বিশ্বের টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে মূল অংশীদার চীন
2023-12-17 20:55:02

 


চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে চতুর্থ চীন ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ফোরাম। এতে টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে চীনের ভূমিকা তুলে ধরেছেন দেশ-বিদেশের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ এবং পণ্ডিতরা। 

 

চীনে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসিক প্রতিনিধি বিট ট্রাঙ্কম্যান বলেছেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লকষ্যমাত্রা-বা এসডিজি মাত্র ২০ শতাংশের কম অর্জিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মহামারী, যুদ্ধ এবং সংঘাতের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে বিশ্বকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন এখন বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন তহবিলের শীর্ষ প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মতো চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখার ক্ষেত্রে দেশটির ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন ট্রাঙ্কম্যান।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল লি চুনহুয়া জাতিসংঘ প্রক্রিয়ায় চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এ ক্ষেত্রে চীনের বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ ও এক অঞ্চল, একপথ উদ্যোগ-বিআরআইয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। 

২০২৩ সালের জুনের মধ্যে, চীন পাঁচটি মহাদেশ জুড়ে ১৫০ টিরও বেশি দেশ এবং ৩০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ২০০টিরও বেশি বিআরআই সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

চীনের অবদান জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নে দারুণ আশাবাদ নিয়ে এসেছে বলে লি উল্লেখ করেন।


অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হুগো স্লিম, ফোরামে যোগ দেওয়ার সময় চীনের গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, চীন সবসময় জাতিসংঘের এসডিজি সমর্থন করেছে, এবং বেইজিং সত্যিই উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে একটি গ্রুপ হিসাবে কাজ করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের উন্নয়ন ধারণার বিকল্প মডেল নিয়ে এসডিজিতি চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কাজ করছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘চাইনিজ একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনে’র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইউ চিরং বলেন, ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুশীলন এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার একটি চীনা মডেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মডেলটি দক্ষ এবং বাস্তববাদী, সবুজ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, এটি অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে বা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্ত না হয়ে সমতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং জয়-জয় ফলাফল অনুসরণ করে।

তার নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা এবং অবকাঠামো নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে তুলনামূলক সুবিধার ভিত্তিতে, চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাধাগুলো দূর করতে সাহায্য করার জন্য দ্বিমুখী বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সাথে তার বৈদেশিক সহায়তাকে একত্রিত করেছে বলেও জানান ইউ চিরং।

২০১৩ থেকে ২০২২ পর্যন্ত, চীন এবং বিআরআই অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির ক্রমবর্ধমান মূল্য ছিল ১৯.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ। চীন এবং অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিমুখী বিনিয়োগ ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চীনের সবুজ উন্নয়ন অগ্রগতি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, অক্সফোর্ড সিনিয়র রিসার্চ ফেলো স্লিম বলেন, দেশটি সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণে অগ্রসর হয়েছে, তিনি যোগ করেছেন যে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের বিকাশের দর্শন চীনে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ট্রাঙ্কম্যান আরও উল্লেখ করেছেন যে চীন তার শক্তি এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সবুজ শক্তি রূপান্তর এবং সবুজ অর্থায়নসহ ক্ষেত্রগুলোতে অংশীদার দেশগুলোর সাথে টেকসই উন্নয়ন ফলাফল এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারে।

চীন যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি বড় চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে এর মূলে রয়েছে দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও জোরালো প্রবৃদ্ধি।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে সুইস ব্যাংক ইউবিএস, পূর্বাভাস দিয়েছে যে ভোক্তা ব্যয়, কার্বন পরিবর্তনে নেতৃত্ব এবং শিল্প সরবরাহ চেইনের উন্নয়নে চালিত চীনা অর্থনীতি ২০২৪ সালে ৪.৪ শতাংশ বাড়বে। 

জাপান-ভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা গোষ্ঠী নোমুরা, চীনের ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪.৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫.১ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করেছে। 

নোমুরার অর্থনীতিবিদ লু তিং বলেন, ‘চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক নীতি, যেমন রাজস্ব, আর্থিক এবং রিয়েল এস্টেট নীতি এবং বিদেশী বিনিয়োগ প্রবর্তন, উন্মুক্তকরণ এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা, সবই একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে’। 

চীনে জেপি মরগানের প্রধান অর্থনীতিবিদ চু হাইপিন উল্লেখ করেছেন যে, বিনিয়োগ ২০২৪ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হবে। সরকারের নীতি সমর্থনে ত্রয়ী উপাদান বিনিয়োগ, ভোগ ও রপ্তানি চীন তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে চালিকা শক্তি হবে বলে মনে করেন চু।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, সিএমজি বাংলা।