নভেম্বর ৩০: বেইজিংয়ে ২৮ নভেম্বর শুরু হওয়া চায়না ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন প্রমোশন এক্সপোর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এ মেলা বহু আমেরিকান ও ইউরোপীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করেছে। তাদের সংখ্যা বিদেশি প্রদর্শকদের মোট সংখ্যার ৩৬ শতাংশ এবং তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। সাপ্লাই চেইনের থিমযুক্ত বিশ্বের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনী হিসেবে এবারের এক্সপোতে স্মার্ট অটোমোবাইল চেইন, গ্রিন এগ্রিকালচারাল চেইন, ক্লিন এনার্জি চেইন, ডিজিটাল টেকনোলজি চেইন এবং হেলদি লাইফ চেইন – এই পাঁচটি প্রধান চেইন এবং সাপ্লাই চেইন সার্ভিস প্রদর্শনী এলাকা স্থাপন করা হয়েছে। আঠাশ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর – এই ৫ দিনে ৫৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৫ শতাধিক দেশি-বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সাপ্লাই চেইনের নতুন প্রযুক্তি, পণ্য ও পরিষেবা প্রদর্শন করছে।
উল্লেখ্য, সাপ্লাই চেইন এক্সপো শুরুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস সাপ্লাই চেইন বিষয়ক এক সভার আয়োজন করে, একটি ‘সাপ্লাই চেইন সহনশীলতা বিষয়ক কমিটি’ প্রতিষ্ঠা, সেমিকন্ডাক্টর সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাত সম্পর্কিত একটি সতর্কতা ব্যবস্থা গঠন এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়োজনীয় ওষুধের অভ্যন্তরীণ উত্পাদন উদ্দীপ্ত করার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যে, এসব পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বহির্বিশ্বের দৃষ্টিতে, এটি মার্কিন সরকারের প্রতিরক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার কৌশল।
এক্সপোতে বহু সংখ্যক আমেরিকান ও ইউরোপীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাজারের নিয়ম পরিবর্তন করতে পারে না এবং বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ চেইন থেকে চীনকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বায়নের বিপরীত স্রোত এবং শিল্প সরবরাহ চেইনে আঘাত হানার প্রেক্ষাপটে চেইন এক্সপোর আয়োজনের একটি শক্তিশালী ব্যবহারিক তাৎপর্য রয়েছে।
বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইন বজায় রাখতে চীনের ধারণাটি বিশ্বজুড়ে শিল্প ও বাণিজ্য মহলের মধ্যে একই আবেদন তৈরি করেছে। ফেডেক্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছেন চিয়ালিয়াং বলেন, যৌথভাবে একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল, মসৃণ, দক্ষ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সবার জন্য উপকারী ও লাভজনক শিল্প ও সরবরাহ চেইন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত চীনের প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো আমাদের উন্নয়নের দিকের সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা চীনে পুঁজি বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ক্ষেত্রে আস্থা দৃঢ় করে তুলেছে।
এবারের এক্সপোতে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন প্রমোশন রিপোর্টে’ দেখা যায়, চীন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের সহযোগিতায় অতি-বৃহৎ-পরিধির বাজারের সুযোগ, সম্পূর্ণ শিল্প সুযোগ, উন্মুক্ত নীতির সুযোগ এবং উদীয়মান উদ্ভাবনের সুযোগ প্রদান করেছে।
আগামী পাঁচ বছর চীনের পণ্য বাণিজ্য এবং পরিষেবা বাণিজ্যের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ যথাক্রমে ৩২ ট্রিলিয়ন এবং ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রাখবে চীন।
আরও গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেখা যায়, জটিল ও গুরুতর আন্তর্জাতিক পরিবেশের মুখেও চীনের অর্থনীতির দৃঢ় সহনশীলতা, ক্রমাগত উন্মুক্ততা সম্প্রসারণ এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার দৃঢ় মনোভাব চীনে বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করেছে। রয়টার্স ২৮ নভেম্বর এক নিবন্ধে বলেছে, “বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীন একটি আকর্ষণীয় বিকল্প।” ব্লুমবার্গ জানায়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি এবং ভোক্তাচাহিদা দুর্বল হওয়ার পরিস্থিতিতে অনেক কোম্পানির পক্ষে চীনকে প্রতিস্থাপন করতে পারে এমন ‘উৎপাদন কেন্দ্র’ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এবারের এক্সপোতে যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ-সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা মোট সংখ্যার অর্ধেক। শিল্প ও সরবরাহ চেইনের সুযোগ-সুবিধা প্রদর্শন এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার প্লাটফর্মে সংযুক্ত করার জন্য ভালো প্লাটফর্ম যুগিয়েছে এ এক্সপো। তা ছাড়া, চীন কিছু অনুন্নত দেশকে এক্সপোতে অংশ নিতেও সাহায্য করেছে।
এবারের এক্সপোতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের সহযোগিতার অংশগ্রহণকারী ও নির্মাণকারী হওয়া উচিত্, বিনষ্টকারী নয়।
লিলি/রহমান/রুবি