চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-11-27 15:06:05

 

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৪৬তম পর্বে যা থাকছে:

 

 

* চীনের রোবট-শিল্প বিকশিত হচ্ছে

 

* সমুদ্রের তলদেশে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ডেটা সেন্টার স্থাপন করল চীন

 

* উভচর রোবট তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

 

 

 

 

চীনের রোবট-শিল্প বিকশিত হচ্ছে

মৌলিক গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে চীনের রোবট-শিল্প। মানুষের মতো বা হিউম্যানয়েড রোবট এখন দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হরহামেশাই চোখে পড়ছে। বিভিন্ন শিল্প কারখানায়, হাটে-বাজারে এমনকি গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোবট।

জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়ছে রোবটের ব্যবহার। আর এ চাহিদাকে মাথায় রেখে গড়ে উঠছে রোবট-শিল্প। বিশ্বের অর্ধেক শিল্প-রোবট সরবরাহকারী চীন। তাই ব্যাপক হারে সম্প্রসারিত হয়েছে এ শিল্প।

দেশটির লিয়াওনিং প্রদেশের শ্যনইয়াং সিটির নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রোবোটিক ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরিতে কাজ চলছে নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োগ নিয়ে।

নভেম্বরের শুরুতে চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হিউম্যানয়েড রোবটের উন্নয়নের লক্ষ্যে উদ্ভাবন সম্পর্কিত একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করে। এতে বলা হয়, ২০২৭ সালের মধ্যে চীন বিপুল সংখ্যায় এ ধরনের রোবট উৎপাদনের জন্য এ শিল্পের সক্ষমতা আরও বাড়াবে।

রোবট-শিল্পের পাশাপাশি চীনে রোবট পরিষেবাও বাড়ছে।

সর্বশেষ তথ্য দেখা গেছে, সারা বিশ্বে বিক্রি হওয়া শিল্প সংক্রান্ত রোবটের অর্ধেকেরও বেশি যোগান দেয় চীন। বিশ্বব্যাপী বার্ষিক রোবট বিক্রির তালিকায় টানা ১০ বছর ধরে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে দেশটি। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে চীনে ৩ লাখ ৫০ হাজার শিল্প-রোবট এবং ৬ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন পরিষেবা-রোবট উৎপাদন হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ২১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি৷

দেশটিতে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছ বলে জানিয়েছেন নর্থইস্টার্ন ইউনিভারসিটির স্কুল অব রোবটিক্স সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক তিং ছিচুয়ান।

তিনি বলেন, “মানব মস্তিষ্কের পরিচালনা ও বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এআই প্রযুক্তিতে সাফল্য অর্জনের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। আমরা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমস্যাগুলো সমাধান করছি। আমরা আশা করছি, গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ফলাফলগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করবো।”

চীনের জাতীয় অর্থনীতির ৬০টি বৃহৎ খাত এবং ১৬৮টি মাঝারি খাতে শিল্প-রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য যেমন- এক্সোস্কেলটন রোবটের উৎপাদন, বয়স্কদের যত্ন, জরুরি উদ্ধার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এসব রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে রোবটের ব্যাপক ব্যবহার করার আহ্বান জানান চায়না একাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজির অধীন ইন্সটিটিউট অব ইনফরম্যাটাইজেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন ইন্টিগ্রেশনের প্রধান প্রকৌশলী হুয়াং ওয়েই।

তিনি বলেন, “বর্তমানে ডিজিটাল টুইনস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কাঠামোগত বায়োনিক্সের মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোবট-শিল্প আরও বিকশিত হচ্ছে। আমরা সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করে সেখানে রোবটের ব্যবহার উত্সাহিত করব। জাতীয় অর্থনীতির পাশাপাশি জীবনের সর্বক্ষেত্রে উদ্ভাবনী রোবোটের ব্যাপক ব্যবহার জরুরি।”

চলতি বছরের মধ্যে হিউম্যানয়েড রোবট-শিল্পের আকার দাঁড়াবে ২০ বিলিয়ন ইউয়ান বা ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনের রোবট-শিল্পের রাজস্বের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সাল নাগাদ ২০ শতাংশের উপরে যাবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে।

 

|| প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

সমুদ্রের তলদেশে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ডেটা সেন্টার স্থাপন করল চীন

দিন যত যাচ্ছে প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে চীন। প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে সফলতার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিশ্বে প্রথমবারের মতো সমুদ্রের তলদেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ‘ডেটা সেন্টার’ স্থাপন করল চীন। ইতোমধ্যেই বহুজাতিক আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট পরীক্ষা করেছে এই ডেটা সেন্টার। তারা বলছে, ডেটা সেন্টারটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে প্রবেশ করবে এবং এখান থেকে সেবা পাবে প্রকৃত গ্রাহকরা।

 

চীনের হাইনান প্রদেশের লিংশুই লি স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির উপকূলে শেষ হয়েছে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার (ইউডিসি) স্থাপনের প্রথম পর্যায়ের কাজ। সমুদ্রের তলদেশে এই ডেটা সেন্টার স্থাপনের ফলে বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে দেশটি। পাশাপাশি কেন্দ্রটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ঠান্ডা করতে সমুদ্রের পানিও ব্যবহার করতে পারবে ফলে বিদ্যুৎ খরচও কমে আসবে।

প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজে আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারটির ১ হাজার ৩০০ টন স্টোরেজের একটি ইউনিট সফলভাবে স্থাপন করা হয়। এই ডেটা ইউনিটটি একটি ডেটা ভাণ্ডার এবং একটি সুপার কম্পিউটার উভয়ই হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। পুরো প্রকল্পটি এরকম ১০০টি ইউনিট নিয়ে গঠিত।

তিন ঘন্টার কঠোর পরিশ্রমের পরে সমুদ্রের তলদেশের ৩৫ মিটার পানির নীচে স্টোরেজ ইউনিটটি ইন্সটল করেন ডবুরিরা। এই তথ্য কেন্দ্র স্থাপনের ফলে একদিকে যেমন জমির খরচ কমেছে, তেমনি বিদ্যুত খরচও কমিয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া পানির নিচের পরিবেশ ধুলো এবং অক্সিজেন মুক্ত হওয়ায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো দীর্ঘস্থায়ী হবে।

চায়না একাডেমি অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেক নোলজির সিআইআইটি টার্মিনাল ল্যাবের সিনিয়র প্রকৌশলী সিয়ে ছিয়ান বলেন, “আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারগুলো সামুদ্রিক প্রকৌশল এবং সুবিধা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি সামুদ্রিক অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

ডেটা সেন্টারটি সমুদ্রের তলদেশে হওয়ায় ভূমির অপচয় রোধ এবং মানুষের আবাসস্থল থেকে অনেক দূরে হওয়ায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব হবে। চীনের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর জনসংখ্যা ৪৫ শতাংশের বেশি এবং জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ অবদান রাখে। বেশি ডেটা ব্যবহৃত হয় এমন বৃহৎ শহরগুলোর বেশ কয়েকটির অবস্থান উপকূলরেখার ২শ কিলোমিটারের মধ্যে। এসব বড় শহরের কাছাকাছি অবস্থিত ইউডিসিগুলো কেবল ডেটা প্রবাহের গতিই বাড়াবে না; পরিবেশবান্ধব সামুদ্রিক জ্বালানি ব্যবহারেও ভূমিকা রাখবে।

|| প্রতিবেদন: আফরিন মিম

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

উভচর রোবট তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

 

রোবট প্রযুক্তিতে বিশ্বজুড়েই খ্যাতি অর্জন করেছে উন্নয়নে অগ্রগামী দেশ চীন। দেশটির মানুষের জীবনের সর্বত্রই রোবটের উপস্থিতি। এবার জল ও স্থলের পাশাপাশি যে কোনও জটিল পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম এক রোবট তৈরি করেছেন চীনা প্রযুক্তিবিদরা।

শুধু কুমির কিংবা অজগর নয়, পানিতে চলবে রোবটও। শুনতে অন্যরকম মনে হলেও এটাই বাস্তব। চীনের একদল চৌকশ প্রযুক্তিবিদ মিলে বানিয়েছেন এমনই এক রোবট, যেটি মাটির পাশাপাশি সমান গতিতে চলবে পানিতেও।

দারুণ এই রোবটটি প্রদর্শন করা হয় চীনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রযুক্তি কেন্দ্র শেনচেনের ২৫তম চায়না হাই-টেক ফেয়ারে। কুমিরের মতো দেখতে নরম দেহের সরীসৃপ জাতীয় একটি রোবট তৈরি করেছেন দেশটির গবেষকরা। বায়ুচালিত এ রোবটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সিলিকা জেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গবেষকদের মতে এই রোবটটি যে কোনও জটিল পরিবেশে নানামুখী অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম।

রোবটটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের শারীরিক গঠন পরিবর্তন করতে পারে। এছাড়া এটি এমন পরিস্থিতিতেও যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে যেখানে ইস্পাতের রোবটগুলো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয় বা হওয়ার সময় নড়াচড়া করতে পারে না।

নানখাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রোবট তৈরি দলের সদস্য ছিয়ু চেহাও জানান, ইস্পাত রোবট এবং থ্রি-ডি বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে তুলনা করলে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া খুবই কঠিন। তাই এই নরম দেহের রোবটটি তৈরি করতে তাদের অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, “এটি কুমিরের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্বাধীনভাবে নরম দেহের এ রোবটের পুরো কাঠামোটি ডিজাইন করেছি। চারটি ড্রাইভিং অঙ্গ সিলিকা জেল দিয়ে তৈরি। ভবিষ্যতে, এই নরম দেহের রোবটটি একটি উভচর পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এটি যে কোনও জটিল পরিবেশে চলতে পারে। কেননা এর নরম শারীরিক গঠন যে কোনও বাধা অতিক্রমে প্রয়োজনমতো পরিবর্তিত হতে পারে। এছাড়া এটি এমন পরিস্থিতিতেও যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, যেখানে ইস্পাত রোবটগুলো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয় বা হওয়ার সময় নড়াচড়া করতে পারে না।”

এই মেলায় ১০৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ হাজার ৯২৫টি উদ্ভাবন প্রদর্শন করা হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে চীনে এই হাই-টেক ফেয়ারের আয়োজন করা হচ্ছে। এটি দেশটির বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা।

 

||প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

||সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

প্রিয় শ্রোতা, এই ছিলো আমাদের এবারের বিজ্ঞানবিশ্ব। অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের, তা আমাদের জানাতে পারেন। এতোক্ষণ বিজ্ঞানবিশ্বের পুরো আয়োজন জুড়ে ছিলাম আমি শুভ আনোয়ার। নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী