‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪৬
2023-11-28 16:41:57

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে    

১।  এক জীবনেও চীন ঘুরে শেষ করা যাবে না

২। ঘুরে আসুন চীনের পার্পল ব্যাম্বু পার্ক  থেকে

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।     

১।  সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘এক জীবনেও চীন ঘুরে শেষ করা যাবে না’

ঘুরে বেড়াইয়ের এবারের পর্বে কথা হয়েছে বাংলাদেশের দীপ্ত টেলিভিশনের মার্কেটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসাইনের সঙ্গে। তিনি সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন চীন বেশ কয়েকটি প্রদেশের শহর থেকে।

  

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসাইন

·       ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি?

মোজাম্মেল - ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে স্বাগত জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

·       আপনি তো বেশ কিছুদিন আগে চীন ঘুরে আসলেন।  আমরা জানতে চাই আপনি চীনের কোথায় কোথায় গিয়েছেন?

মোজাম্মেল –আমরা চারজনের একটা টিম ঢাকা ঠেকে কুয়াংচৌ, কুয়াংচৌ থেকে বেইজিং, এরপর ইনার মঙ্গোলিয়া বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। মূলত ইনার মঙ্গোলিয়াতেই আমাদের ট্যুর ছিল, সেখানে আমরা ৮দিনের মতো ছিলাম। ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে আমরা কুনমিংয়ে এসেছি।সেখানে ঘুরে বাংলাদেশে এসেছি। সবমিলিয়ে ১০দিনের মতো আমরা চীনে ছিলাম।

  

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসাইন

 

·       এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?  কোন বিষয়গুলো আপনার বেশি ভালো লেগেছে?

মোজাম্মেল –এক কোথায় চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেননা এটাই আমার চীনে প্রথম ট্যুর ছিল। সবচয়ে মজার ছিল প্রথম ট্যুরেই ইনার মঙ্গোলিয়ার মতো একটা জায়গায় ঘুরার সুযোগ পেয়েছিলাম। ইনার মঙ্গোলিয়া মূলত চীনের উত্তরে অবস্থিত, মঙ্গোলিয়ার কাছাকাছি। সেখানকার আবহাওয়া চমৎকার লেগেছে। এতো রিমোট একটি অঞ্চলে যে এতোটা উন্নত সেটা আমার ভাবনাতেও ছিল না। এছাড়া সেখানকার কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রাস্তাঘাট আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা এতোটা উন্নত, সর্বত্র প্রযুক্তি ব্যবহার দেখে ধারণা হয়েছে চীনের সর্বত্রই উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। সেখানে আমরা খুব কাছ থেকে কৃষিকাজ, ফলের বাগান ,শাক সবজি চাষ দেখেছি। আমরা একটা ডকুমেন্টরি করেছি।

 

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসাইন

 

·       চীন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, তাদের খাবার ভিন্ন, ভাষাও ভিন্ন কিভাবে এই  চীনে থাকার সময়টায় মানিয়ে নিয়েছেন? 

মোজাম্মেল –আমরা চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) আমন্ত্রণে চীনে গিয়েছিলাম। এটা আমাদের একটি রাষ্ট্রীয় সফর ছিল, চীনকে জানার, সংস্কৃতি বিনিময়ের অংশ হিসেবে। চীনের ভিন্ন সংস্কৃতি , ভাষান খাবার আমাদের জন্য সহজ হয়েছিল কারণ আমাদের টিমের নেতৃত্ব দিয়েছে সিএমজির পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী যিনি বাংলাদেশের বন্ধু। তিনি আমাদের সাথে থেকে প্রতিটা জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছেন। আমরা যেখানেই গিয়েছি দেখেছি তারা আমাদের জানে, সেভাবে সবকিছু এরেঞ্জ করেছে। তাদের আতিথেয়তা, খাবার , আন্তরিকতা আমরা খুব এনজয় করেছি। আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি। তারা জানে যে বাঙ্গালি মাছ, ভাত ,শাকসবজি পছন্দ করে তাই আমাদের খাবারে এসবের আধিক্য ছিল।এছাড়া বিভিন্ন চীনা ও ফলমূল খেয়েছি আমরা।  

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসাইন

·       আবার কখনো চীনে যাওয়ার সুযোগ পেলে কেমন লাগবে আপনার?

মোজাম্মেল – আবার যাওয়ার সুযোগ পেলে খুবই ভালো লাগবে। সেক্ষেত্রে নতুন কোন জায়গায় যাওয়ার আগ্রহ বেশি থাকবে।  চীনা সংস্কৃতি অনেক পুরনো সংস্কৃতি, চীনা রাষ্ট্র অনেক বড় একটি একটি, আমার মনে হয় এক জীবনেও চীন ঘুরে শেষ করা যাবে না। চীনের যে বিষয়টা আমার সবচেয়ে ভালোলেগেছে তা হলো তাদের সময়জ্ঞান। তারা সময়ের মূল্য বুঝে সময়মতো সব কাজ করতে ভালোবাসে। এজন্যই তারা বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশ আজ উন্নত দেশের কাতারে । তাদের জীবন যাত্রার ম্যান অনেক উন্নত। তাই আমি বারবার চীনে যেতে চাই।

·       আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

মোজাম্মেল - আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

২। ঘুরে আসুন চীনের পার্পল ব্যাম্বু পার্ক  থেকে

বেইজিংয়ের সাতটি বড় পার্কের অন্যতম হলো পার্পল ব্যাম্বু পার্ক। শরৎ, হেমন্তকাল বা যখন শীত আসি আসি করছে সেসময়টা পার্কে বেড়ানোর সবচেয়ে সুন্দর সময়। এই পার্কের আরেকটি নাম হলো চিচুইয়ুয়ান কংইয়ুয়ান। 

বেইজিংয়ের হাইডিয়ান জেলায় অবস্থিত এই পার্ক। ৪৮ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে পার্কটি। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি লেক। লেকগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি যুক্ত। লেকের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছাংহ্য নদী। লেকের তীরে রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়। কয়েকটি দ্বীপও রয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ সুন্দর। জলাশয়ের তীরে বসে পরিযায়ী পাখিদের দেখা যায়। শীত নামার ঠিক আগে তারা এখানে আসে। শীত পড়লে উড়ে চলে যায় আরও দক্ষিণে।

পাঁচটি সেতু রয়েছে এই পার্কে যা ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি। সেতুগুলো পাথরের এবং সুন্দর কারুকার্য করা। এই পার্কটি প্রথম নির্মিত হয় ১১৫৯ সালে। মিং রাজবংশের সময় সম্রাট ওয়ানলি ১৫৭৭ সালে এখানে রাজকীয় উদ্যান গড়ে তোলেন। ১৯৫৪ সারে পার্কটির সংস্কার হয় এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

এখানে পার্কের ভিতরে একটি আলাদা অংশ গড়ে তোলা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী চীনা কোর্ট ইয়ার্ডের স্টাইলে। এই পার্কের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশগাছ রয়েছে। প্রায় ৫০ প্রজাতির বাঁশ দেখা যায় এখানে। বাঁশঝোঁপ এবং তার নিচে সুন্দর কারুকার্য করা আসনে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী চীনা উদ্যান রীতিতে তৈরি এই পার্কে রয়েছে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন, বাগানে ও জলাশয়ের ধারে বসার ব্যবস্থা, ঝরনা। প্যাডেল বোটে চড়ে লেকে ঘোরার ব্যবস্থা আছে। এখানে সৌখিন মৎস্য শিকারিরা মাছও ধরতে পারেন। পার্কের এক ধারে রয়েছে একটি আর্ট মিউজিয়াম। এখানে বাঁশের তৈরি নানা রকম কারুশিল্প এবং এর ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এর সঙ্গেই রয়েছে একটি সুভ্যেনির শপ। এখানে পাওয়া যায় দোকানে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী ।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী