সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে সহযোগিতা জোরদার করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি জাং চুন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক মুক্ত বিতর্কে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ আহ্বান জানান তিনি।
জাং চুন বলেন, বর্তমানে সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধের ধারা জটিল হচ্ছে এবং অপরাধ দমন পেশাও কঠিন হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষতি ও প্রভাবও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অধিক গুরুত্ব দিয়ে যৌথ, সার্বিক, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তা ধারণায় অবিচল থাকা, ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করা, যৌথভাবে অপরাধ দমন করা এবং অভিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর “জাতিসংঘ সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন কনভেনশন” কার্যকর হওয়ার ২০তম বার্ষিকী। গত ২০ বছর ধরে এ কনভেনশনের প্রভাব ও ক্ষমতা বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এ কনভেনশন গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের উচিত এ কনভেনশনের ভিত্তিতে আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা। জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) মতো পেশাদার সংস্থা সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে ইতিবাচক অবদান রেখেছে। চীন এর প্রশংসা করে এবং ইউএনওডিসি ও ইন্টারপোলের পেশাদারী প্রাধান্যকে লালন করে, জাতিসংঘ কাউন্টার-টেররিজম কার্যালয় (ইউএনওসিটি) ও নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করে এবং সদস্য দেশগুলো সংগঠিত আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে সমর্থন দেবে বলে প্রত্যাশা করে।
জাং চুন বলেন, নতুন প্রযুক্তির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন জালিয়াতি, জুয়া ও অবৈধ বেসরকারি ব্যাংকের আন্তঃদেশীয় অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নেটওয়ার্ক তৈরি করার মাধ্যমে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধের পরিসর সংকুচিত করা দরকার। বিভিন্ন দেশের উচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনের স্বতন্ত্র ঘটনা বিষয়ে সমন্বয় জোরদার করা, সাক্ষ্য ও গোয়েন্দা শেয়ার করা, প্রত্যর্পণ ও আইন সহায়তা প্রদান করা, ফেরারীদের পাকড়াও করা এবং চুরির মালামাল উদ্ধারে সহযোগিতা চালানোর মাধ্যমে অপরাধী ও অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ লুকানোর সুযোগ বন্ধ করা।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিভিন্ন দেশ পেশাদার, উচ্চ কার্যকর ও শক্তিশালী আইন প্রয়োগকারী দল গঠন করলে অপরাধের বিরুদ্ধে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে। জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক অংশীদারদের উচিত সদস্য দেশগুলোর স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে তাদের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সীমান্ত প্রতিরক্ষা, কাস্টমস, মাদক প্রয়োগ, আইন ও বিচারসহ বিভিন্ন দিকের আইন প্রয়োগ ক্ষমতা বাড়ানো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন-জাতিসংঘ শান্তি ও উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে চীন ইউএনওডিসিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে সমর্থন দিয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর আইন প্রয়োগ সামর্থ্য উন্নত করার ক্ষেত্রে সাহায্য দিয়েছে। চীন ভবিষ্যতেও দেশগুলোকে যথাসাধ্য সাহায্য দিয়ে যাবে।
জাং চিন বলেন, সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ কোনও দেশের স্বার্থের সঙ্গেই সংগিতপূর্ণ নয়। এটা দমন করার দায়িত্ব পালন করতে হবে প্রত্যেক দেশকে। চীন অব্যাহতভাবে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে হাতে হাত রেখে কার্যকরভাবে জটিল নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মাধ্যমে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। (প্রেমা/রহমান)