থোং নান লেবু কীভাবে জনপ্রিয় হয়েছে?
2023-12-01 21:54:04

চীনের ছোং ছিং মহানগরের থোং নান অঞ্চলের পাই চি উপজেলায় অবস্থিত একটি লেবুকেন্দ্র। আপনি সেখানে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন, হলুদ রঙের লেবু বাতাসে দুলছে; নাকে লেবুর সুগন্ধ ভেসে আসছে; অনেক কৃষক লেবু তুলতে ব্যস্ত। ট্রাকের আওয়াজ এবং কৃষকদের হাসিমুখের পিছনে একটির পর একেকটি হলুদ লেবু থোং নান থেকে বের হয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

থোং নান বিশ্বের তিনটি লেবু উত্পাদনকারী স্থানের একটি। লেবুর মাধ্যমে এখানে একটি বড় শিল্প চেইন গড়ে উঠেছে। চারা উৎপাদন ও লালন থেকে শুরু করে চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ৩৫০টিও বেশি পণ্য তৈরিসহ থোং নান লেবু ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছে।

থোং নান অঞ্চলের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রচার কেন্দ্রের লেবু শিল্পবিষয়ক উপপরিচালক চৌ লুং ইয়া জানান, থোং নান অঞ্চলে মূলত ইউলিখ্য প্রজাতির লেবু চাষ হয়। এ ধরনের লেবু সুগন্ধযুক্ত ও রসালো এবং এতে উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। এ লেবুর অনেক সুবিধা থাকলে এর একটি মারাত্মক শত্রু রয়েছে। সেটি হলো ‘ইয়েলো ভেইন’ রোগ। লেবু গাছ এ রোগে আক্রান্ত হলে উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণ উভয়ই কমে যায়।

এ রোগ প্রতিরোধের জন্য ২০১৮ সালের শেষ দিকে ছোং ছিং শহরের পাই চি উপজেলায় প্রথম লেবু ভাইরাসমুক্ত চারা উৎপাদন ও লালনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

দু বছরের প্রচেষ্টার পর ২০২০ সালে এ কেন্দ্র প্রথম দফার ভাইরাসমুক্ত চারা চাষ করে। এ চারা উত্স থেকে ‘ইয়েলো ভেইন’ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাছাড়া এ চারা লাগালে লেবু গাছ সহজে বাড়ে। বর্তমানে এ কেন্দ্র বছরে সি ছুয়ান এবং ছোং ছিং’র জন্য ৬ লাখ ভাইরাসমুক্ত চারা যোগান দিচ্ছে।

ভালো মানের চারা থোং নান লেবু চাষের জন্য ভালো ভিত্তি স্থাপন করেছে। এর ভিত্তিতে থোং নান অঞ্চল লেবু শিল্পের মানদণ্ড প্রণয়ন করেছে। লেবু চাষের মানদণ্ড, মাত্রা ও সরঞ্জাম উন্নয়ন করে উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণ উন্নত করছে অঞ্চলটি।

তাছাড়া লেবুর গুণ নিশ্চিত করতে অঞ্চল, উপজেলা ও গ্রাম – এই তিন পর্যায়ের তত্ত্বাবধান নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে, যার মাধ্যমে দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ, অনলাইনে রোগ নির্ণয় এবং তাজা ফল তোলার পরপরই ২০০টিও বেশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরীক্ষা সম্ভব হয়।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত থোং নান লেবুর চাষের আওতায় এসেছে ২১ হাজার ৩৩৩ হেক্টরেরও বেশি জমি। ২০২২ সালে এ অঞ্চলে তাজা লেবু উত্পাদনের পরিমাণ ২ লাখ ৮০ হাজার টন, যার আর্থিক মূল্য ৬০০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি।

থোং নানের হাইটেক অঞ্চলে অবস্থিত ছোং ছিং মেং থাই বায়োটেকনোলজি কোম্পানি। এ কোম্পানির কারখানায় একটি স্বয়ঃক্রিয় লাইনে নতুন পেকটিন পণ্য তৈরি হচ্ছে। কোম্পানির অংশীদার ও প্রযুক্তি বিষয়ক পরিচালক সুন শি ছিয়াও বলেন, “এ উত্পাদন লাইনে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি ছয় পদক্ষেপে লেবু বিচ্ছেদ ও নিষ্কাশন প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি আমরা নিজেরাই উদ্ভাবিত করেছি। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে লেবুর রসের থলি, বাইরের কর্টেক্স, মধ্যম কর্টেক্স, সজ্জা ও লেবুর মূল থেকে কয়েক ডজন উচ্চ মূল্য সংযোজন পণ্য নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে লেবুর শত শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে।”

এ উত্পাদন লাইনে প্রতিবছর ২ হাজার টন পেকটিন তৈরি হয় এবং সি ছুয়ান ও ছোং ছিংয়ের ১ লাখ টন তাজা লেবু ব্যবহার করা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে তাজা ফলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং পণ্যের সংযোজন মূল্য উন্নয়ন করতে থোং নান প্রক্রিয়াজাতের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং অব্যাহতভাবে নতুন পণ্য তৈরি করছে। লেবু পানীয়, লেবু কেক, লেবু ফেসিয়াল মাস্ক ও লেবু সাবানসহ নানা পণ্য উত্পাদন করে থোং নান। বর্তমানে থোং নান লেবু থেকে পানীয়, সবুজ খাদ্য, ত্বকের যত্নপণ্য, বায়োমেডিসিন এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্যসহ ৫ ধরনের ৩৫০টিও বেশি পণ্য তৈরি করছে। লেবু প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে ১ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত থোং নান লেবু রাশিয়া, কাজাখস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ৩০টি ও বেশি দেশ ও অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। ২০২২ সালে এ অঞ্চল থেকে লেবু রপ্তানির পরিমাণ ৩৯ হাজার ৮শ টন ছাড়িয়ে যায়, যার আর্থিক মূল্য ৩২ কোটি ৯০ লাখ ইউয়ান।

(রুবি/রহমান)