১. সংস্কৃতি সপ্তাহ
শাংহাই ফিল্ম ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড
হয়ে গেল শাংহাই ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশনের ৩০তম পুরস্কার বিতরণী গালা আয়োজন। সম্প্রতি শাংহাই পৌর এলাকার সংচিয়াং জেলায় এই ইভেন্টের আয়োজন করে শাংহাই ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন।
‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ টু’, চীনের প্রথম প্রধান, ঘরোয়া সাই-ফাই ব্লকবাস্টারসহ এই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত দশটি সফল চীনা চলচ্চিত্র, মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের দৌঁড়ে ছিল।
‘আই অ্যাম হোয়াট আই অ্যাম’- এর পরিচালক সান হাইপেং বছরের নতুন পরিচালকের পুরস্কার জিতেন।
একটি মর্মস্পর্শী কাহিনী এবং দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের স্থানীয় সংস্কৃতির সংবেদনশীল চিত্রায়নসহ, ছবিটি চীনের শহর ও গ্রামীণ এলাকার পটভূমিতে তৈরি করা হয়েছে।
সাংহাই ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন জুলাই ২০২১ থেকে আগস্ট ২০২৩ এর মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন করে।
চীন অ্যানিমেশন সম্মেলন ২০২৩
গেল সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে চীন অ্যানিমেশন সম্মেলন ২০২৩। উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের মুতানচিয়াংয়ে অনুষ্ঠিত ৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে নেতৃস্থানীয় দেশি এবং বিদেশি অ্যানিমেশন কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি মূলধারার মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে প্রায় ৩০০ জন অতিথিকে একত্রিত করা হয়।
৪০ বছরে চীনা টেলিভিশন অ্যানিমেশনের বিকাশে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংশ্লিষ্ট আয়োজকরা জানান, মুচিয়াংতন বিশ্ববিদ্যালয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। অ্যানিমেশন সেক্টরটিতে উচ্চমানের কাজের মূল সৃজনশীলতা, শিল্প প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তার করা এবারের আয়োজনের লক্ষ্য।
এই বছরের ইভেন্টে চীনা টেলিভিশন অ্যানিমেশনের ৪০ বছরের বিকাশের জন্য একটি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে বর্তমান অর্জন এবং ইতিহাসের প্রতিফলন উদযাপন করা হয়।
‘গ্রেটওয়ালে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা’
বেইজিংয়ে ‘ফরেন হেডস অফ স্টেটস অন দ্য গ্রেট ওয়াল’ বা ‘গ্রেটওয়ালে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধারা’ শিরোনামের একটি সিরিজের সংক্ষিপ্ত ভিডিও উদ্বোধন করা হয়েছে।
এই সিরিজের প্রযোজনা দলটি ১৯টি দেশ থেকে আগত ২১ জন বিদেশি নেতা নির্বাচন করে, পুরানো ফুটেজ এবং ছবি ব্যবহার করে সিরিজটি সংকলন করে।
শান্তি এবং বন্ধুত্বের ভাগাভাগি করা মূল্যবোধকে প্রকাশ করা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিনিময় এবং সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রচার করা এই ১৫ পর্ব বিশিষ্ট সিরিজটির লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে যোগদানকারী চীনা কর্মকর্তারা জানান, এই ভিডিওগুলো শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক রেকর্ড হিসেবেই কাজ করবে না, সেইসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধানদের স্মারক হিসেবেও কাজ করবে যারা আইকনিক সাইটটি পরিদর্শন করেছেন।
২ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো এবং ২০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত গ্রেট ওয়াল বিশ্বের একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বিস্ময় হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
এটি ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।
২. এবার চিরায়ত চীনা সাহিত্য
কবি লিউ ইয়ু শি: স্বর্গ চিন্তায় প্রসিদ্ধি
থাং রাজবংশের সময়কার একজন বিশিষ্ট কবি ছিলেন লিউ ইয়ু শি। তিনি কবি, দার্শনিক, রচনা লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তবে স্বর্গ বিষয়ক মৌলিক চিন্তার জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন। স্বর্গ বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তা ছিল সমসাময়িক দার্শনিকদের চেয়ে আলাদা। তিনি মনে করতেন স্বর্গ ও মর্ত্যর মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এ দুটি পৃথক নয়। কখনও স্বর্গ, মর্ত্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে; আবার কখনও মর্ত্যমানব তার কাজের মাধ্যমে স্বর্গকে প্রভাবিত করতে পারেন।
কবি লিউ ইয়ুশির জন্ম ৭৭২ খ্রিস্টাব্দে। তার পূর্ব প্রজন্ম ছিল যাযাবর সিয়ংনু গোষ্ঠীর মানুষ। তবে তার এক পূর্বপুরুষ হান জাতির হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন এবং লিউ পদবী গ্রহণ করেন। লিউ ইয়ুশির জন্য হ্যনান প্রদেশের লুওইয়াং শহরে।
তার বাবা পরবর্তিকালে সপরিবারে চেচিয়াং প্রদেশের চিয়াসি শহরে চলে আসেন। লিউ ইয়ুশি দক্ষিণ চীনে বড় হন। দক্ষিণ চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তিনি কখনও ভুলতে পারেননি। তার কবিতায় অনেক সময় এই প্রকৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। ৭৯৩ সালে তিনি রাজকীয় চাকরির পরীক্ষা চিনশি পাশ করেন। ৮০০ সালে লিউ সামরিক অফিসার তু ইয়ুর সচিব হন। ফলে সামরিক জীবনকে প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা হয় তার। রাজনৈতিক জটিলতা এবং সম্রাট পরিবর্তনের ফলে লিউ বেকায়দায় পড়ে যান। আগের সম্রাট তাকে পছন্দ করলেও নতুন সম্রাট লিউ’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অপছন্দ করেন এবং তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেন। লিউ এবং অন্যান্য সামরিক অফিসারদের সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। লিউ বিভিন্ন সময়ে কুয়াংতোং প্রদেশের লিয়ানচৌ, হুনান প্রদেশের লাংচৌশহরে চাকরি করেন। ৮১৫ সালে রাজধানী ছাংআনে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু দরবারের রাজনীতি নিয়ে বিদ্রুপাত্মক কবিতা লেখায় আবার তাকে বদলি করা হয় কুইচৌ প্রদেশে। ৮২৬ সালে লিউ ফিরে আসেন লুওইয়াংয়ে। ৮৩০ সালের পর লিউ এর জীবনে কিছুটা স্বস্তি আসে। তিনি সুচৌ শহরের প্রশাসক হন। এরপর হ্যনান এবং পরে শায়ানসি প্রদেশেও বড় পদে চাকরি করেন। ৮৪১ সালের পর তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এই সময় তিনি লুওইয়াং শহরে বাস করতেন। আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত বিখ্যাত কবি পাই চু য়ির সঙ্গে তার বেশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দুই প্রবীণ কবি কাব্য আলোচনায় সময় কাটাতেন। ৮৪২ সালে ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন লিউ। তাকে মরণোত্তর সম্মাননা দিয়ে রাজস্ব মন্ত্রীর খেতাব দেয়া হয়।
লিউ’র কবিতা ছিল সাহসী এবং সত্যকথনের জন্য সুপরিচিত। তিনি ক্ষমতাধরদের পদলেহন করতেন না। তিনি লোকজ ঢংয়েও কিছু কবিতা লিখেছেন। বাঁশ শাখার গান, উইলো শাখার গান এবং কৃষিক্ষেত্রের গান তার বিখ্যাত তিনটি লোকজ গ্রামীণ ধরনের কবিতা। থাং কবিতার জগতে এ ধারাটি ছিল একেবারে নতুন ধরনের। তার দার্শনিক কবিতা থিয়ানলুন স্বর্গের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে তুলে ধরেছে।
তার একটি কবিতা শোনাচ্ছি।
প্রাসাদের সড়ক
পাখির সেতুর প্রান্তে জন্মেছে আগাছা, বেড়ে উঠেছে তৃণ
প্রাসাদের সড়কের উপর ঝুলে আছে অস্তগামী সূর্য
ভরত পাখিরা উড়ে যাচ্ছে যেন অতীতের আঁকা ছবি
ছোট গৃহের সামনে লুটিয়ে পড়ছে সন্ধ্যার আলো।
এই কবিতায় লিউ ইয়ুশি যে চিত্রকল্প তৈরি করেছেন তা অনবদ্য। এক প্রাসাদ নগরীর রাজপথ ও তার পাশে সেতু এবং ছোট ছোট গৃহের উপর সন্ধ্যা নেমে আসার যে বিষণ্ন চিত্র তিনি একেঁছেন তা এক শান্ত জীবনের কথা বলেছে।
তার কবিতায় বৌদ্ধ দর্শনের ছোঁয়া রয়েছে। সাহসী সত্যকথন এবং দর্শনের জন্য চিরায়ত চীনা সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছেন লিউ ইয়ু শি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।
---------------------------------------------------------------------------
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।