‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪৮
2023-12-17 21:43:12

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে     

১। পাহাড় ও সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগের আদর্শ শহর সানইয়া 

২। সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী কাজাখ

৩। ছুনরোং চিয়েতে ঘোরাঘুরি


বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"। 

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

 

১। পাহাড় ও সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগের আদর্শ শহর সানইয়া

চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের সবচেয়ে দক্ষিণের শহরের নাম সানইয়া। মোট এক হাজার ৮৮৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই শহর। এই শহরে বাস করেন ৩০লক্ষ ৭০ হাজার ২৭৫ জন। এরমধ্যে লি জাতি ৪১.১২ শতাংশ, মিয়াও জাতি ০.৭ শতাংশ, হুইজাতি ১.৩৩ শতাংশ।

সানইয়া উত্তর দিকে পাহাড়, দক্ষিণ দিকে সাগর, পাহাড় ও গিরিশৃঙ্গ রয়েছে। যার ফলে এই শহর হাইনান প্রদেশের বিখ্যাত পর্যটন শহর। বেশিরভাগ ভ্রমণকারীদের জন্য, সানইয়া হল পাহাড়, নদী এবং সেরা সমুদ্র দর্শনের একটি আদর্শ জায়গা। এই সানইয়া শহর একমাত্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় শহর হিসাবে পরিচিত। এই শহরের অনুকূল জলবায়ু গ্রীষ্মকালে গরম কিন্তু অন্য তিনটি ঋতুতে উষ্ণ, তাই প্রতি বছর দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এই শহর।  

 

পুরো শহরটি সমুদ্রের সাথে সম্পর্কিত। এখানে আপনি একটি অনন্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় মহাসাগরীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন যা চীনের অন্যান্য প্রদেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সানিয়া বে, দাদংহাই, হাইতাং বে এবং ইয়ালং বে এই শহরের অন্যতম দেখার মতো জায়গা। ফলে বছরের প্রতিটা সময়ই ছুটি কাটাতে ভিড় করেন এখানে।  

 

এছাড়া সানইয়ার খাবার খুব বিখ্যাত। এ শহরের  টাটকা  ফল, শাকসবজি, সামুদ্রিক বিভিন্ন খাবার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ভোজনরসিকদের কাছে। পাশাপাশি এ শহরে রয়েছে ৩০ ধরনেরও বেশী খনি, যা  সারা দেশে জুড়েই বিখ্যাত। 

এখানকার জল ক্রীড়া যেমন স্নরকেলিং এবং জেট-স্কিইং, রেইনফরেস্ট হাইকিং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তাছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্যও রয়েছে নানা সুবিধা। সব ধরণের সুযোগ সুবিধাসহ এই শহরে রয়েছে বেশি দামের পাঁচ তারকা হোটেল এবং পাশাপাশি রয়েছে কম মূল্যের হোটেলও।  

 

সানইয়ার ফেনিক্স বিমান বন্দর দক্ষিণ হাইনান প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। প্রতিদিন বিমানগুলো সেখানে থেকে দেশে বিদেশে যায়। এছাড়া সানইয়া বন্দর হাইনান প্রদেশের একটি বিশ্বমুখী উন্মুক্ত বন্দর। সেখানে ৫হাজার টন ধারনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে। 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম 

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া 

২। সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী কাজাখ 

সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমচি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের পাহাড় তিয়ান শ’। এই পাহাড়ের কোল ঘেষে বসতি কাজাখদের একটি সম্প্রদায়ের। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত পাহাড় বেষ্টিত থিয়ান শান লেক যেন এখানকার আদুরে কন্যা। তাই তো পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় জায়গা এটি। সে কারণেই কাজাখরাও এটাকে বানিয়েছে পর্যটন ব্যবসার উপলক্ষ্য। নিজেদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতির নানা উপাদান-উপকরণ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে এখানে। 

কেবল ঝর্ণা, হ্রদ আর আকাশে হেলান পাহাড়ের সৌন্দর্যই নয়; কাজাখ তরুণীর হাসির ঝলকও পলক ফেরাতে বাধ্য করবে অজানা পর্যটককে। ৫ বর্গকিলোমিটার বিশাল আয়তনের হ্রদে নয়, ভাসবেন ভাবনার মহাসমুদ্রে। 

 

কাজাখরা সিনচিয়াংয়ের এক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাহক এই মুসলিম জনগোষ্ঠী এখানকার বৈচিত্রের অংশ। 

কাজাখদের জীবনাচার ও সংস্কৃতি নানাভাবে মুগ্ধ করে পর্যটকদের। বিশেষ করে তাদের গান-নাচসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ভুলিয়ে দেবে আপনার গন্তব্য। মন গেয়ে উঠতে চাইবে তারুণ্যের উচ্ছ্বলতায়। 

কাজাখ তরুণ-তরুণীদের নানা মাত্রিক পারদর্শিতা জানান দেয় তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও নৃতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের শিকড় কতোটা গভীরে। ভাবুক পর্যটক হয়তো এসব ভাবতে ভাবতে হারিয়ে ফেলবে নিজেকেই। 

 

আবার কাজাখ নারীদের ঘর গৃহস্থালী, সন্তান লালনপালনের দৃশ্য কিংবা সাধারণ মানুষের নানা দৈনন্দিন কার্যক্রম খুলে দেবে ভিন্নতায় বৈচিত্র্য পাঠের সমৃদ্ধ উৎস। পাশাপাশি কাজাখদের কৃষ্টি, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে পরম মমতায়, স্নেহের আহ্বানে। 

প্রতিবেদন- সাজিদ রাজু 

সম্পাদনা- আফরিন মিম 

৩। ছুনরোং চিয়েতে ঘোরাঘুরি

কুনমিং শহরের ছ্যংকুং জেলার বাণিজ্যিক এলাকা ছুনরোং স্ট্রিট । এই স্ট্রিট বিদেশী শিক্ষার্থীদের পছন্দের জায়গার একটি। কেননা ছুনরোং চিয়েতে আছে অনেকগুলো শপিং মল এবং সুপার শপ। ছুনরোং সাবওয়ে স্টেশন থেকে হাঁটা দূরত্বে এসব শপিং মল অবস্থিত। 

 

এই জায়গাটি রেস্টুরেন্ট স্ট্রিট হিসেবেও বিখ্যাত। ছুনরোং চিয়ের আশেপাশেই রয়েছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। এদের মধ্যে যেমন ম্যাকডোনাল্ডস , কেএফসি, বার্গার কিংয়ের মতো আন্তর্জাতিক  ফাস্ট ফুড চেইনশপ আছে তেমনি রাস্তার ধারে বসা চটজলদি খাবারের আয়োজনও রয়েছে। আরও আছে স্থানীয় কুইজিন, মুসলিম রেস্টুরেন্ট । 

 

ছুনরোং চিয়ের শপিংমলগুলোর ভিতরে বড় বড় ব্র্রান্ড শপ এবং ছোটখাটো সস্তাদামের দোকান, সুপার শপ রয়েছে। আরও রয়েছে বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা। প্রায় প্রতি সন্ধ্যাতেই এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। 


এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় হোটেল। বেশি দামের হোটেলের পাশাপাশি একটু কম দামে থাকার হোটেলও রয়েছে এখানে। এসব হোটেলে স্বল্পমূল্যে বিদেশিরা থাকতে পারেন। শপিংমলের বাইরের খোলা চত্বরেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা যেমন সাইকেল চালনা, ফ্যাশন শো, রোলার স্কেট ইত্যাদির আয়োজন থাকে। 

 

প্রতিটি শপিংমলের ভিতরে রয়েছে ইলেকট্রনিক গেম মেশিন এবং ছোট ছোট রাইড। এসব রাইডে শিশু ও বড়রা চড়তে পারেন। আরও রয়েছে ম্যাসেজ চেয়ার। শীতের সময় আউটডোরের চেয়ে ইনডোর বিনোদনের দিকে মানুষের আকর্ষণ বেশি থাকায় এই শপিংমলগুলোতে অনেক মানুষ আসে শপিংয়ের পাশাপাশি কিছুটা ভালো সময় কাটাতে।

অনেকগুলো শপিং মলের ভিতরে ছবি তোলার ভালো স্থান রয়েছে। এসব জায়গায় সেলফি বা বন্ধুবান্ধব মিলে নানা রকম মজার ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে। ছুনরোং স্ট্রিটের কাছেই লুওলোং পার্কসহ  কয়েকটি পার্ক রয়েছে। সেসব জায়গাতেও মেলা বসে প্রায় সারাবছরই।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া 

সম্পাদনা- আফরিন মিম 


ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী