আকাশ ছুঁতে চাই ৪৬
2023-11-30 17:06:59

১. জামদানি পণ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোগী নারী শিমুল চন্দ্র

২. গোবি মরুভূমিতে আঙুরের বাগান গড়েছেন নারী

৩. জান্নাতুলের ঘুরে দাঁড়ানো

৪. নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

জামদানি পণ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোগী নারী শিমুল চন্দ্র

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দিনব্যাপী চ্যারিটি বাজার। সেখানে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাবারের পাশাপাশি জামদানি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বাংলাদেশের মেয়ে  শিমুল চন্দ্র।দিনব্যাপী তার জামদানি পণ্য নজরকাড়ে দর্শনার্থীদের। এই আন্তর্জাতিক চ্যারিটি বাজার ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আফরিন মিম।

 

বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জের মেয়ে শিমুল চন্দ্র। বেশ কয়েক বছর ধরে জামদানি শাড়ি ও গহনাসহ নানা পণ্য নিয়ে নিজে কাজ করছেন তিনি। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন নিজের উদ্যোগ মাধবী ফ্যাশন ।

প্রাচীন বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য জামদানি বুনন এবং এর নকশা। জামদানি বাংলার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। জামদানি নকশা সূচিকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয় না, ছাপাও হয় না। এর বুনন এক বিস্ময়কর বয়নকৌশল, যা শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর। এই নকশা সরাসরি তাঁতে বোনা। স্বচ্ছ জমিনে অস্বচ্ছতার মোহনীয়তায় প্রতিটি নকশাই স্বতন্ত্র, অনন্য আর সূক্ষ্ম। নকশাগুলোতে দেখা যায় জ্যামিতিক প্যাটার্নের ব্যবহার। আর এই ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে কাজ করে নিজেকে সাবলম্বী করেছেন তিনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী চ্যারিটি বাজারে অংশগ্রহণ করেন শিমুল চন্দ্র । নিজের উদ্যোগের তৈরি পণ্যের পসরা দেখা যায় সেই বাজারে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কল্যাণমূলক সংগঠন ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা) আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং তার সহধর্মিনী ও ফোসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সেলিনা মোমেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চ্যারিটি বাজার থেকে আয় করা অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

দেশ বিদেশ দেখে আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে দেশি পণ্য । আর প্রতিবছরের মতই এই মেলায় অংশগ্রহণ করে খুশী শিমুল চন্দ্র। 

সিএমজি বাংলাকে তিনি বলেন,  ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক জামদানি নিয়ে আমি কাজ করছি। আমি খুবই গর্বিত আমার এলাকার ঐইতিহ্যবাহী এই জামদানী নিয়ে কাজ করতে। এখানে বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত বিদেশিরা এবং দেশের উচ্চ পদস্ত অনেকেই আসেন যারা দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছেন তারা আসেন । তখন দেখা যায় আমি আমার এলাকার তৈরি জামদানিকে রিপজেন্ট করার সুযোগ পাই। ’

দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এ চ্যারিটি বাজারে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, নেপাল, সেনেগাল, ভিয়েতনাম, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের স্টল।  সেসব স্টলে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক, ব্যাগ, বই ও সুস্বাদু খাবারের পসরা দেখা যায় ।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

গোবি মরুভূমিতে আঙুরের বাগান গড়েছেন নারী

চীনের উদ্যোগী নারী সু চিনপিং। তিনি গোবি মরুভূমিতে আঙুরের বাগান গড়েছেন। চলুন শোনা যাাক এই উদ্যোগী নারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলারকথা। চায়না মিডিয়া গ্রুপ সম্প্রতি তাদের নতুন তথ্যচিত্র সিরিজ ‘স্ন্যাপশট অব মর্ডনাইজেশন’ এ তুলে ধরেছে এই গল্প।

উত্তর পশ্চিম চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এখানে রয়েছে গোবি মরুভূমির একটা অংশ। সেই ঊষর মরুভূমিতে আঙুর বাগান গড়ে তোলার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন উদ্যমী নারী সু চিনপিং। গোবি মরুভূমির একটি গ্রাম হাওইয়ুয়ান গ্রাম। ২০০৮ সালে এই এলাকায় শুরু হয় পরিবেশ সুরক্ষা ক্যাম্পেইন। এর মাধ্যমে এখানে আঙুর বাগান, তরমুজ বাগান গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রথম যারা বাগান করতে উৎসাহী হন তাদের একজন সু চিনপিং। তিনি এখানে আঙুরের খামার গড়েন। নিজের আঙুর খামারে কাজ করতে করতে হাস্যোজ্জল সু বলেন, বিশ বছর আগে হলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারতো না যে এখানে সবুজ আঙুর বাগান গড়ে তোলা সম্ভব। সু অনেক পরিশ্রম করে  এখানে বাগান গড়েন।

 

 সু বলেন এখানে আকাশে একটা পাখিও দেখা যেত না। যতদূর চোখ যায় কেবলি মরুভূমি। বাগান গড়ার কাজ করার সময় মরুভূমির গরম হাওয়ার মোকাবেলা করতে হতো। মুখ বালিতে ভরে যেত। ত্বক সূর্যের তাপে ঝলসে যেত।

সেইসব মোকাবেলা করে এখানে সবুজ ভূমি গড়তে হয়েছে। তবে আঙুর মরুভূমিতে খুব ভালো ভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রচুর তাপ, সূর্যের আলোক, শুষ্ক ভূমি আঙুরের বৃদ্ধিতে ভালো ভূমিকা রাখে।

স্থানীয় সরকারের সহায়তায় এখানে  আঙুর চাষ শুরু হয়। বর্তমানে হাওইয়ুয়ান গ্রামের ৭০শতাংশ অধিবাসী আঙুর বাগান ও ওয়াইন ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িত। বর্তমানে তাদের গড় বার্ষিক রোজগার জনপ্রতি ৩০ হাজার ইয়ুয়ান।

শুধু যে নিজের রোজগার বাড়িয়েছেন সু তা নয়। সেই সঙ্গে পরিবেশ উন্নত করনেও ভূমিকা রেখেছেন। গাছ লাগানোর ফলে বালির ঝড় কমেছে। মরুকরণ রোধ হয়েছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

জান্নাতুলের ঘুরে দাঁড়ানো

বাংলাদেশের সাহসী নারী জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি সম্প্রতি তার ঘুরে দাঁড়ানোর জীবন সংগ্রামে অন্য অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।

তিনি একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা।পাশপাশি কাজ করছেন নারীর অধিকার নিয়ে। বিস্তারিত জানবো আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।

এক অগ্নি দুর্ঘটনায় তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি একজন চিত্রনির্মাতা, লেখক ও অধিকারকর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন। বলছি বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস আইভির কথা।

তিনি 'ভয়েস অ্যান্ড ভিউস' নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। এই সংস্থাটি অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে আসা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে।

তিনি তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আইভি নামেই বেশি পরিচিত। এ পর্যন্ত ৫টি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন আইভি। এ ছাড়া তার লেখা ৩টি উপন্যাসও ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি তার গল্প বলার সহজাত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে চারপাশের মানুষের মাঝে শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেন।

২০০৯ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন আইভি। এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ও ২০০১ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

পাশাপাশি ২০১০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

নারীর প্রতি সহিংসতা দূর হোক

 

নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণ দিবস ছিল ২৫ নভেম্বর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়েছে নারীদের প্রতিবাদ মিছিলের মধ্য দিয়ে। ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে নারীরা জেন্ডার সহিংসতার অবসান চেয়ে সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।

ইউরোপের কয়েকটি দেশেও নারীদের গণ জমায়েত ও প্রতিবাদ মিছিল ছিল দিবসটিতে। ইতালিতে এ বছর দিবসটি আরও বেশি তাৎপর্য পায়। সম্প্রতি ইতালির এক তরুণী তার সাবেক সঙ্গীর হাতে নিহত হলে ৫০ হাজার মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ ঘটে। রোমের কলোসিয়ামে লাল আলো জ্বালিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করার আহ্বান জানান প্রতিবাদী নারী ও পুরুষরা।

ফ্রান্সে কয়েক হাজার নারী পুরুষ প্রতিবাদী মিছিল করেন ২৫ নভেম্বর। তুরস্কের ইসতানবুলে ৫০০ নারী এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ঐক্যবদ্ধ হও। নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করো।’

এদিকে, পারিবারিক সহিংসতা মোকাবেলা করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আরও ক্ষতির শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন চীনের উচ্চ আদালত বা সুপ্রিম পিপলস কোর্ট । ২৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করার পর চীনের আদালতে এমন কথা বলা হয়। মারধর, আটকে রাখা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা অধিকার খর্ব করাসহ মানসিক ক্ষতি যেমন ভয় দেখানো এবং গালিগালাজকেও পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে গণ্য করা উচিত মন্তব্য করেছেন চীনা উচ্চ আদালত।

 

 চীনের নারীর অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত সংশোধিত আইন অনুযায়ী, যদি কোনও নারী সম্পর্কের সময় বা বিবাহবিচ্ছেদ বা বিচ্ছেদের পরে হয়রানি বা কোনো সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন তাহলে তিনি আদালতে এই ধরনের আদেশের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

১৯৬০ সালে ডোমিনিকান রিপাবলিকের তিন বোনের হত্যাকাণ্ডের দিবস ২৫ নভেম্বরকে চিহ্নিত করে ১৯৮১ সাল থেকে জাতিসংঘ এই দিনটিকে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন দিবসটি পালন করেছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  আফরিন মিম, শান্তা মারিয়া,  শুভ আনোয়ার,

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল