ডিসেম্বর ১৪: বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীনের অর্থনৈতিক নীতির অভিমুখ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নয়টি দিক থেকে আগামী বছর অর্থনীতি কেমন করবে তা স্পষ্ট করা হয় সম্মেলনে। সম্মেলনে উচ্চ মানের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ, সঠিক ও সার্বিক নতুন উন্নয়নের ধারণা তুলে ধরা হয়। কার্যকর গুণগত উন্নয়ন ও যুক্তিসঙ্গত পরিমাণে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অর্থনীতি জোরদার করার কথা উল্লেখ করা হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনা অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ হার বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গোটা বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রধান প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, এ বছরে বিশ্বের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। চীন এখনও বিশ্ব অর্থনীতির বৃহত্তম চালিকাশক্তি।
২০২৪ সালে দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পটভূমিতে চীন অব্যাহতভাবে ইতিবাচক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও স্থিতিশীল মুদ্রা নীতি কার্যকর করবে। এবারের সম্মেলনে প্রত্যাশা, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান স্থিতিশীল করার ব্যবস্থাগুলো কার্যকর করার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মূল্যায়নের নিশ্চয়তাও।
প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বাড়ানো মানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকনির্দেশনা ও চালিকাশক্তি হিসেবে প্রগতিকে গ্রহণ করা। বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা-প্রকাশিত ‘২০২৩ সালের বিশ্ব উদ্ভাবন সূচক প্রতিবেদন’-এ বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি প্রযুক্তি ক্লাস্টারের মধ্যে ২৪টিই রয়েছে চীনে। বিশ্লেষণে বলা হয়, নতুন জ্বালানিসম্পদ, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা, উচ্চমানের উত্পাদন ও চিকিত্সাসহ অগ্রণী উত্পাদন-শিল্প ও আধুনিক পরিষেবা-শিল্প হলো বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চীনে বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ খাত।
আগামী বছর চীনের অর্থনৈতিক কর্মের নয়টি দায়িত্বের মধ্যে প্রথম হবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সাথে আধুনিক শিল্প ব্যবস্থার নির্মাণে নেতৃত্ব দেওয়া। সম্মেলনে বলা হয়, ব্যাপকভাবে নতুন শিল্পায়ন উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন দ্রুততর করা হবে এবং কিছু কিছু কৌশলগত নতুন শিল্প ও ভবিষ্যতের শিল্প সমন্বয় করা হবে। ভবিষ্যতে ঐতিহ্যগত শিল্পের প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি-শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য চীনে উন্নয়নের আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ বছরে টেসলা, জেপিমরগান চেজ, অ্যাপল ও কোয়ালকমের মতো অন্তঃদেশীয় কোম্পানির বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা নিবিড়ভাবে চীন সফর করেছেন। তাঁরা চীনের বিরাট বাজারের ওপর গুরুত্ব দেন। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়ের অবদান ছিল ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ। এবারের সম্মেলনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, ঐতিহ্যগত ভোগ স্থিতিশীল ও বৃদ্ধি এবং নতুন ধরনের ভোগ সৃষ্টি করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য চীনে বিনিয়োগের আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।
২০২৪ সাল হবে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং ‘চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনা’ কার্যকর করার গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। যদিও বর্তমানে চীনের অর্থনীতি কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তবে সুযোগ চ্যালেঞ্জের চেয়ে বেশি। এবারের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলন নতুন শুরু হিসাবে চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধি জোরদার ও ত্বরান্বিত করার সামর্থ্য আছে। এ প্রক্রিয়ায় চীনে বিনিয়োগের মূল্য আরও উন্নীত হবে। (ছাই/রহমান)