* তরল অক্সিজেন-মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ রকেট দিয়ে চীনের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ
* দুবাইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কনসেন্ট্রেটেড সোলার পাওয়ার তৈরি করল চীনা প্রতিষ্ঠান
* বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর উল্লম্ব খামার তৈরি করছে চীন
তরল অক্সিজেন-মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ রকেট দিয়ে চীনের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ
প্রথমবারের মতো তরল অক্সিজেন ও মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ মাঝারি আকারের একটি রকেট দিয়ে তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠিয়েছে চীন। এ রকেটটি তৈরি করেছে দেশটির প্রাইভেট স্পেস কোম্পানি ল্যান্ডস্পেস। উপগ্রহগুলো কক্ষপথে প্রেরণের মাধ্যমে মূলত রকেটের সক্ষমতা ও গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। অন্যদিকে একই সিরিজের পুনঃব্যবহারযোগ্য চীনের প্রথম স্টেইনলেস স্টিলের আরেকটি ক্যারিয়ার রকেট তৈরি করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি, যা ২০২৫ সালে উৎক্ষেপণ করা হবে।
সম্প্রতি উত্তর-পশ্চিম চীনের চিউছুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চুছুয়ে-২ ওয়াই-৩ ক্যারিয়ার রকেট। এই রকেটটির বিশেষত্ব হলো এটি তরল অক্সিজেন ও মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ চীনের প্রথম মাঝারি আকারের রকেট।
এটি পৃথিবী থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে সান-সিঙ্ক্রোনাস কক্ষপথে ১ হাজার ৫০০ কিলোগ্রাম ওজন বয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। তবে এই রকেটের নতুন সংস্করণটি ৪ হাজার কিলোগ্রাম ওজন বহন করতে সক্ষম, যা লো-আর্থ অরবিট উপগ্রহ স্থাপন এবং মহাকাশযান উৎক্ষেপণের কাজে ব্যবহৃত হবে।
চুছুয়ে-২ ক্যারিয়ার রকেটের কমান্ডার এবং ডেপুটি চিফ ডিজাইনার তাই চেং জানান, চুছুয়ে-২ ওয়াই-৩ ক্যারিয়ার রকেটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এ রকেটটির ডিজাইনের সঠিকতা এবং ধারাবাহিক উৎক্ষেপণের সময় বিভিন্ন সরঞ্জাম বহনের পাশাপাশি আমাদের মান নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতাও যাচাই করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ১২ জুলাই তরল অক্সিজেন-মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ চুছুয়ে-২ ওয়াই-২ ক্যারিয়ার রকেটের সফল উৎক্ষেপণ করে দেশটি।
তরল অক্সিজেন ও মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ রকেটের পরিচালনা ব্যয় কম হওয়ার এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্যতা থাকার কারণে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে উল্লেখ করে তাই চেং আরও জানান, ভবিষ্যতে মহাকাশে আরও অধিক সংখ্যায় মিশন পরিচালনার জন্য স্বল্প ব্যয়ের বাণিজ্যিক ক্যারিয়ার রকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের রকেটের পুনঃব্যবহারযোগ্যতা থাকায় এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।
এদিকে তরল অক্সিজেন ও মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ চীনের প্রথম স্টেইনলেস স্টিলের পুনঃব্যবহারযোগ্য ক্যারিয়ার রকেট চুছুয়ে-৩ উন্মোচন করেছে ল্যান্ডস্পেস।
স্পেস কোম্পানি ল্যান্ডস্পেসের সিইও চাং ছ্যাংউ জানান, চুছুয়ে-৩ ক্যারিয়ার রকেট হলো একটি বড় আকারের তরল অক্সিজেন ও মিথেন জ্বালানিসমৃদ্ধ পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট। এটি চীনের প্রথম স্টেইনলেস স্টিলে তৈরি রকেট। আগের সিরিজগুলোর থেকে এতে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। চীন রকেট উপাদানে যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছে।
চুছুয়ে-৩ ক্যারিয়ার রকেটটির ব্যাস ৪ দশমিক ৫ মিটার, দৈর্ঘ্য ৭৬ দশমিক ৬ মিটার এবং এটি মহাকাশে ২১ দশমিক ৩ টন ওজন বয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। এতে থিয়ানছু মিথেন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। রকেটটিতে প্রথম পর্যায়ে নয়টি থিয়ানছু-১২বি ইঞ্জিন থাকবে, যা ২০ বার পর্যন্ত পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি থিয়ানছু-১৫বি ভ্যাকুয়াম ইঞ্জিন যুক্ত করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে চুছুয়ে-৩ রকেটের উৎক্ষেপণ করা হবে।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান
দুবাইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কনসেন্ট্রেটেড সোলার পাওয়ার তৈরি করল চীনা প্রতিষ্ঠান
সভ্যতা গড়ার নেশায় মানুষ বদলে দিয়েছে প্রকৃতিকে, মানুষের কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, বদলে যাচ্ছে জলবায়ু। আর তাতে মানুষের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রই হুমকির মুখে পড়ছে। এরকম এক অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে চলছে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ বা কপ-২৮ সম্মেলন। এতে পক্ষগুলো জোর দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে। এতে পিছিয়ে নেই চীন। নিজ দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশবান্ধ জ্বালানিতে নির্ভর হতে সাহায্য করছে। সম্প্রতি চীনা প্রতিষ্ঠানের তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম কনসেন্ট্রেটেড সোলার পাওয়ার (সিএসপি) প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)।
৯৫০ মেগাওয়াটের বিশ্বের বৃহত্তম কনসেন্ট্রেটেড সোলার পাওয়ার (সিএসপি) প্রকল্পটি ৪৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে একটি ১০০ মেগা ওয়াটের একটি টাওয়ার, ৬০০ মেগা ওয়াটের একটি প্যারাবোলিক ট্রফ এবং ২৫০ মেগা ওয়াটের একটি ফটোভোলটাইক সোলার প্যানেল রয়েছে। সোলার প্যানেলের শেষ ইউনিটটি এ মাসের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়।
সিএসপি টাওয়ারটি ২৬০ মিটারের বেশি লম্বা। এর চারপাশে ঘিরে রয়েছে লক্ষ লক্ষ রিফ্লেকটর। এ রিফ্লেক্টরগুলো সৌর টাওয়ারের একেবারের চূড়ায় থাকা রিসিভারে সূর্যরশ্মি একযোগে পাঠায়। এর ফলে টাওয়ারের তাপমাত্রা ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গিয়ে পৌছায়। এরপর টাওয়ারে থাকা বাষ্প টারবাইন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪০০ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা।
প্রকল্পটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শাংহাই ইলেকট্রিকের চীনা ব্যবস্থাপক জানান, বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত ও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সট: ১
<চাও হুই, দুবাই সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার, সাংহাই ইলেকট্রিক>
<পার্কটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় চার কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। বর্তমানে আমরা এ প্রকল্প নির্মাণের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।>
এ প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে উৎপাদন শুরু করলে এটি ৩ লাখ ২০ হাজার পরিবারে মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রতি বছর ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস হবে। এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থিতিশীলতা। এটি গ্রিডের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান
বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর উল্লম্ব খামার তৈরি করছে চীন
বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্যের যোগান দিতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বকৃষি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে আসা। এটি মোকাবিলায় বিশ্বে প্রথমবারের মতো ২০ ধাপের ট্রেতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত উলম্ব খামার তৈরি করেছে চীন।
উলম্ব চাষ পদ্ধতিতে বিস্তীর্ণ মাঠের পরিবর্তে ফসল উৎপাদনে উলম্বভাবে কোনও ট্রেতে শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করা হয়। এই উলম্ব চাষাবাদকে কৃষির ভবিষ্যৎ বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু। এ শহরেই শুরু করা হয়েছে দেশটির প্রথম ‘স্বায়ত্তশাসিত সবজি কারখানা’ বা অটোনোমাস ভেজি ফ্যাক্টরি। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত উলম্ব খামার। মানববিহীন এ খামারের মধ্যে দিয়ে ভার্টিকাল বা উলম্ব চাষে নতুন অগ্রগতি অর্জন করল চীন।
চীনের নতুন এ উলম্ব খামারে ২০টি রোবটিক ট্রে রয়েছে, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ট্রেতে চাষের রেকর্ড। কৃষি চাষাবাদের যুগোপযোগী সব প্রযুক্তি এতে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ফার্মটি তৈরি করেছে চাইনিজ একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের ইন্সটিটিউট অব আরবান এগ্রিকালচার।
অন্যান্য সাধারণ উলম্ব খামারগুলোর মতো এই খামারটিও তৈরি করা হয়েছে দালানের ভেতরে। চমৎকার এ উলম্ব খামার দেখে মনে হয়, সবজিগুলো যেন একটি ২০ তলা অ্যাপার্টমেন্টে বেড়ে উঠছে।
উলম্ব খামার মূলত জমির ব্যবহার কমিয়ে আনে। গতানুগতিক আনুভূমিক কৃষি খামারগুলোতে প্রায় সব উদ্ভিদ সমান পরিমাণে সূর্যালোক ও পানি পেলেও উলম্ব খামারগুলোর ক্ষেত্রে এটি একটি সমস্যা।
ইন্সটিটিউট অব আরবান এগ্রিকালচারের একটি দল এই সমস্যার সমাধান করেছে। ছেংতুর এই উলম্ব খামারটিতে রোবট ব্যবহার করেছেন তারা এবং মাত্র ৩৫ দিনের মধ্যে লেটুস জন্মাতে এবং সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এ খামারটিতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যা লেটুস গাছগুলোতে পর্যাপ্ত আলো ও সার প্রয়োগ করতে পারে।
ইন্সটিটিউট অব আরবান এগ্রিকালচারের গবেষক ওয়াং সেন জানান, উলম্ব এ খামারে উদ্ভিদগুলোর জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে লাল, নীল, হলুদ, আল্ট্রাভায়োলেট ও ইনফ্রারেড আলো বিভিন্ন পরিমাণে একত্রিত করে প্রয়োগ করা হয়। বাহাত্তর ধরনের ফসলের জন্য ১ হাজার ৩০০টি আলোকমিশ্রণের একটি ডেটাবেস তৈরি করেছি। ল্যাব-উৎপাদিত এসব ফসল এবং ঐতিহ্যবাহী খামারের ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনও পার্থক্য পাওয়া যায়নি।
উলম্ব কৃষির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো সর্বনিম্ন জমি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উৎপাদন। এই ধরনের চাষের পদ্ধতি ফসলকে সারা বছর বাড়তে দেয়। ইনডোর বা ঘরের ভেতরের এ খামারগুলো আশেপাশের পরিবেশ যেমনই হোক দ্রুত বেড়ে উঠে। এর ফলে এ ধরনের চাষাবাদ শহুরে, বর্জ্যভূমি ও মরুভূমির জন্য আদর্শ।
|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান
প্রিয় শ্রোতা, এই ছিলো আমাদের এবারের বিজ্ঞানবিশ্ব। অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের, তা আমাদের জানাতে পারেন। এতোক্ষণ বিজ্ঞানবিশ্বের পুরো আয়োজন জুড়ে ছিলাম আমি শুভ আনোয়ার। নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী