দেহঘড়ি পর্ব-০৪৬
2023-11-26 17:35:03

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

আকুপাংচারে দূর হয় নাকের পলিপ

নাকের পলিপ হলো একটি মাংসপিণ্ড যা নাকের গহ্বরের সাথে যুক্ত থাকে। পলিপ শ্লেষ্মা-ঝিল্লি থেকে সৃষ্টি হয়। এটি ফুলে যেতে পারে এবং আংশিকভাবে নাকের ছিদ্র ও সাইনাসগুলো অবরুদ্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট এবং ঘন ঘন সংক্রমণ দেখা দিতে পারে এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি লোপ পেতে পারে। তবে পলিপ থেকে ক্যান্সার হয় না।

পলিপ বিভিন্ন আকারের হয়। এগুলোর রং হলদে-বাদামী বা গোলাপী হয় এবং আকৃতি হয় চোখের জলের ফোঁটা বা আঙ্গুরের মতো ৷ পলিপ উভয় নাসারন্ধ্রে হতে পারে এবং গুচ্ছ আকারে বাড়তে পারে৷

লক্ষণ: নাকের পলিপের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী সর্দি, শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা, ঘুমের অসুবিধা, গলার পিছনে ক্রমাগত শ্লেষ্মা প্রবাহের অনুভূতি, গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি কমে যাওয়া, মাথাব্যথা, উপরের পাটির দাঁতে ব্যথা, কপাল ও মুখের উপর চাপ বোধ করা, মাঝে মাঝে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নাক ডাকা, চোখের চারপাশে চুলকানি, ইত্যাদি।

পলিপের কারণ: নাকে সংক্রমণ বা অ্যালার্জি-জনিত জ্বালা হলে নাকের মিউকোসা ফুলে যায় এবং লাল হয়ে যায় এবং এটি থেকে তরল বের হতে পারে। এ অবস্থা দীর্ঘ হলে পলিপ সৃষ্টি করতে পারে মিউকোসা। অনেকের এমন সমস্যা ছাড়াই পলিপ হতে পারে, তবে সেসব ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্য কোনও অনুঘটক থাকে। যেমন দীর্ঘস্থায়ী বা বারবার ঘটা সাইনাস সংক্রমণ, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, চুর্গ-স্ট্রস সিনড্রোম, অ্যাসপিরিনের মতো নন-স্টেরয়েড প্রদাহবিরোধী ওষুধের প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। আবার বংশগত কারণেও কারও কারও পলিপ হতে পারে।

চিকিৎসা: পলিপের প্রচলিত চিকিৎসায় ডাক্তারেরা সাধারণত স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ দেন। এ সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে চিকিৎসকরা স্টেরয়েড স্প্রে দেন আবার পলিপ বড় হয়ে গেলে স্টেরয়েড ট্যাবলেট দেন। তবে পলিপগুলো অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে এবং ওষুধে কাজ না হলে প্রচলিত চিকিৎসায় শেষ ধাপ হিসাবে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পলিপগুলো ফেলে দেওয়া হয়।

আকুপাংচার চিকিৎসা: নাকের পলিপের চিকিৎসায় আকুপাংচার খুবই কার্যকর, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে। এটি খুব নিরাপদও। যাদের ক্ষেত্রে ওষুধ কাজ করে না, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প আকুপাংচার। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পলিপের আকুপাংচার চিকিত্সা নেন ৩ মাসের মধ্যে তাদের পলিপের আকার সাধারণ ওষুধ গ্রহণকারীদের পলিপের আকারে তুলনায় অনেক ছোট হয়ে যায়।

চিরাচরিত চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএমে মনে করা হয়, মানুষের স্বাস্থ্য তার শরীরে মূল শক্তি বা ‘ছি’র প্রবাহের উপর নির্ভর করে। এই শক্তি মেরিডিয়ান নামের অদৃশ্য পথ দিয়ে প্রবাহিত হয়। টিসিএমে বিশ্বাস করা হয়, ‘ছি’ শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়ায়। ‘ছি’র প্রবাহ ব্যাহত হলে তা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আকুপাংচারে নির্দিষ্ট রোগের নির্দিষ্ট মেরিডিয়ান পয়েন্টগুলোতে খুব পাতলা সূঁচ ফুটানোর মাধ্যমে সেগুলোকে উদ্দীপ্ত করা হয়, যার ফলে ‘ছি’ প্রবাহের বাঁধা দূর হয়। আকুপাংচারের মাধ্যমে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই কয়েক সেশনে নাকের পলিপ অপসারণ করা সম্ভব।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

সর্বোচ্চ স্তরের বিশেষায়িত চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান কুয়াংচৌ ফুতা ক্যান্সার হাসপাতাল

কুয়াংচৌ ফুতা ক্যান্সার হাসপাতাল চীনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় কুয়াংতুং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌয়ে অবস্থিত একটি সর্বোচ্চ স্তরের বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল। চারশ’ শয্যার এ হাসপতালটি চিনান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল স্কুলে অধিভুক্ত। ২০০১ সালে এটি কার্যক্রম শুরু করে। কুয়াংতুং প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ অনুমোদিত অলাভজনক এ ব্যক্তিখাতের হাসপাতালটিকে ২০১১ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল ক্যান্সার হাসপাতাল হিসাবে মনোনীত করে। একই বছর হাসপাতাল প্রশাসনের জাতীয় ইনস্টিটিউট এটিকে দেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বেসরকারি হাসপাতাল হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০১২ সালে চীনের হাসপাতাল সমিতি এ হাসপাতালকে চীনের সবচেয়ে আস্থার চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে আখ্যায়িত করে। ফুতা ক্যান্সার হাসপাতাল  ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনালের স্বীকৃতি পায়।

দুটি শাখা নিয়ে গঠিত কুয়াংচৌ ফুতা ক্যান্সার হাসপাতাল। এর মধ্যে একটি অবস্থিত থিয়ানহ্য জেলায় এবং অন্যটি হাইচু জেলায়। ব্যক্তিখাতের প্রতিষ্ঠান হলেও এ হাসপাতাল ক্যান্সার গবেষণার জন্য সরকারি অনুদান পায়। এ হাসপাতালে রয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসার সর্বাধুনিক সরঞ্জাম ও সুবিধা এবং একদল দক্ষ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী। এসব সরঞ্জাম ও জনবল এ হাসপাতালটিকে মধ্যম বা অগ্রসর পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এ ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসাকে বিশ্বব্যাপী একটি জটিল চিকিৎসা বলে মনে করা হয়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসা দেওয়া রোগীর সংখ্যা এবং ক্যান্সারের ধরন – দু ক্ষেত্রেই কুয়াংচৌ ফুতা ক্যান্সার হাসপাতাল চীনের অন্যান্য ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে এগিয়ে রয়েছে এবং অসংখ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।

এ হাসপাতালের প্রধান বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে অঙ্কোলজি, ইন্টারনাল মেডিসিন, সার্জারি, গাইনোকোলজি, শিশুরোগ, চক্ষুবিদ্যা, অটোরিনোলারিঙ্গোলজি, স্টোমাটোলজি, ডার্মাটোলজি, রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন, পেইন ম্যানেজমেন্ট, প্যাথলজি এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ (টিসিএম)। আর এর গবেষণা বিভাগগুলোর অন্যতম ফুতা ক্যান্সার প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, ইউনিয়ন ল্যাবরেটরি এবং বায়োথেরাপি সেন্টার।  

 

#ভেষজের গুণ

সজনে পাতার যাদুকরী গুণ

সজনের ডাঁটার পুষ্টিগুণ সর্বজনবিদিত। তবে এর পাতার গুণ সম্পর্কেও আজকাল বেশ সচেতন হচ্ছে মানুষ। সজনে ডাঁটা বা সজনে পাতাকে বিবেচনা করা হয় 'সুপারফুড' হিসাবে। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও খনিজ উপাদান, যা শরীরের জন্য খুব দরকারি। শাকের মতো রান্না করে কিংবা শুকিয়ে গুড়ো করে খাওয়া যায় সজনে পাতা। এ পাতা প্রোটিনে সমৃদ্ধ। এতে আরও থাকে অ্যামিনো অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন এ, ডি, সি ইত্যাদি। চলুন জেনে নিই সজনে পাতার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে খুব ভালো। এতে থাকা ফাইটোক্যামিক্যাল নামের উপাদান রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে আনে। শুধু তাই নয়, কোলেস্টেরল, লিপিড ও অক্সিডেটিভের মাত্রাও কমায় এ পাতা।

সংক্রমণ প্রতিরোধ করে: সজনে পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বক ও গলার নানা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে। এছাড়া এতে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শক্তি বৃদ্ধি করে:  শরীরের শক্তির মাত্রা বাড়ায় সজনে পাতা। ক্লান্তি বা অবসাদ দূর করতে তাই খাওয়া যায় এই পাতা। 

লিভার সুস্থ রাখে: লিভারে এনজাইমের পরিমাণ বাড়ায় সজনে পাতা। আর এনজাইম সঠিকভাবে কাজ করতে লিভারকে সাহায্য করে।

চোখের সমস্যা দূর করে: চোখ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সজনে পাতায় থাকা ভিটামিন এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সুস্থ রাখে। এটি চোখ পরিষ্কার রাখে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

হাড় শক্ত করে: ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অন্যান্য ভিটামিনে ভরপুর সজনে পাতা। এসব উপাদান হাড় শক্ত করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। বিশেষ করে শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধিতে খুব সহয়তা করে সজনে পাতা।

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে: সজনে পাতায় রয়েছে অধিক মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, যা মস্তিস্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।