চীনা অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে
2023-12-11 14:51:18

ডিসেম্বর ১১: অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও  ভবিষ্যতের পরিকল্পনার জন্য বছরের শেষ সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালে চীনা অর্থনীতি বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পর বাস্তব সাফল্য অর্জন করেছে। প্রামাণিক সংস্থার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, এ বছর চীনের উদ্ভাবন সূচক বিশ্বের তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে, যা শীর্ষ দশে উন্নীত একমাত্র উন্নয়নশীল দেশ। চীনের উন্মুক্তকরণের সূচক ২০১২ সালের ০.১৭০৭ থেকে ০.৭৫১৭-এ উঠে যায়; যা ৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়াম ও আপেলসহ বৃহদাকার শিল্প এই বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনা বাজারে কর্মক্ষমতা সূচকের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। জার্মান বৃহদাকার রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান বিএএসএফএসই জানায়, চীনের উত্পাদন ছাড়া বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক উৎপাদন কমে যাবে।

সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ২০২৩ বিশ্ব বাণিজ্যের বৃদ্ধির প্রত্যাশিত লক্ষ্য কমিয়েছে। তবে গত নভেম্বরের সংস্থাটির প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, চীনা আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.২ শতাংশ বেশি হয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা জানায়, বিশ্বব্যাপী সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি চীনে উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত বছরে জ্বালানি সম্পদ রূপান্তর সামগ্রিক অর্থনৈতিক রূপান্তর জোরদার করেছে।  

এ বছরে চীনের নবায়নযোগ্য শক্তির ইনস্টল ক্ষমতা কয়লা শক্তির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। এ বছরের প্রথমার্ধে ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান নবায়নযোগ্য সম্পদ প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যা চীনের স্থাপন করা ক্ষমতার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি সম্পদের উত্স হয়ে উঠেছে।

বর্তমান বিশ্বের নবায়নযোগ্য সম্পদ, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ১.১ ট্রিলিয়ান মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চীনের পরিমাণ প্রায় সারা বিশ্বের অর্ধেক। চীন হলো জ্বালানি সম্পদ রূপান্তরের ক্ষেত্রে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। চীনের পরিবেশগত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট আবেদনের মোট সংখ্যা বিশ্বের মোট ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। চীন হলো বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইতিবাচক দেশ। পাশাপাশি সবুজ উন্নয়ন দ্বারা চালিত কৌশলগত উদীয়মান শিল্প চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের শক্তিশালী প্রবণতা জোরদার করেছে।

বর্তমান চীনের কৌশলগত নতুন শিল্পের বৃদ্ধি মূল জিডিপির ১৩ শতাংশেরও বেশি। চীনা অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে আরো বেশি চালিকাশক্তি সৃষ্ট কেছে।

প্রযুক্তির উদ্ভাবন, বিশেষ করে ডিজিটাল রূপান্তর সবুজ উন্নয়নের ভিত্তি, চালিকাশক্তি ও নিশ্চয়তায় পরিণত হচ্ছে। পালাক্রমে সবুজ লক্ষ্য ডিজিটাল ক্ষেত্রে মান উন্নয়ন ও আপগ্রেড করার দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

সম্প্রতি জাপানি নিক্কি এশিয়া’র প্রকাশিত ‘চীনের নেতৃস্থানীয় অবস্থান জোরদার হয়েছে, দুর্বল না’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, সবুজ প্রযুক্তিগত পণ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়ায় চীনা অভ্যন্তরীণ সরবরাহ চেইন দ্রুত উন্নত হচ্ছে। যদিও সামগ্রিকভাবে বিদেশি চালান কমছে, তবে চীনা পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের রপ্তানি পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দু’নেতা চীন সফর করেছেন। চীন ইইউ’র সঙ্গে যোগাযোগে ডিজিটাল ও সবুজ-নবায়ন হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইইউ’র নেতারা বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমানের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চালানোর কথা উল্লেখ করেছেন। আসলে ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এই দীর্ঘমেয়াদী স্থবিরতা ভাঙার সুযোগ দিয়েছে চীন। যেমন ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানগুলো ৫জি, সবুজ জৈব জ্বালানি ও মহাকাশ খাতে চীনের সঙ্গে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

বস্তুত, চীনা ডিজিটাল অর্থনৈতিক শিল্প ও সবুজ শিল্প ভবিষ্যতে সারা বিশ্ব যৌথভাবে উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।

(ছাই/তৌহিদ)