চীন-ভিয়েতনাম সম্পর্কের নতুন অবস্থান জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ
2023-12-15 15:35:15

ডিসেম্বর ১৫: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত মঙ্গল ও বুধবার ভিয়েতনাম সফর করেছেন। এবারের সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সাফল্য হলো কৌশলগত তাত্পর্যের সাথে চীন-ভিয়েতনাম অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার ঘোষণা। এটি দু’দেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন যাত্রা শুরু। ভিয়েতনামের থং তান ক্সা ভিয়েতনাম বার্তা সংস্থার এক খবরে বলা হয়েছে, সি চিন পিংয়ের এবারের সফর হলো দু’দেশের সম্পর্কের নতুন ঐতিহাসিক মাইলফলক। এতে দু’দেশের জনগণের উপকার করার ইচ্ছা ও সংকল্প প্রতিফলিত হচ্ছে।

এবারের সফর হলো ২০১৫ সাল পর সি চিন পিংয়ের তৃতীয় ভিয়েতনাম সফর। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, চীন ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্ককে উচ্চ মানের গুরুত্ব দেয়। ভিয়েতনামও সর্বোচ্চ মানে সি চিন পিংকে অভ্যর্থনা জানায়। সি চিন পিং ভিয়েতনামের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দু’দেশের তরুণ-তরুণী ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেন।

চীন ও ভিয়েতনামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এক, আদর্শ ও বিশ্বাস সংযুক্ত এবং উন্নয়নের পথ সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে দু’দেশের নেতারা নতুন যুগে দু’দেশের ‘স্থায়ী, ভবিষ্যতমুখী, সুপ্রতিবেশিসুলভ ও সার্বিক সহযোগিতামূলক’ সম্পর্কের কাঠামো গড়ে তোলেন। ২০০৮ সালে দু’দেশ সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এবারের সফরকালে দু’দেশ চীন-ভিয়েতনাম অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, দু’দেশের পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা আরও জোরদার, নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও বাস্তব, সহযোগিতা আরও উন্নীত, জনমতের ভিত্তি আরও মজবুত, বহুপক্ষীয় সমঝোতা ও সমন্বয় আরও ঘনিষ্ঠ এবং মতভেদের সমাধান আরও কার্যকর হবে। 

রাজনীতি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীন দু’দেশের রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় জোরদার করার প্রস্তাব করে। চীন দৃঢ়ভাবে ভিয়েতনামের সামাজিক নিরাপত্তা ও জাতীয় ঐক্য সুরক্ষায় সমর্থন দেয়। চীন ভিয়েতনামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইচ্ছুক। চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যে কোনও বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করার কথা ঘোষণা করে ভিয়েতনাম। চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার ও কৌশলগত স্থানে রাখে ভিয়েতনাম। এটি দু’দেশের অভিন্ন কল্যাণের সমাজের রাজনৈতিক ভিত্তিকে জোরদার করে।

এছাড়াও আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা হলো দু’দেশের সম্পর্কের একটি সুবিধা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনামের বিশিষ্ট কৃষিপণ্য চীনা বাজারে রপ্তানি হয়েছে এবং চীনা ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

হ্যানয় লাইট রেল লাইন-২, হংইয়েন সোক সন জৈবশক্তি ও ফটোভোলটাইক শিল্পসহ ভিয়েতনামে ধারাবাহিক প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রকল্প স্থানীয় অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চীন টানা ১৬ বছর ধরে ভিয়েতনামের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারি রয়েছে। ভিয়েতনাম আসিয়ানে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। গত নভেম্বর পর্যন্ত দু’দেশের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

বর্তমানে চীন নিজস্ব শৈলীর আধুনিকায়ন বেগবান করছে এবং ভিয়েতনাম দেশের শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করছে। দু’দেশের সহযোগিতার সুযোগ আরও বাড়বে। দু’দেশ অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুললে তা কেবল দু’দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নীত করবে নয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এমন কি বিশ্বের জন্য আরও বেশি ইতিবাচক শক্তিও যোগাবে। (ছাই/রহমান)