সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের কিছু রাজনীতিবিদদের রচিত তথাকথিত "জোরপূর্বক শ্রম" প্রতারণা আবার উন্মোচিত হয়েছে। ব্রিটিশ ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এবং রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, জার্মানির ভক্সওয়াগেন ৫ ডিসেম্বর একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে একটি অডিট সংস্থার পরিচালিত স্বাধীন পর্যালোচনার পরে, ভক্সওয়াগেনের সিনচিয়াং কারখানায় "জোরপূর্বক শ্রম"-এর কোনও লক্ষণ বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালের মে থেকে, কিছু পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও সংস্থা ২০০৩ সালে জার্মান ভক্সওয়াগেন চীনের সিনচিয়াংয়ে নির্মিত কারখানা নিয়ে তথাকথিত "জোরপূর্বক শ্রম" প্রতারণার প্রচার করে আসছে। ভক্সওয়াগেন গ্রুপের পশ্চিমা জনমতের কাছে প্রমাণ করার জন্য জার্মান মানবাধিকার পরামর্শদাতা সংস্থা লোইনিংকে একটি স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের সংস্থা হিসাবে ঘটনা তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়।
লোইনিং কোম্পানির প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, অডিট দল ভক্সওয়াগেনের সিনচিয়াং কারখানায় ৪০ বারের মতো সাক্ষাত্কার ও তদন্ত পরিচালনা করেছে। অবশেষে তারা স্বীকার করতে হয়েছে যে, "'জোরপূর্বক শ্রম' এর কোনো লক্ষণ বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।" ভক্সওয়াগেন গ্রুপ তার বিবৃতিতে বলেছে যে, সিনচিয়াংয়ে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ সম্বলিত এমএসসিআই-এর প্রতিবেদন "তথ্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর"।
চীনের সাধারণ জনগণ এমন জরিপের ফলাফল দেখে অবাক হবে না। সিনচিয়াংকে তথাকথিত "জোরপূর্বক শ্রম" এবং মানবাধিকার ইস্যুতে অপবাদ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের কিছু রাজনীতিবিদদের তৈরি প্রতারণা। ২০১৮ সাল থেকে, যুক্তরাষ্ট্র এ অজুহাতে ৬০০টিরও বেশি চীনা কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে "নিষেধাজ্ঞার তালিকায়" অন্তর্ভুক্ত করেছে। যা চীনা কোম্পানির উন্নয়ন ও জনগণের কর্মসংস্থানের উপর বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের কিছু রাজনীতিবিদ তিনটি উদ্দেশ্যে সিনচিয়াংয়ের মানবাধিকার নিয়ে মিথ্যা কথা বলে। একটি হল সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করা। তারা সিনচিয়াংয়ের প্রধান শিল্পগুলিকে দমন করার জন্য সিনচিয়াংয়ের সাথে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক লেনদেনকারী বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলিকে "জোরপূর্বক শ্রম" নামে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার উদ্দেশ্য হল সিনচিয়াংয়ে জোরপূর্বক বেকারত্ব তৈরি করা, সিনচিয়াং-এর সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে তাদের শ্রম অধিকার ও উন্নয়নের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং অবশেষে একটি বদ্ধ, পশ্চাত্পদ ও দরিদ্র অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া।
দ্বিতীয়টি হলো, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন রোধ করা। যেগুলিকে "জোরপূর্বক শ্রম" হিসাবে চিহ্ন করা হয়েছে, সেগুলি কেবল সিনচিয়াংয়ের পণ্য নয়, বরং সিনচিয়াং-এর উন্নয়নের সাথে জড়িত সংস্থাগুলি এবং সিনচিয়াংয়ের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থাগুলিও রয়েছে। সেইসাথে ফটোভোলটাইকস, যোগাযোগ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে চীনের উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পগুলোও রয়েছে। তাই বোঝা যায় যে, যারা মিথ্যা ছড়াচ্ছে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক শিল্প চেইন থেকে চীনকে বাদ দেওয়া এবং চীনকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া।
তৃতীয়টি হল, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের আধিপত্যবাদী শৃঙ্খলা বজায় রাখা। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের কিছু রাজনীতিবিদ চীনকে দমন করার অজুহাত হিসাবে মানবাধিকার ব্যবহার করে। তারা চীনের সিনচিয়াং মুসলমানদের প্রতি বিশ্বের মুসলমানদের সহানুভূতিকে ঘৃণা জাগিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার করে। তাদের মৌলিক উদ্দেশ্য হল যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের আধিপত্য বজায় রাখা।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের মিথ্যাচারের কারণে সিনচিয়াংয়ের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির ভালো পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না। ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে, ২৪০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক সিনচিয়াং ভ্রমণ করেছে। যা ২০১৯ সালের তুলনায় বেশি। দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা সিনচিয়াং-এর সৌন্দর্য অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের নিজস্ব ভ্রমণ ভিডিওগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। তারা নিজেই সিনচিয়াং-এর উন্নয়নের প্রমাণ। সিনচিয়াং জাতিসংঘের কর্মকর্তা, চীনে বিদেশি দূত এবং সংবাদমাধ্যম-সহ ১৫০টিরও বেশি গোষ্ঠীকে সফর করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আগত অতিথিরা নিজের চোখে সিনচিয়াংয়ের প্রকৃত অবস্থা দেখেছেন এবং সিনচিয়াং-এর সব জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ জীবনযাত্রা ও উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছেন।
যারা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তাদের কাছে গুজব গুরুত্বহীন। পশ্চিমাদের প্রচারিত সিনচিয়াংয়ে তথাকথিত "জোরপূর্বক শ্রম" স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন অধিকারের ক্ষেত্রে বড় বাধা। আপনি যদি সত্যিই সিনচিয়াং নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে অনুগ্রহ করে সিনচিয়াং-এর উন্নয়নকে সমর্থন করুন এবং গুজবে বিশ্বাস করবেন না।
(ইয়াং/তৌহিদ/ছাই)