এবারের পর্বে রয়েছে
১. সতেজ ফলের উৎপাদক দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি কুড়িয়েছে চীন
২. তীব্র শীতে কীভাবে বেঁচে থাকে মরুভূমির উটরা?
৩. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে চীনের কৃষি ব্যবস্থা
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
কৃষিবান্ধব প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং
সতেজ ফলের উৎপাদক দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি কুড়িয়েছে চীন। এর বিভিন্ন প্রদেশে রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জায়গাজুড়ে ফলের বাগান। আধুনিক প্রযুক্তি ও সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে কৃষকদের নিত্যদিনের কাজ। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এসব মানুষদের নানামুখী চ্যালেঞ্জের কথা সরাসরি শুনতে প্রায় সময় এসব এলাকায় পরিদর্শন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। সমাধান দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে শোনান সম্ভাবনার কথা।
দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও নিয়মিতভাবে কৃষিজমি পরিদর্শন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।
কৃষি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করেন তিনি। যেখানে উঠে আসে সফলতা আর সম্ভাবনার কথা। একইসঙ্গে এ কাজে নানামুখী চ্যালেঞ্জের কথাও মন দিয়ে শোনেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোকে আধুনিক কৃষির দিকে ঠেলে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এতে করে বার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়, যার লক্ষ্য থাকে সমৃদ্ধ কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
সম্প্রতি তিনি পরিদর্শন করেন উত্তর-পশ্চিম চীনের শানসি প্রদেশের ইয়ানআন এলাকা। সেখানকার বিভিন্ন ফলের বাগান ঘুরে দেখেন তিনি। বিশেষ করে স্থানীয় আপেল ও ডালিমের বাগানে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন প্রেসিডেন্ট সি। তাদের মুখ থেকে নানা রকম চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা শোনেন তিনি।
এই সফরে তিনি আরও পরিদর্শন করেন কুয়াংতং প্রদেশের পাইছিয়াও গ্রামের লিচু উৎপাদন এলাকা। এ ধরনের পঁচনশীল ফল সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর তাগিদ দেন প্রেসিডেন্ট সি। বিশেষ করে গ্রামীণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশে আরো উদ্যোগী হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এবছর চীনের কেন্দ্রীয় সরকার এরইমধ্যে ৫০টি জাতীয় আধুনিক কৃষি শিল্প পার্ক নির্মাণ করেছে। এছাড়া দেশজুড়ে এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি গড়তেও কাজ করছে চীনের কৃষি অধিদপ্তর। এভাবেই দেশটির নাগরিকদের জন্য নিশ্চিত করা হচ্ছে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ আর বিশ্বের কৃষি মানচিত্রে পাকাপোক্ত হচ্ছে চীনের অবস্থান।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
তীব্র শীতে কীভাবে বেঁচে থাকে মরুভূমির উটরা ?
চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ায় শীত বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। এই সময় পশুপাল তাদের গ্রীষ্মকালীন চারণভূমি থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ চারণ ভূমিতে চলে আসে।
মরুভূমির জাহাজ হিসেবে পরিচিত উট। পণ্য পরিবহণ ছাড়াও নানান কাজে আসে মরুভূমির এই প্রাণীগুলো। বিশেষ করে উটের দুধ আর মাংসের চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। আর এজন্যই উট লালনপালনে বেশ মনোযোগী চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় পশুপালকরা।
এই উটগুলো গ্রীষ্মকালীন চারণভূমি থেকে ফিরে আসছে তাদের শীতকালীন চারণভূমিতে। এই প্রদেশের আলক্সা রাইট ব্যানার পার্বত্য মরু অঞ্চলে শীত বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। শীতের শুরুতে তাই পশুপালকরা তাদের পশুপাল নিয়ে ফিরে আসছেন অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ভূমিতে। তারা তাঁবু গুটাচ্ছেন।
আগেকার দিনে উটের পিঠে চড়ে রাখালি করতেন পশুপালকরা। কিন্তু এখন তাদের পদ্ধতির বদল হয়েছে। তারা মোটর বাইকে চড়ে উটের দলকে তাড়িয়ে নিয়ে যান গ্রামের কাছাকাছি চারণভূমির দিকে। হুহ্যউলা গ্রামের পশুপালকরা তাদের উটের পাল নিয়ে চলেছেন। ১০জন পশুপালক ৫০০টি উট প্রতিপালন করেছেন। গ্রীষ্মকালে এরা স্বাধীনভাবে মরুভূমির বুকে চরে বেড়ায়।
এটি চীনের তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি। এখানে প্রাকৃতিকভাবে উটরা বেঁচে থাকতে পারে কারণ এখানে জলাশয় ও মরুভূমির কাঁটাগাছ, কিছুটা ঘাস, ঝোঁপ আছে।
হেমন্তকালে উটের পালকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় শীতকালীন চারণভূমিতে। এই যাতায়াতের জন্য শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় পশুপালকদের। পনেরো দিনের বেশি সময় লাগে গ্রাম থেকে পশুপালকে নিয়ে যেতে। ফিরেও আনতেও এমনি সময় প্রয়োজন হয়। এ বছর ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে উটের পালকে শীতকালীন চারণ ভূমিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে চীনের কৃষি ব্যবস্থা
নিজ দেশের কৃষিক্ষেত্রকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে চীন। সম্প্রতি আন্তজার্তিক স্বীকৃতিও পেয়েছে এ দেশের কয়েকটি কয়েকটি কৃষি ব্যবস্থা। বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণার ক্ষেত্রে কৃষির পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, অর্থাৎ এই হেরিটেজ সিস্টেমগুলোকে শুধুমাত্র কৃষি নয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নেও অবদান রাখতে হবে।
চীনের এমনটি তিনটি কৃষি ব্যবস্থাকে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ঐতিহ্য’ হিসেবে মনোনীত করেছে ফাও।
নতুন এ কৃষি ব্যবস্থাগুলো হলো- উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশের খুয়ানছেং মানছু স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির ঐতিহ্যবাহী ‘চেস্টনাট ইকো-প্ল্যান্টিং সিস্টেম’, পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের শিয়ানচু কাউন্টির ‘প্রাচীন চীনা ওয়াক্সবেরি সংমিশ্রণ ব্যবস্থা এবং পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের থংলিং সিটির সাদা আদা রোপণ ব্যবস্থা।
এই কৃষি ব্যবস্থাগুলো ওই অঞ্চলে পরিবেশের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন, খুয়ানছেংয়ে ঐতিহ্যবাহী চেস্টনাট ইকো-প্লান্টিং সিস্টেমটি ওই অঞ্চলের ভূমিক্ষয় রোধ করার পাশাপাশি একটি অনন্য পাহাড়ি ল্যান্ডস্কেপও তৈরি করেছে। এছাড়া শিয়ানচু কাউন্টির প্রাচীন চীনা ওয়াক্সবেরি সংমিশ্রণ ব্যবস্থা, ওয়াক্সবেরি এবং চা বাগান, হাঁস-মুরগি এবং মৌমাছি পালনের মাধ্যমে ভূমিকা রাখছে।
ওয়াক্সবেরি গাছগুলো আর্দ্রতা ধরে রাখা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং প্রবল বাতাস থেকে রক্ষা করা ছাড়াও চা গাছের জন্য পুষ্টি সংরক্ষণ করে। এই ব্যবস্থা শিয়ানচু মুরগির জন্য পর্যাপ্ত স্থান এবং খাবারের উৎস নিশ্চিত করে।
এছাড়া মৌমাছিরা উদ্ভিদের পরাগায়ন করে, কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এই ব্যবস্থাটি পানি সংরক্ষণ এবং ভূমির ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং অনুসন্ধানের নিরন্তর প্রচেষ্টা কেবল চীনা জাতির দুর্দান্ত কৃষি সভ্যতার উত্তরাধিকারী এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, বরং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন এবং একটি সুন্দর চীন বিনির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী