কিছু দিন আগে, আমি বাংলাদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সাথে ফুচিয়ান প্রদেশের শিয়ামেন ও ছুয়ানচৌ শহরে গিয়েছিলাম। আমি তাদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা, চীনের উন্নয়নের সাফল্যের প্রতি আগ্রহ এবং চীন-বাংলাদেশ পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প খাতে সহযোগিতা সম্পর্কে আশাবাদ দেখে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম।
ছুয়ানচৌ শহর একটি প্রাচীন ও আধুনিক শহরের সংমিশ্রণ। এ শহর দেখে তারা বলেছিলেন: এটি খুব সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আট বছর আগের তুলনায় আরো সুন্দর হয়েছে! শিমাও সামুদ্রিক রেশমপথ যাদুঘর পরিদর্শন করার সময়, তারা বলেছিলেন: তারা সিল্ক রোডের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জেনেছেন এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে রেল সংযোগের জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছেন! তারা যখন হাজার বছরের পুরনো মসজিদটি পরিদর্শন করেন, তখন তারা আবেগের সাথে বলেছিলেন: এখানকার দীর্ঘ ইতিহাস এবং এখানে আসা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের গল্প শুনে আমি খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি!
কিন্তু যে বিষয়টি তাদের সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত করেছে তা হল স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির কারখানা পরিদর্শন করা। উন্নত প্রযুক্তি, সম্পূর্ণ উত্পাদন লাইন এবং ইউরোপীয় ও আমেরিকান বাজারে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডগুলির উন্নয়ন, তাতে তারা তাদের চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে পোশাক উত্পাদন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা উপলব্ধি করেছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন: "এখানে উত্পাদিত পোশাকগুলোর গুণমান খুবই ভালো, স্টাইল ও ডিজাইনও দারুণ, আর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ শক্তিশালী। এবং তারা ধীরে ধীরে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করেছে। আমরাও নিজস্ব কিছু ব্র্যান্ডও তৈরি করেছি এবং এটি ভবিষ্যতে আমাদের প্রচেষ্টার দিকনির্দেশনা।"
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম বলেন: "এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এবং উত্পাদিত পণ্যগুলো খুব উন্নত। এই প্রযুক্তিগুলো যদি অন্য দেশে যায়, তাহলে সেই দেশগুলোর টেক্সটাইল শিল্প উন্নয়নে সহায়ক হবে। আমরা বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তিগুলো চালু করার আশা করছি, এবং আমাদের সরকার ও অ্যাসোসিয়েশন অবশ্যই সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে।"
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন: "এখানকার যন্ত্রপাতি খুবই উন্নত এবং প্রযুক্তিও খুবই নতুন। আমরা আশা করি বাংলাদেশে এই যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগুলো চালু করা যাবে। আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা দেব এবং একসাথে ভাল কাজ করবো।"
চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের আশাবাদী মনোভাব প্রতিধ্বনিত করে চীনা উদ্যোক্তাদের আগ্রহ। ছুয়ানচৌতে স্থানীয় উদ্যোগগুলো বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সাথে মুখোমুখি যোগাযোগের সুযোগকে মূল্যবান মনে করে এবং টেক্সটাইল শিল্পে বাংলাদেশের সুবিধাগুলোও মূল্যায়ন করে।
ফুচিয়ান টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস এক্সপোর্ট বেস চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি চেন ছাং সং বলেছেন: "বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পের সাথে আমাদের শিল্প সহযোগিতা, বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং আমাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের অনেক কাঁচামাল এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি চীন থেকে আমদানি করা হয়। যা ফুচিয়ান টেক্সটাইল শিল্পের সাথে দারুণ ম্যাচ করে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা এবং তরুণ শ্রমশক্তির সুবিধা রয়েছে; উপরন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি করার সময় বাংলাদেশ কম শুল্ক উপভোগ করা যায়। ফুচিয়ান প্রদেশে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের জন্য বিদেশি উত্পাদন কেন্দ্র খোলার জন্য বাংলাদেশে যেতে পারে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমরা একে খুব গুরুত্ব দিয়ে আসছি।”
ফুচিয়ান শিলিয়ানদা গার্মেন্ট এক্সেসরিজ কোং লিমিটেডের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপক চেন হে ইয়াং বলেন, "আমরা বাংলাদেশের বাজারে এক ডজনেরও বেশি কোম্পানির সাথে সহযোগিতা করেছি। আমাদের কোম্পানির পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আমরা বাংলাদেশে একটি অফিস খোলার পরিকল্পনা করছি। আমরা স্থানীয় কারখানাগুলো আরও পরিদর্শন করবো এবং বিনিয়োগ খাতে সহযোগিতা করবো।"
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান ২০২৩’ এর পর্যালোচনায় বলা হয় যে, বাংলাদেশ ২০২২ সালে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বিশ্ববাজারের ৬.১% দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প খাতে সবেমাত্র উচ্চ মজুরির দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটের সম্মুখীন হয়েছিল, সরকার অবশেষে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১২,৫০০টাকা (প্রায় ১১৩ মার্কিন ডলার) বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে। তবে, বাংলাদেশ টেক্সটাইল প্রতিনিধি দলের মতে, এই ধরনের ধর্মঘট সরকারের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত এবং এটি স্থায়ী হবে না। অন্যান্য টেক্সটাইল রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রম খরচের ক্ষেত্রে এখনও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পোন্নয়ন এবং প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে তার উত্পাদন ক্ষমতা উন্নতির জন্যও উন্মুখ হয়ে রয়েছে। যার ফলে পোশাক শিল্পে এর সুবিধাগুলিকে উন্নত করা হবে। একই সময় চীনা কোম্পানিগুলোও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চীনের ওপর আরোপিত বাণিজ্য বিধিনিষেধ এড়াতে চাইছে। বস্ত্রশিল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত সহায়তা এবং অন্যান্য বিষয়ের সাথে সমন্বিত করায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এখনো টেক্সটাইল শিল্পে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
(ইয়াং/তৌহিদ/ছাই)