‘চলতি বাণিজ্য’
2023-12-01 15:16:56

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

 

চলতি বাণিজ্যের ৪৬তম পর্বে থাকছে:

১. সিচুয়ানে মেধাস্বত্ব মেলা: গবেষণা ও উদ্ভাবনের অন্যরকম প্রদর্শনী

২. ইংলিশ চ্যানেলে চলাচল করবে চীনে তৈরি যাত্রীবাহী জাহাজ

৩. চীনা সরবরাহ ব্যবস্থা আকর্ষণ করেছে তুরস্কের ব্যবসায়ীদের

সিচুয়ানে মেধাস্বত্ব মেলা: গবেষণা ও উদ্ভাবনের অন্যরকম প্রদর্শনী

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানে হয়ে গেল ৯ম চীন আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব মেলা বা কপিরাইট এক্সপো। এখানে তুলে ধরা হয় চীনের বিভিন্ন শিল্প ও গবেষণায় কপিরাইট বিষয়ক নানা অর্জনের কথা। পাশাপাশি বিভিন্ন কপিরাইট শিল্পে অন্তর্ভুক্ত নানা পণ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এই মেলায়।

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ছেংতুতে বসে এক অন্যরতম মেলা। নজর কাড়া কোন সৌন্দয্য বা সৌখিন পণ্য নয়, বরং গবেষণা ও উদ্ভাবনে ঝিলিক দেওয়া সব অর্জনের প্রদর্শনী হয় এখানে। ৩ দিনব্যাপী এই মেলায় দেখানো হয় বিভিন্ন শিল্প ও গবেষণায় নানা অর্জনের চিহ্ন। তুলে ধরা হয় কপিরাইট শিল্পে অন্তর্ভুক্ত নানা পণ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের খুঁটিনাটি।

কেবল সরাসরি অংশগ্রহণ নয় বরং এ মেলায় ছিলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির জন্য অনলাইনে যোগদানের সুযোগও। সেখানে নিজেদের বিভিন্ন মেধাস্বত্ব অর্জন, প্রযুক্তি ও পণ্য প্রদর্শন করে প্রতিষ্ঠানগুলো।

আবার জ্ঞানপিপাসুদের জন্য এই মেলার সাইডলাইনে ছিলো ফোরামে অংশ নেওয়ার সুযোগ। পাশাপাশি আয়োজন করা হয় দুটি সাব-ফোরাম। এর একটিতে ছিলো চায়না-আফ্রিকা কপিরাইট সহযোগিতা এবং অন্যটিতে সাংস্কৃতিক উত্তরাধীকার। 

 

লু ওয়েই, প্রধান, ন্যাশনাল কালচারাল বিগ ডেটা আইডেনটিফিকেশন সেন্টার

“আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এমন একটি কপিরাইট এক্সপো করার মাধ্যমে আমরা আমাদের কপিরাইটকে বিশ্বব্যাপী পৌছে দিতে পারবো। আমাদের আরও বেশি কপিরাইট সুবিধা থাকতে হবে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ভালো কাজের পরিবেশ দিতে হবে আর বিশ্বকে জানাতে হবে যে আমাদের চীনা সংস্কৃতি আসলে কেমন।“

মেধাস্বত্ব মেলার যৌথ আয়োজক চীনের জাতীয় মেধাস্বত্ব প্রশাসন –এনসিএসি, সিচুয়ানের মেধাস্বত্ব প্রশাসন ও ছেংতু স্থানীয় সরকার। মেলার সমাপনী দিনে কপিরাইট অ্যাওয়ার্ড, ক্রিয়েটিভিটি অ্যাওয়ার্ড এবং দ্য অ্যাওয়ার্ডস ফর ইউটিলাইজেশন, কপিরাইট প্রোটেকশন অ্যান্ড কপিরাইট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ম্যানেজমেন্ট ঘোষণা করে দ্য ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অরগাইজেশন –ডাব্লিউআইপিও এবং এনসিএসি।

২০১৮ সালে শুরুর পর চীনের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ বিষয়ক কার্যক্রমের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এনসিএসি। একইসঙ্গে এখান থেকে মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংরক্ষণ, উৎসাহিত করা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছ সংস্থাটি।

 

ভিনদেশে চীন:

ইংলিশ চ্যানেলে চলাচল করবে চীনে তৈরি যাত্রীবাহী জাহাজ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ইংলিশ চ্যানেলে চলাচল করবে চীনে তৈরি যাত্রীবাহী জাহাজ ‘পি অ্যান্ড ও লিবার্টি’। রো-রো ধরনের এই জাহাজটি একইসঙ্গে দেড় হাজার যাত্রী ও ৭শ’ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পরিবহন করতে সক্ষম। নির্মাণকারী সংস্থা বলছে, ইউরোপীয়ান যাত্রীবাহী রুটে চলাচলকারী এই জাহাজটি চীনে তৈরি প্রথম নৌযান।

বেশি সংখ্যক যাত্রীপরিবহনে সক্ষম জাহাজ তৈরি করেছে চীন। এই জাহাজে সন্নিবেশ করা হয়েছে হাইব্রিড পাখা। উভমুখী রো-রো ধরনের এই যাত্রীবাহী জাহাজ চলবে ইংলিশ চ্যানেলে।

এরইমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষে জাহাজটি হস্তান্তর করেছে নির্মাণকারী সংস্থা কুয়াংচৌ শিপইয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। তারা বলছে, ইংলিশ চ্যানেলের ক্যালে রুটে চলাচল করবে এই জাহাজটি।

দৈর্ঘ্য ২৩০ দশমিক ৫ মিটার ও প্রস্থে ৩০ দশমিক ৮ মিটার এই জাহাজটি যাত্রী পরিবহন করতে পারে দেড় হাজার। একইসঙ্গে ৭০০ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পরিবহনের সক্ষমতাও আছে জাহাজটির। পাশাপাশি যাত্রীদের চলাফেরার জন্য আছে ১০ হাজার বর্গমিটারের বিশাল খোলা জায়গা। যাত্রীদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক করতে আছে সুসজ্জিত ও পরিপাটি করে রাখা হয়ে পুরো জাহাজটি।

নির্মাণ শৈলিতে অসাধারণ এই জাহাজটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো চলার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা। কেবল উৎপাদনই নয়, বড় আকারের ব্যাটারিতে এই বিদ্যুৎ পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য জমা করেও রাখা যায়।

এই বৃহৎ আকারের সক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজটি বিশ্বের প্রথম দুটি ব্যাটরি হাইব্রিড রো রো জাহাজের একটি। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পি অ্যান্ড ও পাইওনিয়ার নামের জাহাজটি সরবরাহ করা হয়।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনা সরবরাহ ব্যবস্থা আকর্ষণ করেছে তুরস্কের ব্যবসায়ীদের

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা আকর্ষণ করেছে তুরস্কের ব্যবসায়ীদের। তুরস্কের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন ঝুঁকছে চীনা মডেলের সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিজেদের ব্যবসায় কাজে লাগাতে। বিশেষ করে ব্লকচেইন, সরবরাহ চেইনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নানা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী তুরস্কের ব্যবসায়ীরা।

সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে চীনের ব্লকচেইন ও সরবরাহ চেইনের আধুনিকায়ন। এরইমধ্যে চীনা পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও লক্ষ্য করা গেছে।

চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন ডিজিটাল রূপান্তর ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তাই নজর কেড়েছে এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী দেশ তুরস্কের ব্যবসায়ীদের। চীনা সরবরাহ ব্যবস্থার সক্ষমতাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা বাণিজ্যে কাজে লাগানোর ব্যাপারে বিশ্বাসী তারা।

খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী এমনই একটি তুর্কি কোম্পানি ট্যাব ফুড ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কোরহান কুরদোওলু জানান, দুই দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করার যে সম্ভাবনা আছে তাকে কাজে লাগানো জরুরি।

কোরহান কুরদোওলু, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, ট্যাব ফুড ইনভেস্টমেন্ট

“আমরা বুঝতে এসেছি যে চীন সত্যিই প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনে কোন কোন ক্ষেত্রে কতোটা উন্নতি করলো। আমরা চীনের নানা বিষয় দেখে অনেক কিছু শিখেছি। চীনের ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সমস্ত কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। বিশেষ করে সরবরাহ চেইনের ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়। কাজেই আমরা খুঁজছি কীভাবে আমরা আরও বেশি স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করতে পারি, আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও নিখুঁত করতে পারি এবং আমাদের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটাতে পারি।“

সম্প্রতি চীনে শুরু হওয়া এক প্রদর্শনীতে চীনা সরবরাহ চেইনের কিছু নমুনা তুলে ধরা হয়। সারা বিশ্বে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় দ্রুত সেবাদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম স্বাধীন কোম্পানি টিএফআই। এর অধীনে আছে চীনের বার্গার কিং। চীনা এই প্রতিষ্ঠানের আছে অন্তত দেড় হাজার স্টোর। এই প্রদর্শনীতে দেখানো হয়, কোম্পানিটি কীভাবে পুরো দেশের শিল্পখাতে ভূমিকা পালন করছে এবং কতোটা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এমন উদাহরণ থেকে বেশ উৎসাহ পেয়েছেন তুরস্কের এই ব্যবসায়ী।

 “আমার মনে হয় চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করার ব্যাপক সম্ভাবনা তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি চীনের মানুষ, চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তুরস্কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেকটা পরিপূরক হয়ে কাজ করতে পারে।“

চীনা শিল্প চেইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই উদ্যোক্তা জানান, ডিজিটাল উদ্ভাবন ও বিকাশের নানা মাত্রিক ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তার কথা। তিনি জানান, চীন ও তুরস্ক, দুই দেশের বাজারের যে লুকানো সম্ভাবনা এখনো আছে তাকে কাজে লাগাতে পারলে উভয় দেশের অর্থনীতিতেই তার ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।