‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৪৮
2023-12-13 16:09:54

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।       

১.  কপ ২৮ সম্মেলনে তরুণ জলবায়ু কর্মীদের শক্তিশালী প্রভাব 

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কপ-২৮ সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের অনেক কর্মী উদ্ভাবনী প্রকল্প এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যোগ দেন। 

কপ-২৮ বা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের পক্ষগুলোর সম্মেলনের ২৮তম অধিবেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে, যেখানে সরকার, ব্যবসা এবং নাগরিক সমাজের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের  সমাধান খোঁজার জন্য জড়ো হন। 

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, আজকের তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার অংশ এবং প্রায় এক বিলিয়ন শিশু "অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে" রয়েছে।


তরুণদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে ইউনিসেফ এমন সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয় বলে জানান সংস্থাটির অংশীদারিত্বের উপ-নির্বাহী পরিচালক কিটি ভ্যান ডার হেইজডেন।

"ইউনিসেফের হয়ে আমরা তরুণদের একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করি, যেখানে তারা তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারে। এখানে প্রতিটি শিশু তার অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে। আমি মনে করি, কপ-২৮ এ এই মুহূর্তে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সক্ষম হওয়া উচিত।"  

 

ইউনিসেফের এই উপ-নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, চীন সরকারের সঙ্গে ইউনিসেফের খুব সক্রিয় সহযোগিতা রয়েছে। চীনে স্কুলে পড়াশোনা করছে ৩০ কোটি যুবক এবং শিশু। তাই ৩০ কোটি তরুণের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে সমন্বিতভাবে কী করা সম্ভব তা কল্পনার বাইরে বলে মন্তব্য  করেন তিনি। 

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তরুণদের নেতৃত্বে কিছু উদ্ভাবন দেখানো হয়েছে এই বছরের যুব প্যাভিলিয়নে।

চীন থেকে জলবায়ুর গ্লোবাল ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর সিয়ে কানইয়াং জানান, "জলবায়ু সমস্যাটি টেকসই উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। এটি আন্তঃ-প্রজন্মীয় সমতা সম্পর্কে, তরুণ প্রজন্ম ২০ বা ৩০ বছরের মধ্যে পরবর্তী প্রজন্মের নেতা হবে।  আমি এটা দেখে খুব খুশি যে তরুণরা এই প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় হচ্ছে, কারণ আমরা শুধু বিশ্বনেতাদের ডাকছি না, আমরা আসলে এই প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করার জন্য আমাদের গবেষণা ব্যবহার করছি।’

ইউনিসেফের প্রত্যাশা, এই বিষয়গুলোর সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ততা উষ্ণতা বৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ইউনিসেফ এবং গ্যালাপের একটি সাম্প্রতিক জরিপ দেখায়, ৫৫টি দেশে সমীক্ষা করা ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৮৫ শতাংশ যুবক তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শুনেছে, আর মাত্র ৫০ শতাংশ সঠিকভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানে।

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

সম্পাদক : হাশিম মাহমুদ

 

২. তরুণদের জন্য চাকরি নিয়ে প্রস্তুত চীনা কোম্পানি

 

তরুণদের জন্য ১০ হাজার চাকরি নিয়ে হাজির হয়েছে চীনের নামকরা সব কোম্পানি। লক্ষ্য প্রযুক্তিখাতে যেন রাজ করতে পারে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে প্রযুক্তিপ্রেমিদের উদ্বুদ্ধ করতেও নেয়া হয় নানা রকম আকর্ষণীয় উদ্যোগ। সম্প্রতি দেশটির চেচিয়াং প্রদেশের আয়োজন করা হয় কারিগরি দক্ষতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিযোগিতা যেখানে অংশ নেয় বিভিন্ন প্রদেশের প্রযুক্তিবিদরা।

পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার উপর বিশেষ নজর দিয়েছে চীন। এজন্য হরহামেশাই আকর্ষনীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে দেশটি, যেখানে লোভনীয় চাকরি নিয়ে হাজির হয় চীনের নামকরা হাজারো প্রতিষ্ঠান। 

 

সম্প্রতি পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে শুরু হয় ‘১৮তম চেংসিং কাপ ন্যাশনাল ইউথ ভোকেশনাল স্কিলস কম্পিটিশন’। এতে অংশ নেয় দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দক্ষ তরুণরা। 

আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তি সম্পর্কে কে কতটা ধারণা রাখে,  আর কাজের দক্ষতায় কার চেয়ে কে এগিয়ে তা সহজেই অনুমান করা যায় এসব প্রতিযোগিতায়। এর মাধ্যমে সেরা প্রযুক্তিবিদরা পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি এ শিল্পে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বিভিন্ন প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণরাও।

 

এবারের আয়োজনে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে ১০ হাজার চাকরি নিয়ে মেলায় উপস্থিত হয় এক হাজারের বেশি নামকরা কোম্পানি। তারা শুধু ভালো মানের চাকরিই দিচ্ছে না, একইসঙ্গে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে নেয়া হচ্ছে নানা  রকম উদ্যোগ।

প্রতিবেদক : হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

 

৩. চীনে ২০২৪ সালে প্রায় ১২ মিলিয়নে পৌঁছাবে স্নাতক ডিগ্রীধারীর সংখ্যা

 

এদিকে, চীনে ২০২৪ সালে স্নাতক ডিগ্রিধারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির শিক্ষামন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি এই তথ্য জানায়।

 

 

এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি। বরাবরের মতোই ডিগ্রিধারী এসব শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে দেশটি।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরইমধ্যে ২০২৪ সালে স্নাতক ডিগ্রীধারীদের জন্য কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের জন্য আরও চাকরির সুযোগ তৈরি করতে কর্পোরেট খাতকে আরও উৎসাহিত করছেন।

 

এ ছাড়া চীনজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্ন নিয়োগ ইভেন্টের আয়োজন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

সম্পাদক : হাশিম মাহমুদ

 

৪. বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করল হুয়াওয়েই

তথ্য-প্রযুক্তিগত জ্ঞানের শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের ক্ষমতায়ন করতে চায় চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েই। আর এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে ১০ম বারের মতো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার-২০২৩’ এর আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। সিডস ফর দ্য ফিউচারের গ্লোবাল রাউন্ডে ‘টেকফরগুড প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ৩ জন বাংলাদেশি প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করেছে হুয়াওয়েই বাংলাদেশ।

 

সম্প্রতি হুয়াওয়েই বাংলাদেশ একাডেমিতে (এইচবিএ) সিডস ফর দ্য ফিউচার-২০২৩ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার গ্লোবাল রাউন্ডের একজন চ্যাম্পিয়ন ও দুই রানার্স-আপকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বরিষা চৌধুরী চ্যাম্পিয়ন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির সুবেহ তারেক এবং বুয়েটের এম ই বিভাগের ফারসিয়া কাওসার চৌধুরী প্রথম ও দ্বিতীয় রানার-আপ হয়েছেন।

এছাড়া প্রতিযোগিতায় অশংগ্রহণকারী বাংলাদেশের ২০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০জনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।

এর আগে হুয়াওয়েই বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র তুলে ধরা হয়। এরপর বিজয়ী শিক্ষার্থীরা তাদের চীন সফরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা উপস্থিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন।

 

প্রতিযোগীদের প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে ২০ জন শিক্ষার্থীকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত করা হয়। আইসিটির (তথ্য প্রযুক্তি) শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজের বৃহত্তর উন্নয়ন কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সে বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশন ও সাক্ষাৎকার দেন। কনসেপ্ট ও উপস্থাপনার দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে ছয়জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করে হুয়াওয়েই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। এতে বিশেষে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুয়াওয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বোর্ড সদস্য লিচংশেং, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির (আইইউটি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং হুয়াওয়েইর অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা।

 

সিডস ফর দ্য ফিউচার’-এর অন্যতম লক্ষ্য হলো তরুণদের ক্ষমতায়ন করা যাতে তারা ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিতে পারে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেন।

 

১৫ বছর ধরে ডিজিটাল সেক্টরের জন্য প্রতিভা তৈরি করে আসছে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রোগ্রাম। বিশ্বব্যাপী ১৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হয়েছে। বাংলাদেশে হুয়াওয়েই একটি শক্তিশালী আইসিটি ইকোসিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করছে।

হুয়াওয়েইর এই ধরনের উদ্যোগগুলো দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করবে। পাশাপাশি তরুণরা তাদের দক্ষতা বাড়াতে এবং বাংলাদেশকে নতুন ডিজিটাল রূপান্তর যুগের দিকে নিয়ে যেতে সঠিক সুযোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী