চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৪৫
2023-12-02 19:07:06

১. সংস্কৃতি সপ্তাহ

সিএমজি তথ্যচিত্রে চীনের ঐতিহাসিক-সাংস্কৃতিক শহর

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত চীনা শহরগুলোর উপর আলোকপাত করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজির একটি নতুন তথ্যচিত্র সিরিজের প্রিমিয়ার সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন যুগকে অনুধাবন’ শিরোনামের সিরিজটি চীনের আবাসন ও নগর-পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং সিএমজি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে। 

৩০ মিনিট-দৈর্ঘের পর্বগুলোর প্রতিটি দেশজুড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক শহরগুলোর আকর্ষণকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেমন দেশের চীনামাটির বাসন কেন্দ্র চিংকতেচেন এবং ক্লাসিক্যাল বাগানের জন্য বিখ্যাত পূর্বাঞ্চলীয় শহর সুচৌ।

তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে, সিএমজি প্রেসিডেন্ট শেন হাইসিওং বলেন, নতুন সিরিজটি চীনের বিশাল ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক বিস্ময় প্রকাশ করবে এই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহরগুলোকে শৈল্পিক উপায়ে সব ধরনের মিডিয়াতে উপস্থাপন করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবাসন ও নগর-পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং সিএমজি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সূচনা হিসাবে নতুন তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং উভয় পক্ষ একটি আধুনিক চীনা সভ্যতা বিনির্মাণে যৌথভাবে অবদান রাখতে ভবিষ্যতে বহু-ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

২. চীনের কুংফু চা-সংস্কৃতি

চীন বিশ্বের এমন একটি দেশ, যে দেশে সবচেয়ে আগে চা উৎপাদন করা হয় এবং চা খাওয়ার রীতি-নীতি চালু হয়।  

হুয়া চা, লোংচিং চা, কুংফু চা, কুয়োকুনাও চা এবং বিভিন্ন ফুলের বিখ্যাত চায়ের সংস্কৃতি আছে চীনের। এতোসব চায়ের উপস্থিতি চীনা চা শিল্পকে করেছে অনন্য।

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের ছাওশানের বাসিন্দাদের জীবনধারায় স্থায়ী উত্তরাধিকার হিসেবে পরিচিত কুংফু চা সংস্কৃতি।

এই চা অত্যাধুনিক কৌশল, পরিশুদ্ধ সামগ্রী , অনন্য চা তৈরি এবং স্বাদ গ্রহণের পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

  

এখানকার স্থানীয়দের জন্য চা অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাবারের মতোই অপরিহার্য পানীয়।

স্থানীয় চা কারিগরের মতে, কুংফু চায়ের শিল্প দক্ষিণ চীনের ছাওশান অঞ্চল থেকে উদ্ভূত চা তৈরি এবং পরিবেশনের একটি শৈলীগত পদ্ধতি।

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের ছাওশান অঞ্চলটি কুংফু চায়ের জন্য বিখ্যাত, যেখানে ওলং চা পাতা, চমৎকার পাত্র এবং বিশেষ চা তৈরির পদ্ধতির ব্যবহার রয়েছে।

স্থানীয় লোকেরা প্রায়শই বলে থাকেন তাদের শহরে চালের দোকানের চেয়ে বেশি চায়ের দোকান রয়েছে, তাদের দৈনন্দিন জীবনকে  চা থেকে আলাদা করা যায় না। যেখানেই ছাওশানের মানুষ, সেখানেই কুংফু চায়ের প্রচলন।

এই চা সংস্কৃতি সম্পর্কে কুংফু চা শিল্পের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রাদেশিক উত্তরাধিকারী ছাং হুইফেং জানান,

‘ছাওশানের লোকদের চা সংস্কৃতির অসাধারণ সাধনা এবং উন্নত দক্ষতা রয়েছে। এটি কুং ফু চা সংস্কৃতির সংজ্ঞা। এটি ছাওশানের মানুষের জীবনধারা। আমরা  এটিকে 'চা ভাত' বলি, কারণ এটি খাবারের মতো আমাদের জন্য অপরিহার্য’।

অতীতে শানথৌ বন্দর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিপুল পরিমাণ চা রপ্তানি হতো বলে জানান ছাং হুইফেং।

২০০৯ সালের অক্টোবরে, কুংফু চা শিল্পকলা কুয়াংতোংয়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বকারী আইটেমগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। 

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মেডোগ কাউন্টির ক্যলিং  গ্রামটি বেশ কয়েক বছর আগে চা চাষ শুরু করার পর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। 

দুর্গম ভূখণ্ড এবং ঘন বনের কারণে গ্রামটি একসময় দুর্গম ছিল। ২০১৩ সালে মেডোগ হাইওয়ে খোলার ফলে সংযোগের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ উন্মুক্ত করেছে। 

এখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চা বাগানকে কেন্দ্র করে একটি পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটনের বিকাশের দিকেও নজর দিয়েছে।

চীনের ঐতিহ্যবাহী চা উৎপাদন, পরিবেশন ও পানের রীতি ২০২২ সালে ইউনেস্কোর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নেয়। এর আগে ২০০৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ চা-পান শিল্পের ঐতিহ্যগত ও অর্থনৈতিক মূল্যকে বিবেচনায় নিয়ে ২১ মে’কে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। 

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

 

৩. ঢাকায় কনফুসিয়াস ক্লাসরুম উদ্বোধন

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা চীনের বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি এঁকেছেন। অন্যদিকে চীনের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এঁকেছেন বাংলাদেশের ছবি। সম্প্রতি বাংলাদেশের শান্ত-মারিয়াম ইউনিভারসিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির কনফুসিয়াস ক্লাসরুম এবং চীনের হোংহ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের আনুষ্ঠানিক পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেখা যায় এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এমন বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের তরুণদের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে তোলাই এমন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য বলে জানান আয়োজকরা। এ উপলক্ষ্যে চীনের ইয়ুননান প্রদেশের হংহ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ঢাকায় এসেছেন প্রতিনিধি দল। হোংহ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোং বো তুলে ধরেন এ আয়োজনের ইতিবাচক দিকের বিষয়টি।

‘বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের দশম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে ২০২৩ সালে। মানবজাতির অভিন্ন ভবিষ্যতের জন্য কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীন এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট কাজ করেছে।  দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ ধরনের বিনিময় কার্যক্রমের আয়োজন অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ ।এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব ও বিনিময়ের একটি  প্লাটফর্ম তৈরি করবে।’

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। 

‘বাংলাদেশে দুটি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট ও একটি কনফুসিয়াস ক্লাসরুম রয়েছে। তারা চীনা ভাষা শিক্ষা দিচ্ছে। ভাষা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন তৈরি করে। চীনাভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে তারা দুই দেশের বন্ধুত্বের দূত হবে।’

এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশি করে আয়োজিত হওয়া প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। প্রতিবছর আরও বেশি বাংলাদেশী শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর ইয়ুয়ে লি ওয়েন দুই দেশের বন্ধুত্ব গভীর করতে সাংষ্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ বিভাগে প্রথম পুরস্কার পান শান্ত-মারিয়াম ইউনিভারসিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ছাত্র মিনহাজ মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চীনের ঐতিহ্যবাহী লায়ন ডান্স, পাখা থাইচি, বাংলাদেশের লোকসংগীত এবং ধ্রুপদী নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে শান্ত মারিয়াম ফাউন্ডেশন ভবনে চীনা ও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।