চলতি বাণিজ্যের ৪৭তম পর্বে থাকছে:
১. উৎকৃষ্ট তুলায় বিশ্বের নজর কেড়েছে সিনচিয়াং,গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা
২. চীনা সরবরাহ চেইনে মুগ্ধ তুর্কি কোম্পানি
৩. চীনের সঙ্গে কৃষি পণ্যের রমরমা বাণিজ্য ব্রাজিলের
উৎকৃষ্ট তুলায় বিশ্বের নজর কেড়েছে সিনচিয়াং,গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্বের উৎকৃষ্ট মানের তুলার চাষ হয় চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে। আবার সারা বিশ্বের মোট উৎপাদিত তুলার ৩০ শতাংশই হয় এখানে। উৎপাদিত তুলা বিভিন্ন দেশে রফতানির পাশাপাশি এর উপর ভিত্তি করে সিনচিয়াংয়ে গড়ে উঠেছে বহু সুতা ও পোশাক কারখানা। তাইতো আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে তুলা উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি ভালো দাম পাওয়ায় সুদিন ফিরেছে চাষীদের।
বিস্তৃত জমিতে সাদা শুভ্র ফুলের মতো ফসল তোলার কাজ চলছে। আর এ দৃশ্য দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে এটি চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। কেননা, চীনে সবচেয়ে বেশি জমিতে তুলা চাষ হয় এই সিনচিয়াংয়ে।
দেখতে ফুলের মতো হলেও তুলা ফসলটির অর্থমূল্য অনেক। তাইতো সারা বিশ্বে তুলা উৎপাদন ও রফতানির দিক দিয়ে ৫ম স্থানে আছে সিনচিয়াং। আর টিম সিএমজি বাংলার অবস্থান তুলা উৎপাদনে সিনচিয়াংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা আকসু।
এই অঞ্চলের তুলা মানে ভালো হওয়ার পেছনের কারণ আবহাওয়া। বিশেষ করে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো, শুষ্ক বাতাস ও দিন-রাতের তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্যের কারণে এখানকার উৎপাদিত তুলা দেখতে ও গুণে-মানে অন্যরকম। তবে এক সময় সেচদেওয়ার কাজ কঠিন থাকলেও এখন অনেকটাই দিন পাল্টেছে।
বর্তমানে তুলা চাষে ব্যবহার করা হয় উন্নত মানের প্রযুক্তি। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পরিমাণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি চীনের সাউথওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ল’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, সিনচিয়াং ইউগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের তুলা উৎপাদন এটাই প্রমাণ করে যে, এই অঞ্চলের তুলা চাষ বর্তমানে অত্যাধুনিক যন্ত্রনির্ভর হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, টানা ২ সপ্তাহ সিনচিয়াংয়ে অবস্থান করে অন্তত ৭০জন তুলা চাষীর সঙ্গে কথা বলে এবং ৫টি স্থানীয় সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এমন মতামত দেয়। তাইতো এখানে বেড়েছে তুলা উৎপাদনের পরিমাণও।
এখানকার তুলার উপর ভিত্তি করেই সিনচিয়াংয়ে গড়ে উঠেছে বহু সংখ্যক সুতার কারখানা। বর্তমানে সিনচিয়াংয়ের অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তিও রচনা করেছে এসব সুতার কারখানা। পাশাপাশি সিনচিয়াং থেকে বিভিন্ন দেশে রফতানি হওয়া পণ্যের মধ্যে সুতা অন্যতম।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে সিনচিয়াংয়ে সুতা উৎপাদন হয় ৫ দশমিক ১৬ মিলিয়ন টন যা চীনে মোট উৎপাদিত তুলার প্রায় ৯০ শতাংশ।
ভিনদেশে চীন:
চীনা সরবরাহ চেইনে মুগ্ধ তুর্কি কোম্পানি
সাজিদ রাজু, চীনা আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা আকর্ষণ করেছে তুরস্কের ব্যবসায়ীদের। তুরস্কের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন ঝুঁকছে চীনা মডেলের সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিজেদের ব্যবসায় কাজে লাগাতে। বিশেষ করে ব্লকচেইন, সরবরাহ চেইনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নানা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী তুরস্কের ব্যবসায়ীরা।
সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে চীনের ব্লকচেইন ও সরবরাহ চেইনের আধুনিকায়ন। এরইমধ্যে চীনা পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও লক্ষ্য করা গেছে।
চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন ডিজিটাল রূপান্তর ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তাই নজর কেড়েছে এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী দেশ তুরস্কের ব্যবসায়ীদের। চীনা সরবরাহ ব্যবস্থার সক্ষমতাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা বাণিজ্যে কাজে লাগানোর ব্যাপারে বিশ্বাসী তারা।
খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী এমনই একটি তুর্কি কোম্পানি ট্যাব ফুড ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কোরহান কুরদোওলু জানান, দুই দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করার যে সম্ভাবনা আছে তাকে কাজে লাগানো জরুরি।
কোরহান কুরদোওলু, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, ট্যাব ফুড ইনভেস্টমেন্ট
“আমরা বুঝতে এসেছি যে চীন সত্যিই প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনে কোন কোন ক্ষেত্রে কতোটা উন্নতি করলো। আমরা চীনের নানা বিষয় দেখে অনেক কিছু শিখেছি। চীনের ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সমস্ত কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। বিশেষ করে সরবরাহ চেইনের ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়। কাজেই আমরা খুঁজছি কীভাবে আমরা আরও বেশি স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করতে পারি, আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও নিখুঁত করতে পারি এবং আমাদের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটাতে পারি।“
সম্প্রতি চীনে শুরু হওয়া এক প্রদর্শনীতে চীনা সরবরাহ চেইনের কিছু নমুনা তুলে ধরা হয়। সারা বিশ্বে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় দ্রুত সেবাদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম স্বাধীন কোম্পানি টিএফআই। এর অধীনে আছে চীনের বার্গার কিং। চীনা এই প্রতিষ্ঠানের আছে অন্তত দেড় হাজার স্টোর। এই প্রদর্শনীতে দেখানো হয়, কোম্পানিটি কীভাবে পুরো দেশের শিল্পখাতে ভূমিকা পালন করছে এবং কতোটা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এমন উদাহরণ থেকে বেশ উৎসাহ পেয়েছেন তুরস্কের এই ব্যবসায়ী।
“আমার মনে হয় চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করার ব্যাপক সম্ভাবনা তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি চীনের মানুষ, চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তুরস্কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেকটা পরিপূরক হয়ে কাজ করতে পারে।“
চীনা শিল্প চেইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই উদ্যোক্তা জানান, ডিজিটাল উদ্ভাবন ও বিকাশের নানা মাত্রিক ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তার কথা। তিনি জানান, চীন ও তুরস্ক, দুই দেশের বাজারের যে লুকানো সম্ভাবনা এখনো আছে তাকে কাজে লাগাতে পারলে উভয় দেশের অর্থনীতিতেই তার ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
কোম্পানি প্রোফাইল:
চীনের সঙ্গে কৃষি পণ্যের রমরমা বাণিজ্য ব্রাজিলের
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের সঙ্গে কৃষি পণ্যের বাণিজ্য ক্রমেই বাড়ছে ব্রাজিলের। এর অন্যতম কারণ দুই দেশের দীর্ঘ দিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বোঝাপড়া ও ব্যবসার সুন্দর পরিবেশ। বিশেষ করে সরবরাহ চেইনের ক্রমোন্নয়ন ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা দুই দেশের বাণিজ্যে যোগ করেছে এক ভিন্ন মাত্রা।
টানা ১৪ বছর ধরে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। বিশেষ করে ল্যাটিন অ্যামেরিকান দেশগুলোর মধ্যে চীনের সঙ্গে ব্রাজিলের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ১৭১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
দুই দেশের বাণিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে কৃষিখাত। কৃষিখাতের বিকাশ ও পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় বেড়েছে বাণিজ্যের পরিমাণ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ব্রাজিল থেকে গেল এক দশকে শস্য আমদানি ক্রমেই বাড়িয়েছে চীন।
পণ্য আমদানি আরও সহজ করতে এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি ট্রেড চ্যানেল। বর্তমানে সারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শস্য উৎপাদনকারী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শস্য রফতানিকারক দেশ ব্রাজিল।