কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার দু’বছরে বিআরআই থেকে লাভ দেখেছেন চীনে নিকারাগুয়ার রাষ্ট্রদূত
2023-12-18 10:54:28

গোটা বিশ্বের জন্য ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ বা বিআরআই যুগান্তকারী একটি প্রকল্প। নিকারাগুয়া ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার সুযোগ এনে দিয়েছে এ প্রকল্প। চীনে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্যাম্পবেল এক সাক্ষাত্কারে এমন কথা বলেছেন।

চলতি বছর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন দৃঢ়তার সঙ্গে নিকারাগুয়াসহ বিআরআই-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময় ও সহযোগিতা বেগবান করেছে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাতে হাত রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ।

রাষ্ট্রদূত বলেন,  ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ বিশ্ব সহযোগিতার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিয়েছে এবং মানবজাতির জন্য একটি বহুমেরুর, আরও সমৃদ্ধ ও আরও ঐক্যের বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, চীন ও নিকারাগুয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রায় দু’বছরে দু’দেশের সম্পর্কে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং দু দেশ এ থেকে উপকার পাচ্ছে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় দু’পক্ষ যৌথভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের ফলপ্রসূ বাস্তব সহযোগিতা করছে এবং দু’দেশের জনগণের জন্য আরও বেশি লাভ নিশ্চিত করছে।

ক্যাম্পবেলের মতে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ একটি প্রতীকী তাৎপর্যের ও যুগান্তকারী উদ্যোগ। ক্যাম্পবেলের কাজ ছিল ২০২১ সালে চীনের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি প্রকল্প সহযোগিতা বাড়ানো। তিনি বলেন, দু’বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আমরা যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নির্মাণের লাভ দেখেছি।

গত ৩১ আগস্ট চীন নিকারাগুয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ফল ও মাইলফলক, যা অধিকতরভাবে দু’দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে উদ্দীপ্ত করবে এবং দু’দেশের মধ্যে বাস্তব সহযোগিতার আরও বড় ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে।

বর্তমানে চীন ও নিকারাগুয়া পানীয় জল ও স্বাস্থ্যসরঞ্জাম-সম্পর্কিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং নিকারাগুয়ার রাজধানী মানাগুয়ার পরিবহন সেবা উন্নীত করছে। এছাড়া টেলিযোগাযোগ ও আরও অগ্রণী প্রযুক্তি অর্জন-সংক্রান্ত প্রকল্প নিয়ে আলোচনাও চলছে।

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে বিনিয়োগ করে, দু’দেশের সহযোগিতাকে বেগবান করছে। ওই দেশটিও ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ ও বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগের প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।

চীন নিকারাগুয়ার সঙ্গে অব্যাহতভাবে বহু পর্যাযে, বহু চ্যানেলে ও বহু রকমে বিনিময় সহযোগিতা শক্তিশালী করছে, যা দু’দেশের বিনিয়োগ, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পর্যটন শিল্প ও সাংস্কৃতিক সম্প্রচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বিশ্বাস করেন, এখন থেকে সামনের দিনগুলোতে চীন-নিকারাগুয়া সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও আরও সমৃদ্ধ হবে।

একা কখনই বেশি দূর যাওয়া যায় না, সবাই একসঙ্গে অনেক দূর যাওয়া যায়। চীন বাস্তব কার্যক্রমের মাধ্যমে যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নির্মাণের উচ্চমানের উন্নয়ন বেগবান করছে। এ পর্যন্ত চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় দেড়শ’র বেশি দেশ এবং ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ২ শতাধিক সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষর করেছে।

ক্যাম্পবেল মনে করেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ বিশ্বের সহযোগিতার পদ্ধতি বদলে দিয়েছে। চীন নিজে বিশাল অগ্রগতি অর্জনের পাশাপাশ বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে উন্নয়নের সুফল ভাগ করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, চীন যে উদ্যোগ উত্থাপন করেছে, তাতে সবাই অংশ নিতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের সভ্যতা বিনিময় ও সংলাপ করতে পারে। উদ্যোগটি বহুমেরুবিশিষ্ট বিশ্ব প্রতিষ্ঠা বেগবান করার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের অনুকূল হবে।

নিকারাগুয়া মধ্য আমেরিকায় চীনের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মানে আমরা সাংস্কৃতিক বিনিময়, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ বাড়ানোর প্রত্যাশা করি।

আমি মনে করি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ, বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ, বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগের মতো পরিকল্পনা বিশ্বে বিনিময়ের পদ্ধতি, পারস্পরিক রাষ্ট্রীয় যোগাযোগের পদ্ধতি এবং সারা বিশ্বের সহযোগিতা খতিয়ে দেখার পদ্ধতি পরিবর্তনে সহায়ক হবে। ক্যাম্পবেল বলেন, এটা একটি বহুমেরুর, আরও সমৃদ্ধ ও আরও ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে মানবজাতিকে সহায়তা দেবে। (প্রেমা/রহমান)