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি উত্পাদনের পরিমাণ টানা ৮ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্প চীনের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাক্ষম নতুন শিল্পে পরিণত হয়েছে। বস্তুত, চীনে সার্বিকভাবে সংস্কার গভীরতর করার প্রেক্ষাপটে, দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামো অব্যাহতভাবে সুবিন্যস্ত হয়েছে এবং শিল্পের দ্রুত রূপান্তর ও হালনাগদকরণ ঘটেছে।

চীন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আদান-প্রদানকেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং ই মিং বলেন, “নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি শুধু একটি উদাহরণ। অন্য শিল্পেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে।” নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্প যে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে, তা রাতারাতি ঘটেনি। টানা কয়েক বছরের কৌশলগত প্রচেষ্টা ও অব্যাহত সংস্কারের সুফল এটি।

২০১২ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ জ্বালানি সাশ্রয় ও নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করে। ২০২১ সালে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্পের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। চীন এ খাতে ৭০টিও বেশি শৈল্পিক, বৈজ্ঞানিক ও আর্থিক সংস্কারনীতি গ্রহণ করে, যা এ শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে: চীন কেন নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির ওপর এতো জোর দিচ্ছে? এর পেছনে রয়েছে সরবরাহব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার। দশ বছর আগে চীনের অর্থনীতি দ্রুত গতি থেকে মাঝারি ও দ্রুত গতি বৃদ্ধির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।  একদিকে শ্রমের ব্যয় বাড়তে থাকে এবং অন্যদিকে বার্ধক্য সমস্যা ও সম্পদ ও পরিবেশের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে চীন সরবরাহব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার শুরু করে। অতিরিক্ত উত্পাদন ও অকার্যকর সরবরাহ কমিয়ে কার্যকর সরবরাহ বাড়ানো হয়, যাতে একটি গুণগত মানসম্পন্ন, কার্যকর এবং বৈচিত্র্যময় সরবরাহব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ঐতিহ্যবাহী গাড়ি শিল্পে চীন আগে বরাবরই শিল্পচেইনের নিচে অবস্থান করতো। তবে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি সস্তা ও ভালো হওয়ায়, শুধু চীনে নয়, বরং বিদেশেও সেরা তিনটি বাণিজ্যিক পণ্যের একটিতে পরিণত হয়েছে। গত ১১ মাসে চীনের নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি রপ্তানি হয়েছে ১০ লাখ ৯১ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৩.৫ শতাংশ বেশি।

সংস্কার থামবে না, উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়াও বন্ধ হবে না। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনের অর্থনীতির গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। চলতি বছরের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসভায় নতুন যুগে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পাশাপাশি, অব্যাহতভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ওপর নির্ভর করে উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি বৃদ্ধির নির্দেশনা দেওয়া হয়।  কর্মসভায় বলা হয়,  আরও সার্বিকভাবে সংস্কার গভীরতর করার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন ও চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার জন্য প্রবল চালিকাশক্তি যোগানো সম্ভব হয়। (রুবি/আলিম/লাবণ্য)