সৌদি আরবে চীনা কর্মী তেং কুওশ্যুয়ের গল্প
2023-12-11 15:02:37

সৌদি আরব চীনের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। দেশটির কথা উল্লেখ করলে, মানুষ সেখানকার ‘তেল রাজ্যের’ অনন্য তেল ও গ্যাস সম্পদ, ইসলাম ধর্মের উৎসস্থান হিসাবে সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং মরুভূমির সূর্যাস্তের মহিমার কথা ভাবেন।

যখন চীন ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনে চূড়ায় পৌঁছানো এবং ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি করে, সৌদি আরবও ইতিবাচকভাবে জ্বালানি রূপান্তর, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর উপায় অন্বেষণ করছে। চীন, সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। নিম্ন-কার্বন জ্বালানি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর সৌদি স্মার্ট মিটার প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, ইলেক্ট্রিক পাওয়ারের নির্মাতা সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি এলাকায় ৫০ লাখ স্মার্ট মিটার এবং  সাপোর্টিং হেড-এন্ড সিস্টেম ও টার্মিনাল ইউনিট স্থাপন করবে। একই সঙ্গে তারা প্রযুক্তিগত পরিষেবা, সরঞ্জামের একীকরণ, ইনস্টলেশন ও ডিবাগিং, অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণসহ সার্বিক পরিষেবা প্রদান করবে। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে চীনের বিদ্যুৎ তথ্য অধিগ্রহণ ব্যবস্থার ব্যবসা প্রথমবারের মতো বিদেশি বাজারে প্রবেশ করে।

২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রযুক্তিবিদ হিসাবে তেং কুওশ্যুয়ে সৌদি প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হন। এবং অল্পদিনের মধ্যেই তিনি জীবনের প্রথম সৌদি যাত্রায় যান।

সৌদির স্মার্ট মিটার প্রকল্পে তেং কুওশ্যুয়ে ও তাঁর কর্মীরা বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ছিলেন। প্রায় ৩শ’ দিনের মধ্যে তাদের সব কর্তব্য সম্পন্ন করার কথা। প্রকল্পে সকল সদস্যকে “বিশেষ বাহিনী”র মতো সবসময় সময়ের সঙ্গে দৌঁড়াতে হয়।

কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথার বিষয় কাজে জরুরি পরিস্থিতি কিংবা মহা বিপদ নয়; বরং মাথা ব্যথার বিষয় ছিল ভাষা না জানা সম্পর্কিত সমস্যা। প্রযুক্তিগুলোর রিজার্ভেশন ছাড়া সৌদি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং চীনা বিদ্যুতের সরঞ্জামের ফাংশন নিশ্চিত করার জন্য দিনেরবেলায় কাজ করতেন এবং রাতের সময় ইংরেজি শিখতেন তাঁরা। তেং কুওশ্যুয়ে সম্পূর্ণ ইংরেজি প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করেন, সৌদি কর্মীদের পরবর্তী স্বতন্ত্র প্রশিক্ষণ চালানোর জন্য একটি রেফারেন্স প্রদান করেন।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার পর ইহাব মুহাম্মদ ইউনিস আন্তরিকভাবে বলেন, প্রকল্প নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আমি চীনের স্টেট গ্রিডের কর্মীদের পরিশ্রমী, দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের উৎকৃষ্ট মান দেখেছি। তারা বুদ্ধি ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে চীন-সৌদি মৈত্রীর নতুন অধ্যায় লিখেছেন। “চীনা গতি, চীনা মান ও চীনা চেতনা”য় মানসম্পন্নভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন এবং “স্টেট গ্রিড বুদ্ধি” দিয়ে স্থানীয় জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করেন।

তেং কুওশ্যুয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান অঞ্চলের স্মার্ট মিটার প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন। দেশটির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মরুভূমির জলবায়ুর সঙ্গে উপযোগী না হওয়া ছাড়াও ইয়েমেনের আশপাশে থাকার কারণে সেখানকার সংঘাতময় পরিস্থিতি মাঝেমাঝে প্রকল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলে। এক সময় হুতি সশস্ত্র বাহিনী একটি ট্রান্সফরমার সাবস্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটায়, প্রকল্পে অধিগ্রহণ হার ৮১ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে যায়।

কিন্তু ২০২১ সালের ১ অক্টোবর প্রকল্পটি সাফল্যের সঙ্গে চালু হয়। সৌদি বিদ্যুৎ কোম্পানির দক্ষিণাঞ্চল প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি সাইয়িদ চীনা নির্মাতাদের সকল সমস্যা আলিঙ্গনের চেতনা এবং একসাথে কাজ করার শক্তি দেখে অভিভূত হন। তিনি “চীনা বন্ধুদের বিশ্বাসযোগ্যতার” প্রশংসা করেন।

সাফল্যের সঙ্গে সৌদি স্মার্ট মিটার প্রকল্প হস্তান্তর করার পর তেং কুওশ্যুয়ে আসিয়ানে উন্নত বুদ্ধিমান মিটারিং সিস্টেম প্রকল্পের নির্মাণে অংশ নিতে যাবেন। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে চীন-আসিয়ান মৈত্রী এবং “বেল্ট অ্যান্ড রোড” নির্মাণের জন্য অবদান রাখবেন। (প্রেমা/রহমান)