‘বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনছে চীন’
2023-12-07 17:33:37

ডিসেম্বর ৭: ‘চীনের একটি বৈদ্যুতিক গাড়িনির্মাণ কেন্দ্রে জামানির ভক্সওয়াগনের প্রকৌশলীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। তারা জানতে চান, কীভাবে উৎপাদনের গতি বাড়ানো যায়…’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ‘বৈদ্যুতিক গাড়ি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিতে চীনে ছুটছে বৈশ্বিক গাড়ি নির্মাতারা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়। 

টানা ৮ বছর ধরে চীনের নতুন-জ্বালানি গাড়ি বা এনইভি’র বিক্রি বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এটি চীনা অর্থনীতির উন্নয়নের প্রতিফলন। 


এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা ২০২৩ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ২ শতাংশ করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুমান করছে, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনা অর্থনীতির অবদান হবে ৩০ শতাংশেরও বেশি। চীনা অর্থনীতির ভবিষ্যতের ব্যাপারে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা একমত। 


আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চীনে বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ৪১ একচল্লিশ হাজার ৯৪৭টিতে দাড়াঁয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ বত্রিশ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অনেক আন্তর্জাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মনে করে, ‘চীনের সাথে ব্যবসা করা মানে সুবিধা’। 


যুক্তরাষ্ট্রের টেসলা কোম্পানি নিয়ে আমরা একটি উদাহরণ দেই। বতর্মানে, শাংহাইয়ে টেসলার ফ্যাক্টরিতে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত গাড়ির যন্ত্রাংশের হার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই সুবৃহৎ কারখানা মাত্র ৪০ সেকেন্ডে একটি ইলেক্ট্রিক গাড়ি উৎপাদন করতে পারে। টেসলা কোম্পানির উপপ্রধান থাও লিন সিএমজিকে বলেন, চীনের শক্তিশালী ও উন্নত সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা ছাড়া টেসলার উৎপাদন সক্ষমতা বাস্তবায়ন সম্ভব না। টেসলার পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যতেও চীনা বাজারে নিজেদের ব্যবসার সুযোগ খুঁজে বের করা। 


চীনে ব্যবসা পরিচালনা করা অনেক সুবিধাজনক। উপাত্তে দেখা যায়, গত ৫ বছরে চীনে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ থেকে আয়ের হার ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের এ হার মাত্র ৩ শতাংশ। ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতসহ উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে এ হার ৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত। এর মানে হলো, চীনে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে আয়ের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। 


পাশাপাশি, চীনে বেশ কয়েকটি উন্নত দেশের সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে চীনে কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের প্রকৃত বিনিয়োগ যথাক্রমে ১১০ দশমিক ৩ শতাংশ, ৯৪ দশমিক ৬শতাংশ, ৯০ শতাংশ, ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। 


আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো বর্তমানে চীন শুধু ‘বিশ্বের কারখানা’ নয়, বরং সবুজ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতিসহ নানা খাতে চীন বিশ্বের সামনের সারির দেশে পরিণত হচ্ছে এবং বিশ্বের অর্থনীতির জন্য নতুন প্রাণশক্তি যোগাচ্ছে। 


বতর্মানে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভূরাজনৈতিক সংঘাত, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই সময় ‘স্থিতিশীলতা’ খুব প্রয়োজন। চীন স্থিতিশীলতা প্রদান করছে। চীনের অর্থনৈতিক নীতি স্থিতিশীল ও স্থায়ী। পাশাপাশি অভিন্ন উন্নয়ন, উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতির নির্মাণ এবং একযোগে আধুনিকায়ন বাস্তবায়নে চীন বরাবরই সব পক্ষকে আহ্বান জানায়। 


বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসী চীনের অর্থনীতির সক্ষমতাকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে। বিশ্বের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য চীন অবশ্যই ভবিষ্যতেও অবদান রেখে যাবে। 

(আকাশ/রহমান)