‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. তরুণদের পদচারণায় মুখোর চীনের বিভিন্ন স্কি রিসোর্ট
এ বছরের শীতকালে তুষারপাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২২ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকের ভেন্যুগুলোসহ চীনের বিভিন্ন স্কি রিসোর্টগুলোতে ভীড় করছেন তরুণ স্কিয়াররা। এ উপলক্ষ্যে রিসোর্টগুলোও স্কিয়ারদের চাহিদা মেটাতে উদ্বোধনী উৎসব, সঙ্গীত উৎসব এবং বিয়ার পার্টির মতো বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
চীনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে আইস ও স্নো স্পোর্টস। দেশটিতে প্রতি বছর শীতকালে ঢালু পাহাড় তুষারে ঢেকে গেলে স্কি খেলতে রিসোর্টগুলোতে জড়ো হন অসংখ্য দেশি-বিদেশি খেলাপ্রেমী।
বিশেষ করে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের পর স্কির প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হন চীনের তরুণরা। বিশেষ করে এই সময়টার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন দেশটির তরুণরা।
সাধারণ মানুষের মধ্যে আইস ও স্নো স্পোর্টস প্রচারের লক্ষ্যেই অলিম্পিক ভেন্যুগুলো হ্যপেই প্রদেশের চাংচিয়াখুয়ের ছোংলি জেলায় আকর্ষণীয় করে তৈরি করে এ জেলার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
পরিসংখ্যান বলছে , সম্প্রতি ছোংলিতে চারটি বড় স্কি রিসোর্ট তাদের এ বছরের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং এরইমধ্যে এসব রিসোর্টে কয়েক হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে।
একজন স্কিয়ার জানান, তিনি বেইজিং থেকে ভোর ৪টায় রওনা দিয়ে স্কি রিসোর্টে এসেছেন। স্কি রিসোর্টে এসে দেখেন তার ধারণার থেকেও অনেক বেশি মানুষ সেখানে গিয়েছে।
এটি কেবল স্কিইং সম্পর্কিত নয় জানিয়ে ছোংলির থাইউও স্কি রিসোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট নেই নিংনিং জানান, তারা স্কিইং অবকাশের প্রচারেও কাজ করছেন।
‘আসলে আমরা স্কিইং অবকাশের প্রচার করছি। এই বছর এখন পর্যন্ত আমরা যেসব বাণিজ্যিক পরিষেবা দিচ্ছি তা দর্শনার্থীদের স্নো স্পোর্টস এবং একই সঙ্গে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে।’
সম্প্রতি শক্তিশালী তুষারঝড় বয়ে গেছে উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশে। এই প্রদেশেও অধিক পরিচিত কিছু স্কি রিসোর্ট তাদের পাইলট কার্যক্রম শুরু করেছে। এমনকি উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আলথায় প্রিফেকচারে চারটি বড় স্কি রিসোর্টের মধ্যে তিনটি রিসোর্ট তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
আলথায় শহরের চিয়াংচুনশান স্কি রিসোর্ট দেশটির একমাত্র শহুরে আলপাইন স্কি রিসোর্ট। দীর্ঘ তুষার মৌসুম এবং উচ্চ মানের তুষারের কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে এই রিসোর্টটি।
দর্শনার্থীদের জন্য স্নোমোবাইল রাইডিং, স্নো টিউবিং এবং স্নো হর্স রাইডিংয়ের মতো উপভোগ্য বিভিন্ন ইভেন্ট রাখা হয়েছে বলে জানান চিয়াংচুনশান স্কি রিসোর্টের ফিন্যান্সিয়াল পরিচালক তাং তাইরং।
‘সংস্কৃতি, পর্যটন এবং ট্যাক্স বিভাগের নীতিগত সহায়তায় আমাদের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তহবিল রয়েছে। এই বছর আমাদের স্কি রিসোর্ট মেংশি, চিয়াংকুয়াং এবং হংকুয়ার মতো নতুন ইভেন্টে চালু করেছে। এসব কিছু দর্শনার্থীদের একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।’
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর চীনে স্কি রিসোর্টের টিকিট বুকিং বেড়েছে ১৪৭ শতাংশের বেশি।
এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতকালীন অলিম্পিকের পর এ বছর তুষার মৌসুমে চীনের স্কিইং বাজার আরও শক্তিশালী হবে।
চায়না ট্যুরিজম একাডেম প্রকাশিত চীনের বরফ ও তুষার পর্যটন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২০২২ সালে শীতকালে এ খাতে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ পর্যটকের দেখা পেয়েছে চীন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ তুষার মৌসুমের শেষ নাগাদ চীনের বরফ এবং তুষার অবকাশ পর্যটন খাতে ৫২০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ খাতে রাজস্ব আয় ৭২০ বিলিয়ন ইউয়ান বা প্রায় ৯৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার
সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. চীন জুড়ে তরুণদের আকর্ষণ বাড়ছে কাঁচাবাজারে
পূর্ব চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে, তামানং অ্যালি নামে একটি কাঁচাবাজার একটি পুরানো আবাসিক এলাকায় অবস্থিত, যেখানে বহু বাসিন্দা প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন।
"হাংচৌতে শেষ রাস্তার বাজার" হিসেবে পরিচিত, জায়গাটি পর্যটকদের কাছে একটি অবশ্যই দেখার মতো পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে।
এখানকার খাবার এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় করেন।
" প্রাকৃতিক পরিবেশে সুন্দর এ জায়গাটিকে আমি প্রথমে দেখতে পাই অনলাইনে। তারপর এসে দেখি এখানে অনেক স্থানীয় সুস্বাদু খাবার রয়েছে এবং আমি স্থানীয় সংস্কৃতির ধারনাও এখান থেকে পাই।’
চীন জুড়ে বর্তমানের তরুণ-তরুণীরা কাঁচা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
কারণ তারা হাতের কাছে তাজা পণ্য, বিবেচ্য সেবা এবং সুবিধাজনক লেনদেন উপভোগ করতে পারেন।
মধ্য চীনের উহান শহরের একটি কাঁচা বাজারে, গ্রাহকরা ইলেকট্রনিকভাবে অর্থ প্রদান করা এবং বাজারের খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত রিয়েল-টাইম তথ্য আপডেটগুলো পরীক্ষা করা সহজ বলে মনে করেন। অনেক তরুণ-তরুণী এ ধরনের সুবিধার কারণে আকৃষ্ট হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারাও তাই এই ধরনের বাজারগুলোতে ছুটে আসেন, নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পাশাপাশি কাছের মানুষ বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
" প্রথম এখানে এসে তো আমি অবাক! এই জায়গাটা আমার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক সুন্দর। আমি ভাবতাম এটা নোংরা এবং অগোছালো। কিন্তু আমার ধারনা ভুল। আমি কাছাকাছি কাজ করি তাই কাজ করার পরে এখানে সবজি কেনা আমার পক্ষে খুবই সুবিধাজনক। আমি এখানে আড্ডাও দেই। ভালো লাগে।"
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং পৌরসভায়, কাঁচা বাজার কর্তৃপক্ষ একটি বারবিকিউ রেস্তোরাঁ এবং কফি স্টল চালু করে ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে, যা তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : হাশিম মাহমুদ
৩. অর্থনীতির গতি বাড়াচ্ছে হাইনানের মুক্ত বাণিজ্য বন্দর
তারুণ্য-নির্ভর অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। এজন্য বিভিন্ন আয়োজনে লক্ষ্য করা যায় তরুণ উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি। অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি এগিয়ে রাখতে প্রায় সময় নানা রকম ইভেন্টের আয়োজন করে চীন সরকার, যেখানে তরুণদের বিষয়টি মাথায় রেখে সাজানো হয় মূল পরিকল্পনা।
সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম ইকোনমিক হাব সিঙ্গাপুরে মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ক প্রমোশনাল ইভেন্টের আয়োজন করে চীনের হাইনান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগ।
"ক্লোজার সিঙ্গাপুর – হাইনান কোঅপারেশন টু শেয়ার ইন ফ্রি ট্রেড পোর্ট অপারচুনিটিজ" এই থিম নিয়ে বেশ বড় পরিসরেই আয়োজন করা হয় এই ইভেন্ট, যেখানে অংশ নেন দু’দেশের তরুণ উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা।
হাইনান বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে ইভেন্টটি আয়োজন করে হাইনান ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট।
আয়োজক কমিটি জানায়, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দক্ষিণ চীনের হাইনান মুক্ত বাণিজ্য বন্দর সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের ভালো ধারণা দেয়া এবং একইসঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরো সমৃদ্ধকরা।
প্রতিবেদক : হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী