শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪৭
2023-12-06 19:44:25

বিশ্ব-প্রকৃতিতে এবার নজর দিয়েছে চীন | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪৭

 

এবারের পর্বে রয়েছে

১. বিশ্ব-প্রকৃতি সংরক্ষণে এবার নজর দিয়েছে চীন

২. বিশেষ জাতের হরিণ খুঁজছেন গবেষকরা

৩. মাছ চাষে ভাসমান প্রকল্প কতটা কাজে লাগছে?

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

 

 

বিশ্ব-প্রকৃতি সংরক্ষণে এবার নজর দিয়েছে চীন

ইউরোপের দারুণ এক দেশ ক্রোয়েশিয়া। এদেশে যেমন রয়েছে সবুজের আধিপত্য, তেমনি রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় লেক আর বিশাল জলপ্রপাত। এই লেকগুলো শুধু পর্যটকদেরই আকর্ষণ করে না বরং একইসঙ্গে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও গবেষণায় বড় ভূমিকা রাখছে। এই ধরনের লেকগুলোর সংরক্ষণে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে চীনের আইকনিক স্পট চিওচাইকও সিনিক এরিয়া। ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশে চীনের প্রকৃতি সংরক্ষণ নীতি কতটা কাজে লাগছে?

                                               

ক্রোয়েশিয়া এমন একটি দেশ, যেটির নাম উচ্চারণ করলেই সবার আগে মাথায় আসে সে দেশের অসম্ভব সুন্দর  প্রকৃতির কথা।

প্লিটভিস লেক তেমনি একটি আইকনিক দর্শনীয় স্পট, যেখানে প্রায়সময় ভিড় করেন বিশ্বের পর্যটন প্রেমীরা। স্বচ্ছ পানি আর বিশাল জলপ্রপাতের জন্য সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পার্কটি।

এই লেক পার্কটি শুধু প্রকৃতির ভারসাম্যই রক্ষা করছে না বরং একই সঙ্গে নজর কেড়েছে প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা বিশ্বের স্বনামধন্য গবেষকদের।

ক্রোয়েশিয়ার এই বিখ্যাত দর্শনীয় স্পটের সঙ্গে মিল রয়েছে চীনের চিওচাইকও কাউন্টির সিনিক এরিয়ার। তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও সংরক্ষণকে সামনে রেখে নতুন করে পরিকল্পনা কষছেন গবেষকরা।

দুই লেকের মধ্যে সাদৃশ্য এতই বেশি যে, অনেকেই বলে থাকেন এটি একটি 'জমজ অলৌকিক ঘটনা'। তবে বিখ্যাত এই দর্শনীয় স্থান দুটি বেশ কিছু সময় ধরে মোকাবেলা করছে একই ধরনের ভূতাত্ত্বিক সমস্যা, এজন্য দু'দেশের গবেষকরা এগিয়ে এসেছেন একে অপরকে সহযোগিতা করতে। সবার লক্ষ্য একটাই প্রকৃতির এই উপহার যেন থাকে সযত্নে।

গবেষণা টিমে কাজ করা একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সাঞ্জা যালাক, তিনি জানিয়েছেন একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।

"অনেকেই প্রশ্ন করেন আমরা একসঙ্গে কেন কাজ করি?! আসলে বাস্তবতা হলো আমাদের কাজের ক্ষেত্রটা প্রায় একই রকম। কিভাবে প্রকৃতিকে আরো সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা যায়, এ নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করছি এবং একই সঙ্গে আমাদের কাজগুলোকে এগিয়ে রাখছি। আমি যতটুকু জানি চীনের চিওচাইকও কাউন্টিতে রয়েছে ১৫ টি লেক আর আমাদের আছে ১৬টি লেক। আর লেকগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য থাকায় কাজ করতে বেশ সুবিধা হচ্ছে, প্রকৃতির সংরক্ষণে  ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি আমরা।"

শুধু ক্রোয়েশিয়া নয় ইউরোপের অন্যান্য দেশের প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়েও যৌথভাবে কাজ করছে উন্নয়নে অগ্রগামী দেশ চীন। আর এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

 

বিশেষ জাতের হরিণ খুঁজছেন গবেষকরা

জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজে বিশেষ নজর দিয়েছে চীন। সম্প্রতি হেইলংচিয়াং প্রদেশের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গবেষকরা মুজ হরিণের চার-পাঁচটি পালের খোঁজ পেয়েছেন।যা থেকে তারা বুঝতে পেরেছেন এখানে কয়েকশ মুজ হরিণ আছে। 

চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের নানওয়েংহ্য ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভের সংরক্ষিত প্রাকৃতিক অরণ্যে দেখা মেলে বিশালাকারের মুজ হরিণ।  এই হরিণকে এলক নামেও ডাকা হয়।

সম্প্রতি চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব ফরেস্ট্রি  মুজ হরিণের চার-পাঁচটি পালের দেখা পেয়েছেন এই অরণ্যে। যা থেকে তারা ধারণা করছেন এখানে কয়েকশ মুজ হরিণ রয়েছে।

হরিণ পরিবারে সবচেয়ে বড় আকারের হলো মুজ হরিণ। এরা জলাভূমি অরণ্য, পাহাড়ি অরণ্য , বড় পাতা বৃক্ষের অরণ্যে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। এরা  জলার ঘাস পাতা ও গাছের সুচালো ও  বড় পাতা খেতে ভালোবাসে। শীতল এলাকায় অরণ্য জলাভূমি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে নানওয়েংহ্য হলো সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চল। থার্মাল ক্যামেরায় এখানে হরিণদের গতিবিধি দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

চীনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণমূলক বেশ কয়েক বছরের কাজের ফলে এখন বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  নানওয়েংহ্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মুজ হরিণের কোন প্রিডেটর না থাকায় এবং তাদের সংরক্ষণে গবেষক ও কর্মীদের প্রচেষ্টার ফলে এখানে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা:  শিহাবুর রহমান

 

মাছ চাষে ভাসমান প্রকল্প কতটা কাজে লাগছে ?

মাছ চাষেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে চীন। পূর্ব চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উপকূলে শেষ হয়েছে অফশোর বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মাছ চাষে বিশ্বের প্রথম ভাসমান সমন্বিত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। ফুজিয়ানের পুথিয়ান শহরের নানরি দ্বীপে এটি নির্মাণ করেছে লংইয়ুয়ান ইলেকট্রিক পাওয়ার গ্রুপ। যা খুব দ্রুত চালু করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে সমন্বিত এ প্রকল্পটি চীনের বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইউরোপের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চল স্পেনের মুরসিয়া প্রদেশ। এরপরও ফল ও সবজি উৎপাদনের জন্য প্রদেশকে বলা হয় ইউরোপের বাগান। আর এমনটি সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল ও শহরের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পানি প্রদেশে এনে পরিশোধন করে কৃষিতে চাষাবাদের কাজে ব্যবহারের জন্য। স্থানীয়রা বিষয়টিকে মুরসিয়ান মিরাকল বলে থাকেন।

মুরসিয়ায় বছরে ৩০০ দিনেরও বেশি সূর্যের তাপপ্রবাহ থাকে। এ কারণে অঞ্চলটিতে পানি একটি দুর্লভ এবং মূল্যবান সম্পদ। কৃষি চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় চাহিদার ৯৮ শতাংশ পানি বিকল্প উপায়ে ব্যবস্থা করতে হয়।

মুরসিয়া অঞ্চলের বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধানকারী অপারেশনের ম্যানেজার  কার্লোস লারডিন জানান, পানিকে সঠিকভাবে ফিল্টারিং এবং পরিষ্কার করার জন্য এই অঞ্চলে ১০০টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এ পরিশোধন প্রক্রিয়াটি চমৎকার। এটি জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া প্যাথোজেন, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে।

কোটিলাস টাওয়ারস নামের এ রিসাইক্লিং প্ল্যান্টটি যে পরিমাণ পানি পরিশোধন করে তা ১২৮টি বিশালাকারের অলিম্পিক সুইমিং পুলের সমান। এই পানি আশেপাশের খামারগুলোতে সেচের জন্য সরবরাহ করা হয়। তবে সেচে সরবরাহ করার আগে প্রতিনিয়ত পানির গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়।

শুধুমাত্র পানির উৎস তৈরি হওয়ায় স্পেনের একেবারে শুষ্ক ও জীবন নিশ্চিহ্ন এ অঞ্চলটি প্রাণ ফিলে পেয়েছে। ইতোমধ্যেই বিপন্ন প্রজাতির পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া এখানে কৃষি শিল্প প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, যা বছরে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

স্থানীয় কৃষক জেসাস রোজো লেবু, পীচ, এপ্রিকট বা আর্মেনিয়ান পাম এবং আরও অন্যন্য ফসল চাষ করছেন এ পরিশোধিত পানি দিয়ে।

ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলো মুরসিয়ার কৃষি চাহিদার ১৫ শতাংশ পূরণ করে এবং এ প্রকল্পটি সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। চলতি বছরের মে মাসে স্প্যানিশ সরকার বর্জ্য পানির পরিশোধনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি তহবিল অনুমোদন দিয়েছে।

দেশটির এমন কার্যক্রমে আগ্রহ দেখিয়েছে অন্যান্য দেশও। ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া ও আর্জেন্টিনার প্রতিনিধি দল মুরসিয়া প্রদেশের এ প্রকল্প পরিদর্শন করেছে।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা:  এইচআরএস অভি

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী