ডিসেম্বর ৬: “আমি হাজার হাজার বায়ুকল, সৌর প্যানেল ও শক্তি সঞ্চয়ের সরঞ্জাম এবং উচ্চ ট্রান্সমিশন লাইন দেখেছি, যা দিয়ে বিদ্যুত্ বেইজিং পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের প্রচেষ্টা খুবই প্রশংসনীয়।” সম্প্রতি মার্কিন-চীন সম্পর্ক তহবিলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিল বুস, চলতি বছরের প্রথম দিকে তার চীনের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চল সফরকালের অভিজ্ঞতা, এভাবে বর্ণনা করেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত, চীনের নতুন ইনস্টল করা বায়ুশক্তির ক্ষমতা টানা ১৪ বছর ধরে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং এর ক্রমবর্ধমান ইনস্টলেশন ক্ষমতা টানা ১৩ বছর ধরে বিশ্বে প্রথম স্থানে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্ব বাজারের অর্ধেকেরও বেশি। বর্তমানে, বিশ্বের ইনস্টল করা ফটোভোলটাইক শক্তি উত্পাদন ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক চীনে রয়েছে; বিশ্বের নতুন শক্তিচালিত গাড়ির অর্ধেকেরও বেশি চীনে চলছে এবং বিশ্বের নতুন সবুজ এলাকার এক চতুর্থাংশ চীনের অবদান।
এসব তথ্যের মাধ্যমে, দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন’-এর ২৮তম কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস (কপ২৮)-এ চীনের অবদান কেন সকল পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা বোঝা যায়।
বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে, চীন প্যারিস চুক্তির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজস্ব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে একটি জাতীয় কৌশল হিসাবে গ্রহণ করেছে; নবায়ণযোগ্য জ্বালানির বিকাশ, কার্বন পিকিং, ও কার্বন নিরপেক্ষতার জন্য একটি "১+এন" নীতিব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে; শিল্প, শক্তি ও পরিবহন কাঠামোর সমন্বয়ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে; এবং বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বাজার গড়ে তুলেছে। গত এক দশকে চীন গড়ে বার্ষিক ৬.২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যার ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে শক্তি খাতে।
একই সময়ে, চীন সক্রিয়ভাবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু শাসনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের শেষ দিক পর্যন্ত, চীন ৩৯টি উন্নয়নশীল দেশের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত ৪৬টি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা নথিতে স্বাক্ষর করেছে।
সম্প্রতি, মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকসেস কনসাল্টিং কোম্পানির সিইও ডেভিড ডডওয়েল একটি নিবন্ধে লিখেছেন, বিভিন্ন দেশের উচিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া।
চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে বিশাল জনসংখ্যা এবং শক্তিসম্পদের আপেক্ষিক ঘাটতি রয়েছে। সবুজ রূপান্তর ও উদ্ভাবনের প্রক্রিয়ায় দেশটির অনেক অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তারপরও, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে, গুটিকতক দেশের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট সকল দেশকে এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে, উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূল দায় বহন করতে হবে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে নির্গমন হ্রাসে নেতৃত্ব দিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সংশ্লিষ্ট আর্থিক, প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিতে হবে।
সর্বশেষ খবর অনুসারে, কপ২৮ শুরুর প্রথম চার দিনে, বিভিন্ন সরকার, কোম্পানি, বিনিয়োগকারী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন, বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনের জন্য শুধুমাত্র মৌখিক প্রতিশ্রুতিই নয়, বাস্তবিক পদক্ষেপও প্রয়োজন। কোনো দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বাইরে থাকতে পারে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন তার সর্বোত্তম অবদান রেখে যাবে। (জিনিয়া/আলিম)