‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪৯
2023-12-18 21:39:31

  


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে     

১।  ঘুরে আসুন 'শাপলা বৌদ্ধ দেশ' থেকে

২। কুয়াংচৌ শহরে ইয়ুয়েসিউ পার্ক

৩। চীন জুড়ে চলছে শীতকালীন ক্রীড়ার মহাযজ্ঞ


বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"। 

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪৯তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

১।  ঘুরে আসুন 'শাপলা বৌদ্ধ দেশ' থেকে 

চীনের চারটি বিখ্যাত বৌদ্ধ ধর্মীয় পাহাড়ের একটি চিউহুয়া পাহাড়। চীনের আনহুই প্রদেশে অবস্থিত এই দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার মতো। এছাড়া এই পাহাড়ে রয়েছে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির। তাই পাহাড়কে বলা হয় 'শাপলা বৌদ্ধ দেশ' । 

১২০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই পাহাড়। জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই চিউহুয়া পাহাড় হল চীনের বিখ্যাত ধর্মীয় পাহাড় এবং চীনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানের অন্যতম।  

 

চিউহুয়া পাহাড় একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পাহাড়।এখানে রয়েছে ৯৪টি মন্দির। তাই প্রাচীনকাল থেকেই অনেক পর্যটক ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ঘুরতে আসেন এখানে। 

মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি ঐতিহ্যিক বৌদ্ধধমীয় সংস্কৃতির জন্যেও বিখ্যাত এই পাহাড়। কথিত আছে, চিউহুয়া পাহাড় হল কসিটিগারবা বুদ্ধের বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের কেন্দ্র। কসিটিগারবা বুদ্ধ হলেন চীনা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শ্রদ্ধের চারজন বুদ্ধের অন্যতম। বৌদ্ধ ধর্মীয় বইয়ে বলা হয়েছে, কসিটিগারবা বুদ্ধ মাটির মতো উদার। 

 

বলা হয় ৭১৯ সালে চিউহুয়া পাহাড়ে একজন সন্ন্যাসী এসেছিলেন। তিনি ছিলেন কোরিয় উপদ্বীপের সিল্লা দেশের রাজকুমার। তাঁর নাম চিন ছিয়াও জুয়ে। তিনি ছোটবেলা থেকেই বৌদ্ধ ধর্মে দিক্ষিত। 


  


চীনে আসার পর তিনি চীনের বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন এবং অবশেষে চিউহুয়া পাহাড়কে তাঁর বৌদ্ধ ধর্ম শেখার স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেন। চিউহুয়া পাহাড়ে তিনি ৭৫ বছর বাস করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়ে ছিল ৯৯ বছর। মৃত্যুবরণের পর দেখা যায়, দীর্ঘকাল ধরে তার মরবদেহ পচে যায় নি। যা অবাক করে সাধারণ মানুষদের। পরে চিন ছিয়াও জুয়ে'এর শিষ্যরা তাঁর বেঁচে থাকার সময় বৌদ্ধ ধর্ম শেখার পদ্ধতি ও উপায় এবং তাঁর প্রবন্ধের ওপর গবেষণা করেন । ধীরে ধীরে চিউহুয়া পাহাড় কসিটিগারবা বুদ্ধের বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের স্থানে পরিণত হয়েছে।


প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া 


২। কুয়াংচৌ শহরে ইয়ুয়েসিউ পার্ক 

কুয়াংচৌ শহরের একটি বিখ্যাত পার্ক ইয়ুয়েশিউ। এটি কুয়াংচৌর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বৃহত্তম পার্ক। এখানে রয়েছে সাতটি টিলা এবং তিনটি লেক। কুয়াংচৌ শহর সৃষ্টি সম্পর্কে রয়েছে পৌরাণিক গল্প। 

 

পাঁচজন অমর মানুষ এক জনপদে নেমে এলেন পাঁচটি ছাগল বা ভেড়ায় চড়ে। সেই জনপদে তখন চলছিল খাদ্যের অভাব। অমর মানুষরা জনপদবাসীকে দিলেন খাদ্য ও শিক্ষা। তারাই শেখালেন কীভাবে ধান চাষ করতে হয়। এরপর থেকে আর খাদ্যের অভাব হয়নি জনগণের। আর সেই ছাগলগুলো পরিণত হলো পাথরের মূর্তিতে। সেই থেকে এই ছাগল বা ভেড়াগুলোকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। এমন লোককাহিনির ভিত্তিতে কুয়াংচোও শহরকে বলা হয় ‘পাঁচ ছাগলের শহর’।

ইউয়েশিউ পার্কে  ইয়েশিউশান নামে এক টিলার চূড়ায় রয়েছে সেই বিখ্যাত পাঁচ ছাগলের ভাস্কর্য। উ ইয়াং শিতিয়াও নামের সেই ভাস্কর্য দেখতে এখানে অনেক পর্যটক আসেন। ৮ লাখ ৬০ হাজার বর্গ মিটার জায়গাজুড়ে রয়েছে পার্কটি।

 

এখানে রয়েছে মিং রাজবংশের আমলে তৈরি ২৮ মিটার উঁচু চেনথাই টাওয়ার। এটি একটি টিলার উপরে অবস্থিত। টাওয়ারের চূড়া থেকে পুরো পার্ক দেখা যায়। এখানে এখন একটি মিউজিয়াম রয়েছে যেখানে কুয়াংচৌ শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে জানা যাবে। পার্কের তিনটি লেকের নাম তোংসিউ, নানসিউ এবং পেইসিউ। পেইসিউ লেকে নৌকায় চড়া ও মাছধরার সুবিধা রয়েছে।

এটি পাবলিক পার্ক। তাই কোন টিকেট কাটার প্রয়োজন হয় না। এই পার্কের ল্যান্ডস্কেপ অত্যন্ত সুন্দর। এখানে বিশাল তোরণ দিয়ে ভিতরে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ে ফুলের বাগান। 

এখানে বিভিন্ন মৌসুমী ফুলের সমাহার ও অপূর্ব সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এখানে প্রায়ই মেলা বসে। বসন্ত উৎসবের সময় এখানে লোকজ মেলা বসে। আরও নানা রকম সাংস্কৃতিক উৎসব হয়। 

একটি লেকে রয়েছে রঙিন মাছ। মাছগুলো আকারে বেশ বড় আর গোলাপী, হলুদ, সবুজ, নীল, লাল ইত্যাদি বিচিত্র রঙের। এই রঙিন মাছের খেলা দেখে মুগ্ধ হন অনেকে। 

পার্কে রয়েছে দীর্ঘ হাঁটাপথ। এখানে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পার্কে ছোট ছোট টিলায় রয়েছে রঙিন ছাউনি। পার্কের ভিতরে রেস্টুরেন্টও রয়েছে। 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম 

৩। চীন জুড়ে চলছে শীতকালীন ক্রীড়ার মহাযজ্ঞ


চীন জুড়ে চলছে শীতকালীন ক্রীড়ার মহাযজ্ঞ। উত্তর-উত্তরপশ্চিমে হেইলুংচিয়াং, সিনচিয়াং, ইনার মঙ্গোলিয়া আর দক্ষিণে সিচুয়ান ও হুপেই প্রদেশের বিভিন্ন স্কি রিসোর্টগুলো দেশ-বিদেশির স্কি অ্যাথলেট আর ক্রীড়াপ্রেমি পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর।

চীনের সর্ব উত্তরের হেইলুংচিয়াং প্রদেশ তার দীর্ঘ শীতকাল এবং বিপুল উচ্চমানের তুষারের জন্য বিখ্যাত। এ প্রদেশেরই রাজধানী শহর হারবিনে প্রতিবছরই চলে বরফ ও তুষার মৌসুম’।  


বেইজিং, সাংহাই, ছোংছিং, থিয়ানচিন, হ্যপেই, চিলিন, লিআওনিং ও সিনচিয়াং থেকে ক্রীড়াপ্রেমিরা অংশ নেয় সেই ইভেন্টে।  


 


বরফ ও তুষারের এই ক্রীড়াযজ্ঞ চলে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এ সময়ে দেড় হাজারের বেশি কর্মসূচি থাকে আর দেড়শো মিলিয়নের বেশি মানুষ যোগ দেয় সেখানে। 


 


উত্তর পশ্চিম চীনের উইগুর  স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং এর প্রাকৃতিক পাউডার স্নো’র জন্য বিখ্যাত। শুধু চীন নয়, স্কি করতে এখানে ভিড় জমান সারা পৃথিবীর মানুষজন।  


সাংহাইয়ে স্কি ফ্যান ওয়াং ছিয়ানছিয়ান বলেন, “গেল বছর ক্যাবলকারে করে আমি উপরে গিয়েছিলাম এবং ২ হাজার ৮০০ মিটার উঁচু থেকে স্কি করে নেমেছি্লাম। সিনচিয়াংয়ের পাউডার স্নো তো খুব বিখ্যাত। তাই এখানে স্কি করে খুব আরাম”।


 


চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সিচুয়ান ও হুপেই প্রদেশেও শীতকালিন খেলাধুলা বেশ জনপ্রিয়। এখানে চমৎকার সব স্কি রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এগুলোতে শুধু পেশাদার স্ক্রিয়াররাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দা, শিশু ও সখের স্কি খেলোয়াড়দের জন্যও রয়েছে দারূণ বন্দোবস্ত।


২০১৪ সালে শুরু হওয়া বরফ ও তুষার মওসুম বিপুল সংখ্যক চীনাকে শীতাকালিন ক্রীড়ার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। 


প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম 


ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী