ছাই চিয়ান ইয়া ১৯৭৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন চীনা পপ গায়িকা, সঙ্গীত প্রযোজক এবং গীতিকার। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব তাঁর অ্যালবাম "ভালোবাসার কথা"-র কয়েকটি গান।
"ভালোবাসার কথা" হল ছাই চিয়ান ইয়া’র নবম মিউজিক অ্যালবাম, যা ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামটি ২৩তম তাইওয়ান গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডের বছরের সেরা গান, সেরা ম্যান্ডারিন অ্যালবাম, সেরা সুরকার, সেরা গীতিকার, সেরা অ্যারেঞ্জার, সেরা অ্যালবাম প্রযোজক এবং সেরা ম্যান্ডারিন গায়িকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। আর অ্যালবামটির কারণে তিনি ‘সেরা ম্যান্ডারিন গায়িকা’ পুরস্কার জিতে নেন। তিনি তিন বার এই পুরস্কার জিতেছেন।
২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট “যদি তুমি তার সাথে দেখা করো” প্রকাশের পর ছাই চিয়ান ইয়া কিছুদিন অন্তরালে ছিলেন। কিছু সময়ের জন্য অনুপ্রেরণার অভাব অনুভব করছিলেন তিনি। তবে, একটি ভিন্ন শৈলীতে একটি অ্যালবাম তৈরি করার কথা এ সময় তিনি বিবেচনা করছিলেন। ২০১১ সালের মার্চে, তিনি তাইপেই এরিনায় কনসার্টের আয়োজন করেন। পরে বিশ্বজুড়ে তার কনসার্ট সফর শুরু হয়। এই কনসার্টের জন্য প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় তিনি তার নিজের সঙ্গীত ও পারফরম্যান্স পুনরায় পরীক্ষা করেন, তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন, এবং এই ম্যান্ডারিন অ্যালবামের জন্য কাজ করেন।
তার একক কনসার্টের প্রাক্কালে, ছাই চিয়ান ইয়া একটি দুঃখের সংবাদ পান। তিনি জানতে পারেন যে তার বাবা মারা গেছেন। এতো বড় আঘাত কাটিয়ে অ্যালবাম তৈরি ও প্রযোজনার কাজে ফিরে আসতে ছাই চিয়ান ইয়াকে যথেষ্ট ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে হয়। তিনি তার প্রতি সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে চান। বাবার মৃত্যুর পর ছাই চিয়ান ইয়ার জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে, তিনি জগত-সংসার, নিজের পারিপার্শ্বিকতা, এমনকি নিজের সম্পর্কেও নতুন করে ভাবতে শুরু করেন।
অ্যালবামের গানগুলো শুধু ছেলে-মেয়ের প্রেম নিয়ে নয়। এতে স্বজনদের জন্য ভালোবাসা, বন্ধুর জন্য ভালোবাসা, মহাবিশ্বের জন্য ভালোবাসার কথাও বলা হয়েছে।
রেকর্ডিংয়ের কাজ চলাকালে, ছাই চিয়ান ইয়া নিজে তদারকির জন্য অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেন। এমনকি, এমভি শুট করার জন্য নিজেই অর্থ বিনিয়োগ করেন। শেষ অ্যালবামের দশটি গানের রেকর্ডিং, আরও একটি ইংরেজি অ্যালবাম, এবং গায়িকা নাইং-এর অ্যালবামের পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ তাকে ছয় দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। তিনি নিজেও জানেন না কীভাবে ওই ছয় দিন কেটেছিল। কাজ করতে করতে তিনি কোনো কোনো সময় ভীষণ ক্লান্ত হতেন। খানিকটা বিশ্রামের পর আবার কাজে লেগে যেতেন। অনেক কষ্টে কাজ শেষ করে অবশ্য তিনি নিজের কাজ নিয়ে ছিলেন সন্তুষ্ট।
অ্যালবামের বিষয়বস্তু অগভীর থেকে গভীরে যায়; "ভালোবাসা" সম্পর্কে কথা বলে। "বড় ভালোবাসা"-য় শহুরে পরিণত নারীদের আগের তুলনায় অধিক জ্ঞানী হয়ে উঠবার কথা বলা হয়েছে। পরিণত নারীদের দুঃখ থাকবে বা থাকে। গানে সেই কথাই বলা হয়েছে। গানের সুর চমত্কার।
অ্যালবামের শুরুর টাইটেল গানটি খুবই ‘ফ্ল্যাট’, যা পুরো অ্যালবামের সুরের ভিত্তি নির্ধারণ করেছে। ছাই চিয়ান ইয়া গান লিখতে গিয়ে প্রচুর বিশুদ্ধ বিরতি ব্যবহার করেছেন, যার ফলে অনেক গানে সামান্য উত্থান-পতন রয়েছে। পুরো অ্যালবামে শুধুমাত্র দুটি গান আছে যেগুলো ছাই চিয়ান ইয়া লেখেননি। একজন গায়িকা-গীতিকারের জন্য "একটি ডায়েরি লেখার মতো" সঙ্গীত ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রোতাদের স্পর্শ করা এতো সহজ নয়। অ্যালবামটিতে রয়েছে "লাভলি"-র মতো গানের শহুরে স্বাদ, নাটকীয় বিন্যাস এবং অলস ধরনের "আমাকে কষ্ট দিও না", সোজাসাপ্টা "পুরানো লাগেজ" ও "লেটিং গো", এবং সবশেষে অনুপ্রেরণামূলক গসপেল গান "পরের বার দেখা হবে"। শেষের দিকে আছে "ভালোবাসার কথা”, যা শুরুর গানের প্রতিধ্বনির মতো।
অ্যালবামের দশটি গানে প্রেমের ব্যক্তিগত অনুভূতি ফুটে উঠেছে। অ্যালবামটি উচ্চ মানের, গানগুলো পরস্পর নির্ভরশীল ও একে অপরের পরিপূরক। ছাই চিয়ান ইয়া অ্যালবামে "পরিণত কিন্তু অবিবাহিত নারী" বিষয় নিয়ে খুব বেশিকিছু বলার চেষ্টা করেননি।
এখন পর্যন্ত, ছাই চিয়ান ইয়া তার তিনটি অ্যালবাম ("গুডবাই অ্যান্ড হ্যালো", "যদি তার সাথে দেখা করো", "ভালোবাসার কথা”)-এর মাধ্যমে একজন সাহিত্যিক তরুণী থেকে মধ্যবয়সী নারীর সম্পূর্ণ বিবর্তন সম্পন্ন করেছেন। তিনি একটি রেকর্ডের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রশংসা করেন, নিজের পরিসর বিস্তৃত করেন, এবং নিজেকে আনন্দ দিতে তত্পর হন। এই অ্যালবামের মাধ্যমে, ছাই চিয়ান ইয়া মনে হচ্ছে দরজা খুলেছেন, তাজা বাতাসে শ্বাস নিয়েছেন এবং অতীতের আভা ফিরিয়ে এনেছেন। (ইয়াং/আলিম)