চীনের নতুন ভিসা-মুক্ত নীতি প্রসঙ্গ
2023-12-11 11:21:04

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ছয়টি দেশের সাধারণ পাসপোর্টধারীদের জন্য একতরফা ভিসা-মুক্ত নীতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও মালয়েশিয়া। ইউরোপের সর্বস্তরের মানুষ এই সংবাদটিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বিশ্বাস করে যে, চীন এর মাধ্যমে আরও উন্মুক্ত মনোভাব দেখিয়েছে।

 

নতুন নীতিটি ২০২৩ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই সময়পর্বে ছয়টি দেশের লোকজন চীনা ভূখণ্ডে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে এবং ব্যবসা, অবসর বা ট্রানজিটের জন্য ১৫ দিন পর্যন্ত থাকার অনুমতি পাবেন।

 

চীন সিঙ্গাপুর ও ব্রুনাইয়ের নাগরিকদের জন্য ১৫ দিনের ভিসা-মুক্ত নীতি পুনরায় চালু করার পর এই পদক্ষেপটি নতুন। এই গ্রীষ্মে আগত ভ্রমণকারীদের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষার বাধ্যবাধকতাও  তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের সরকার।

 

এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত বহির্বিশ্বের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করার চীনের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার প্রতিফলন। এই পদক্ষেপটি চীনে ভ্রমণকে শুধু সহজই করবে না, বরং ভ্রমণকারীদের অর্থব্যয় কমিয়ে দেবে এবং চীন ও প্রাসঙ্গিক দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক একীকরণকেও উত্সাহিত করবে। পাশাপাশি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করবে এবং আন্তঃসীমান্ত মিথস্ক্রিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।

 

নতুন নীতির লক্ষ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতি। এর মাধ্যমে চীনের সাথে এই ব্লকের সম্পর্ক শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

নতুন ভিসামুক্ত নীতি বিদেশী বেসরকারি বিনিয়োগকে উদ্দীপিত করতে এবং চীনে ব্যবসায়িক সফর বাড়াতে সাহায্য করবে। বিদেশী সংস্থার সিনিয়র ম্যানেজাররা স্বল্প নোটিশে সদর দফতর থেকে ভ্রমণ করতে পারবেন।

 

আরও সুবিধাজনক ভ্রমণ চীন ও সংশ্লিষ্ট ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে। এই আদান-প্রদান এবং বিভিন্ন ভাষার পরিবেশের এক্সপোজার একে অপরের সংস্কৃতিকে বোঝার সুযোগ বাড়াবে, যার ফলে পারস্পরিক সহনশীলতা, সম্মান ও বৈচিত্র্যের উপলব্ধি বৃদ্ধি পাবে।

 

ভিসা-মুক্ত নীতি ঐতিহ্যগতভাবে আরও পর্যটককে আকর্ষণ করবে। আসন্ন বড়দিনের ছুটির সময়কে সাধারণত একটি শীর্ষ পর্যটন মৌসুম এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য চীন ভ্রমণের সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য সুবিধা বয়ে আনবে এবং ভোগকে উদ্দীপিত করবে। পাশাপাশি, নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নীতিটি বিদেশী পর্যটকদের জন্য খুব ভালো খবর যারা চীন ভ্রমণ করতে চান।

 

ইউরোনিউজের মতে, এই নতুন নীতি একটি ইতিবাচক সংকেত প্রকাশ করে যে, চীন বাইরের বিশ্বের কাছে আরও উন্মুক্ত হবে এবং চীন ভ্রমণে আরও পর্যটকদের স্বাগত জানাবে।

 

প্রতিবেদন অনুসারে, সাংহাই ইউরোপীয়দের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য; বেইজিং, কুয়াংচৌ এবং শেনচেনও। হাইনানের উপকূলীয় শহর হাইখৌ এবং সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু  উদীয়মান পর্যটন গন্তব্য।

 

জানা গেছে, ২০২৩ সাল থেকে, চীন পর্যায়ক্রমে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের উন্নয়নকে অনুকূল করার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা চালু করেছে।

 

নতুন ভিসা-মুক্ত নীতি সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। চীনে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া ফ্লোর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন: "এই সিদ্ধান্ত জার্মান নাগরিকদের চীন ভ্রমণে অভূতপূর্ব মাত্রায় সুবিধা দেবে। এটি একটি আনন্দের মুহূর্ত।"

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলোনাও বলেছেন: "আমার সহকর্মী ওয়াং ই আমার সফর উপলক্ষ্যে একটি দুর্দান্ত খবর ঘোষণা করেছেন! চীনে ভ্রমণকারী ফরাসিরা বিনা ভিসায় থাকতে পারবেন।"

 

জার্মান চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্সের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান ভলকার টেলার এই সংবাদটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসাবে প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, "এ সিদ্ধান্ত পর্যটনকে উন্নত করতে পারে এবং জার্মান ও চীনা উদ্যোগ এবং কর্মী বিনিময়ের মধ্যে বিনিময়কে উন্নত করতে পারে।"

 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, চীনের ইউরোপীয় চেম্বার অফ কমার্স বলেছে যে, এই পদক্ষেপটি ব্যবসায়িক আস্থা বাড়াতে সহায়তা করবে। (জিনিয়া/আলিম)