দেহঘড়ি পর্ব-০৪৯
2023-12-16 21:17:14

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

খাবারের অ্যালার্জি হলে টিসিএম ট্রাই করুন

‘খাবারের অ্যালার্জি’ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি বিভ্রাট বা অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া যা কোনও নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পর ঘটে। এ ধরনের অ্যালার্জি থাকলে অল্প পরিমাণে অ্যালার্জি-সৃষ্টিকারী খাবারও পরিপাকজনিত সমস্যা, আমবাত বা শ্বাসনালী ফোলা রোগের মতো উপসর্গগুলোকে জাগিয়ে তুলতে পারে। কারো কারো মধ্যে খাবারের অ্যালার্জি গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি কখনো কখনো জীবনের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খাবারের অ্যালার্জির হার আনুমানিক ৮ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৪ শতাংশ। তবে এ সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়কালে শিশুদের মধ্যে খাবারের অ্যালার্জি ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ধারা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও একই রকম। একেক জনের একেক খাদ্যে অ্যালার্জি হয়। কারোর অ্যালার্জি হয় খাদ্যশষ্যে, কারোর দুগ্ধজাত পণ্যে বা ডিম আবার কারোর অ্যালার্জি হয় গ্লুটেনে। 

আধুনিক জীবন মানুষের হজম ব্যবস্থায় তালগোল পাকিয়ে ফেলছে; এটিকে দুর্বল করে তুলছে। এর অন্যতম কারণ মানসিক চাপ, কীটনাশক, জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার ইত্যাদি। পৃথিবীতে যে ভারসাম্য হারিয়ে গেছে, তা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। তাই নিজেদের শরীরকে ভারসাম্য রাখার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিসিএম সে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বা তা রক্ষায় ভীষণ কার্যকর। এর মধ্যে অধিক কার্যকর আকুপাংচার ও ভেষজ। 

তাই আপনি যদি খাবারের অ্যালার্জি, খাদ্য-সংবেদনশীলতা, পেট বা অন্ত্রের ব্যথার সমস্যায় ভোগেন, তাহলে আকুপাংচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসার কথা ভাবতে পারেন। আকুপাংচার আসলে ২ হাজার বছরের পুরানো এক চিকিৎসাব্যবস্থা। তবে এটাকে এখনও পর্যন্ত খাদ্যে অ্যালার্জি, খাদ্য-সংবেদনশীলতা এবং পেটের সমস্যার সর্বোত্তম চিকিত্সা বলে মনে করা হয়৷ আকুপাংচার প্রতিটি সমস্যার ‘মূলের চিকিত্সা করে’। অ্যালার্জির ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি একটি দুর্বল পাচনতন্ত্র।

আকুপাংচার হজমশক্তি বাড়ায়। আর এটা যত বাড়ে খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা তত কমে। এতে খাবারগুলোকে আরও ভালভাবে সহ্য করা সম্ভব হয়। ফলে শক্তি স্তর বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথা ও অস্বস্তি হ্রাস পায়। খাবারের অ্যালার্জির আকুপাংচার চিকিৎসা নিরাপদ, প্রাকৃতিক ও কার্যকর। এর ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কোনও নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। আকুপাংচার ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমায়।

হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য ভালো দাওয়াই চীনা ভেষজও। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করার জন্য ভেষজগুলো আকুপাংচারের মতো একই নীতিতে কাজ করে। টিসিএম চিকিৎসকরা আলাদা আলাদা রোগীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনের ভিত্তিতে ভেষজগুলো নির্ধারণ করে দেন।


#চিকিৎসার_খোঁজ

পাঁচ ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল

ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল পাঁচটি ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত এক বিশাল কলেবরের হাসপাতাল। চীনের শানতুং প্রদেশের ছিংদাও শহরে আজ থেকে ১০৭ বছর আগে ১৯১৬ সালে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর কার্যক্রম বিস্তৃত চিকিৎসা, চিকিৎসাশিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং রোগপ্রতিরোধ পর্যন্ত। ৪ হাজার ৯২ শয্যার এ হাসপাতালটি ছিংদাওয়ের বৃহত্তম সর্বোচ্চ স্তরের হাসপাতাল এবং শানতুং প্রদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় আঞ্চলিক চিকিৎসাকেন্দ্র।

উন্নয়নের মাত্রা বিচারে ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালের অবস্থান সারা চীনের মধ্যে ৩০তম, বহির্বিভাগের ও জরুরি বিভাগের রোগীর সংখ্যা বিচারে ৭৪তম এবং সার্জারির সংখ্যা বিচারে ৬৪তম। সর্বোচ্চ স্তরের জাতীয় জেনারেল হাসপাতালগুলোর কর্মক্ষমতা মূল্যায়নে, এটি দেশের ১০৩তম স্থানে রয়েছে৷

ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালের ক্যাম্পাসগুলো হলো ‘প্রধান হাসপাতাল’, ‘পূর্ব হাসপাতাল’, ‘পশ্চিম হাসপাতাল’, ‘মিউনিসিপ্যাল ডার্মাটোলজি প্রিভেনশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল’ এবং সুচৌ রোড ক্যাম্পাস। 

বর্তমানে এ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসা পেশাজীবী, চিকিৎসাশিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি মিলে মোট ৫ হাজার ২৫ জন। তাদের মধ্যে ৭৮ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। এছাড়া চিকিৎসা পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রীয় পরিষদের বিশেষ বিশেষজ্ঞ, তাইশান পণ্ডিত ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ, ছিংদাওয়ের নেতৃস্থানীয় প্রতিভা এবং মিউনিসিপ্যাল পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ।

ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চতুর্থ-প্রজন্মের দা ভিঞ্চি রোবট, রোজা রোবট, পিইটি-সিটি এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। এ হাসপাতাল মানব-সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য অনুমোদিত হয়েছে৷ এছাড়া এটি স্ট্রোক, বুকে ব্যথা, হার্ট ফেইলিওর, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, হাইপারটেনশন, ইত্যাদির জন্য একটি জাতীয় স্তরের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷

এ হাসপাতালটি পাচনতন্ত্রের টিউমার, সহায়ক প্রজনন এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগের চিকিৎসায় জাতীয় ক্লিনিকাল ভিত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং জাতীয় বিরল রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সহযোগিতা নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। টিএভিআর, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, ডিজিটাল নেভিগেশন, লেফট অ্যাট্রিয়াল অ্যাপেন্ডেজ অক্লুশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অনেকগুলোর নতুন প্রযুক্তিও ব্যবহার করছে এ হাসাপতাল।

ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে ন্যাশনাল মেজর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি রিসার্চ, ন্যাশনাল স্টেম সেল ক্লিনিকাল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল রেসপিরেটরি ডিজিজ ক্লিনিক্যাল মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের মতো উচ্চমানের বেশ কতগুলো প্ল্যাটফর্ম। চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখার জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে এ হাসপাতাল। ছিংদাও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি অধিভুক্ত এ হাসপাতাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্লিনিকাল শিক্ষার সার্টিফিকেশনে উত্তীর্ণ হয়েছে।


#ভেষজের গুণ

কতো উপকার থানকুনি পাতার!

থানকুনি পাতার রয়েছে অসাধারণ ভেষজ গুণ। নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পাওয়া যায় এ পাতা খেলে। এটি পেটের অসুখ দূরে রাখে, শরীর সতেজ রাখে, মস্তিস্কের ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরকে বিষমুক্ত করে এবং ত্বক সতেজ রাখে। চলুন জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার নানা গুণ সম্পর্কে:

পেটের রোগ থেকে মুক্তি দেয়: পেটের রোগ নিরাময়ে থানকুনি পাতা এক অসাধারণ ভেষজ। থানকুনি পাতায় থাকা এশিয়াটিকোসাইড নামের একটি উপাদান হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে পেটের আলসারের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এটি। এছাড়া পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার চিকিৎসায় এই পাতা ভালো কাজে লাগে।

শরীরকে বিষমুক্ত করে: নানাভাবে আমাদের শরীরে বিষাক্ত উপাদান প্রবেশ করে, যেগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা খেলে প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে এসব টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়।

মানসিক অবসাদ নিয়ন্ত্রণ করে: থানকুনি পাতায় থাকা কয়েকটি উপাদান সেরোটনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়, যে কারণে মানসিক অবসাদের জন্য দায়ী কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে উদ্বেগ ও মানসিক অবসাদ নিয়ন্ত্রণে আসে। 

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়: থানকুনি পাতায় থাকে ব্যাকোসাইড ‘এ’ ও ‘বি’। এ দুটি উপাদান মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়। এছাড়া এ পাতা খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পেন্টাসাইক্লিক ট্রাইটারপিনস নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়ে। এসব কারণে ব্রেন সেলের ক্ষমতা বাড়ে এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে এবং বুদ্ধি বাড়ে। 

অনিদ্রা দূর করে: থানকুনি পাতায় রয়েছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা মানসিক চাপ কমায়। সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকেও শান্ত রাখে। একারণে এ পাতা খেলে অনিদ্রা দূর হয়।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।