‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪৭
2023-12-05 18:47:23

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে    

১।  জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে স্টিল কারখানা

২। ঘুরে আসুন চীনের লুওলং পার্ক থেকে

৩। ছয় দেশের নাগরিকদের ভিসা-ফ্রি প্রবেশের ঘোষণা চীনের

৪। ইনার মঙ্গোলিয়ায় চলছে তুষার-পর্যটন

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪৭তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।     

১। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে স্টিল কারখানা

উত্তর চীনের হপ্যেই প্রদেশের সিংথাই শহরের ‘ডিলং স্টিল কারখানা’। এ কারখানায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন ইস্পাতের ভাস্কর্য এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। প্রথম দেখায় কেউই বুঝতে পারবেন না যে এটি একটি কারখানা। তাও আবার উৎপাদন কাজে সক্রিয়! ধোঁয়া এবং ঘন ধূলিকণা কিংবা বিরক্তিকর শব্দের পরিবর্তে কারখানাটির ১২০ হেক্টরের বেশি এলাকা বর্তমানে পরিণত হয়েছে জাতীয় থ্রি-এ পর্যটন কেন্দ্রে।

 

এতে রয়েছে ২০০টিরও বেশি স্টিলের ভাস্কর্য। দেখতে পাওয়া যায় অপ্টিমাস প্রাইম এবং মেগাট্রনের মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রগুলোরও ভাস্কর্য। অবসরে এই ভাস্কর্যগুলো ইস্পাত দিয়ে তৈরি করেছেন কারখানার শ্রমিকরা।

আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্থানটিতে রয়েছে সকল ধরনের পর্যটন সুবিধা। ডিলং স্টিল কোম্পানি লিমিটেড কারখানায় ৩০টিরও বেশি স্থান রয়েছে যেখানে দর্শনার্থীরা পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- ইস্পাতের ইতিহাস সংক্রান্ত জাদুঘর, ইস্পাত প্রযুক্তি যাদুঘর, ইস্পাত ভাস্কর্য অঞ্চল, একটি থিম পার্ক এবং লন।

 

বর্তমানে এ কারখানায় কাজ করছেন মেই ইয়ানবিন। তিনি কারুকার্যের জন্য ‘মাস্টার মেই’ নামেও পরিচিত। মেই ও তার সহকর্মীরা তাদের অবসর সময়ে স্টিলের স্ল্যাগ, প্লেট, লোহার তার এবং স্ক্রু ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের খেলনা এবং গ্লোব তৈরি করেন, যা পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়।

কারখানাটিতে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে উল্লেখ করে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার লিউ কৌছি জানান, ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো কারখানাটি জাতীয় ফোর-এ স্তরের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অনুমোদন পায়। প্রতিদিন আমাদের এখানে গড়ে ২ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী আসেন। এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায় ছুটির দিনে।

ঐতিহ্যবাহী এ ইস্পাত কোম্পানিটি এর আগে উচ্চ দূষণ, জ্বালানির অপচয় এবং কার্বন নির্গমনে জন্য ব্যাপক সমালোচিত এবং কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। সে সময় এটি কোনো দর্শনীয় স্থান ছিল না।

এরপর ২০১৪ কারখানাটি পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করে।

বদলে ফেলা হয় পুরনো সরঞ্জাম। পাশাপাশি, বিশাল আয়তন নিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব কারখানায় রূপান্তর করা হয়। যুক্ত করা হয় নানাবিধ পর্যটন সুযোগ-সুবিধা, যা একে আকর্ষণীয় পর্যটন হিসেবে করে তুলেছে অনন্য।

প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

২। ঘুরে আসুন চীনের লুওলং পার্ক থেকে

কুনমিংয়ের নতুন এলাকা ছাংকং নিউ ডিসট্রিক্ট-এ গড়ে তোলা হয়েছে লুওলং পার্ক। একসময় এখানে ছিল লুওলং গ্রাম। এখন গ্রামসহ পুরো এলাকা কুনমিং শহরের ছাংকং জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে সকল প্রকার আধুনিক সুবিধা নিয়ে লুওলং পার্ক । এটি ছাংকং নতুন এলাকার সবচেয়ে বড় পার্ক। ৩৮৩৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে পুরো পার্ক। এখানে রয়েছে অনেকগুলো জলাশয়। এই পার্কের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে লুওলং নদী। পুরো পার্কটির নির্মাণ ব্যয় হলো ১.৪ মিলিয়ন ইউয়ান।

 

বেশ কয়েকটি লেক নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। চমৎকার সব সেতু রয়েছে জলাশয়গুলোর উপর দিয়ে। এখানে একটি স্মৃতি চত্বর বা মেমোরিয়াল স্কোয়ার আছে যা জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শহীদ বীরদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে।

পার্কের ভিতরে রয়েছে অনেকগুলো চত্বর ও প্যাভিলিয়ন। পার্কের ল্যান্ডস্কেপ খুব সুন্দর। হাঁটার জন্য দীর্ঘ হাঁটাপথ নির্মাণ করা হয়েছে । পার্কের ভিতরে বসার জন্য অনেকগুলো কাঠের কোরিডর ও ছাউনি রয়েছে।

 

লুওলং পার্কে প্রায়ই নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পার্কের ভিতরে রেস্টুরেন্ট এবং ছোট দোকান রয়েছে যেখানে হালকা খাবার, আইসক্রিম, সফট ড্রিকংস পাওয়া যায়। আশেপাশের বাসিন্দারা বিকালে এখানে ক্যারাওকে সহযোগে গান করেন।

 

গ্রীষ্মকাল থেকে শীতের আগমনের আগ পর্যন্ত এখানে প্রতি সন্ধ্যায় নাচের আসর বসে। এখানে সবাই থাইচি ও অন্যান্য নাচ অনুশীলন করেন।  এখানে সানশাইন স্কোয়ারের থিম হলো প্রাকৃতিক দৃশ্য, , ল্যান্টার্ন স্কোয়ারের থিম হলো লোকজ সংস্কৃতি, লোংচু স্কোয়ারের থিম হলো পাথর। লেকসাইড স্কোয়ারের থিম হলো পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র।

শীত গ্রীষ্ম দুই ঋতুতেই এই পার্ক খুব আরাম দায়ক। লুওলং পার্কের কাছে রয়েছে বড় শপিং এলাকা। ছুনরোং স্ট্রিট শপিং এরিয়ায় রয়েছে সাবওয়ে স্টেশন। সেখান থেকে হেঁটেই এই পার্কে যাওয়া যায়।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

এবার থাকছে কিছু টুকরো খবর

 

•       ছয় দেশের নাগরিকদের ভিসা-ফ্রি প্রবেশের ঘোষণা চীনের

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ ও ইউরোপের পাঁচটি দেশের নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই প্রবেশ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। করোনা মহামারি বিধ্বস্ত পর্যটন শিল্প চাঙ্গা করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণার কথা জানানো হয়।

 

 

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও মালয়েশিয়ার নাগরিকদের চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো ভিসা প্রয়োজন হবে না। ১ ডিসেম্বর থেকে ভিসা-ফ্রি সুবিধা চালু হবে। চলবে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

 

সাধারণ পাসপোর্টধারী ব্যক্তি যারা পর্যটন, ব্যবসা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা ভ্রমণের জন্য চীনে আসবেন তারা সর্বোচ্চ ১৫ দিন অবস্থান করতে পারবেন। মুখপাত্র আরও জানান, এ উদ্যোগ চীনের উন্নয়ন ও উন্মুক্ত পরিবেশের প্রচারে সাহায্য করবে।

 

কোভিড ১৯ মহামারিরর কারণে তিন বছরের বেশি সময় সীমানা বন্ধ রাখার পর গেল মার্চে বিদেশীদের জন্য চীনের দরজা পুরোপুরি খুলেছে।

 

•       ইনার মঙ্গোলিয়ায় চলছে তুষার-পর্যটন

চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ায় এখন শীত নেমেছে প্রবলভাবে। তুষারে ঢেকে গেছে পথঘাট, পাহাড় পর্বত। এরই মধ্যে চলছে তুষার ক্রীড়ার নানা আয়োজন।

 

 

তুষার আবৃত ইনার মঙ্গোলিয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্যের আকর্ষণে এখানে আসছেন অনেক পর্যটক। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। তুষারে ঘোড়দৌড়, উটের দৌড়, স্কি, স্নো বোর্ডিং ইত্যাদি চলছে পুরোদমে।

 

 

হুলুনবুইর এবং সিলিন গোল তৃণভূমি এখন বরফে ঢাকা। এইসব প্রান্তরে চলছে অনেক রকম সাংস্কৃতিক আয়োজন। মঙ্গোল জাতির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মুগ্ধ করছে পর্যটকদের। শীতকালের এই পর্যটনকে তুষার-পর্যটন নামে অভিহিত করা হচ্ছে।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সপাদনা- মাহমুদ হাশিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী