চীনের আন হুই প্রদেশের হুয়াং শান শহরের শি থিং গ্রাম স্থানীয় একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন গ্রাম। গ্রামে একটির পর একটি সাদা দেয়াল ও কালো ছাদে বৈশিষ্ট্যময় আন হুই প্রদেশের স্থাপনায় মিং সম্রাট্যের একটি পুরোনো বাড়িতে নতুন করে বৈশিষ্ট্যময় হোমস্টে হোটেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ হোটেলটি অনেক পর্যটকের জন্য আন হুই প্রদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জানালায় পরিণত হয়েছে।
“এটি শাপলা দরজা। জানালা ও স্তম্ভের কাঠে যে খোদাই আছে, সেগুলো বিখ্যাত ‘হুই চৌ অঞ্চলের তিনটি খোদাই কর্মের একটি’। শি থিং হুয়া ই নামের এ হোমস্টে হোটেলের মালিক হুয়া চি ইয়োং হোটেলে উঠা নতুন অতিথিদের হুই চৌ স্থাপনার সৌন্দর্য তুলে ধরছিলেন।
আগে এ বাড়ির আঙিনা আগাছায় ভরা ছিল। বাড়িটি বেহাল অবস্থায় পড়ে এবং প্রাচীরের কিছু অংশ ধসে পড়ে। সুরক্ষা করা হবে নাকি ব্যবহার করা হবে অনেক স্থানীয় প্রাচীন হুইচৌ বাড়ির মতো এই পুরনো বাড়িটিও এমন দ্বন্দ্বে পড়েছিল। ২০১২ সালে হুয়াং চি ইয়ো গ্রামের বাড়িতে ফিরে এ পুরনো বাড়িটি কেনেন। বাড়িটি মেরামত করতে তিনি স্থানীয় ৫০ জনেরও বেশি ঐতিহ্য-শিল্পের কারিগর নিয়োগ করেন। বাড়ি মেরামতের সময় আগের মতো একই উপাদান ব্যবহার করা হয়, যাতে এ বাড়ির ঐতিহ্যের স্বাদ সংরক্ষণ করা যায়। মাছের আকারের বাতি স্থাপন, আন হুই প্রদেশের অপেরা এবং স্থানীয় সুন্দর চা পানসহ অনেক স্থানীয় রীতির অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এ বাড়িতে, যা অনেক অতিথির মনে গভীর ছাপ ফেলে। কুয়াং তোং প্রদেশ থেকে আসা পর্যটক মাদাম চাং বলেন, “এখানে উঠলে মনে হয়, যেন কালি পেইন্টিংয়ের মধ্যে আছি। আসল আন হুই প্রদেশের সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারছি।”
হুয়াং চি ইয়োং বলেন, ‘আজকাল হোমস্টে হোটেল একটি সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্কে পরিণত হয়েছে। মানুষ হোমস্টে হোটেলে ওঠেন। তারা চান কিছু বৈশিষ্ট্যময় রীতি উপভোগ করতে।” ওয়াং চি ইয়ো মনে করেন, হোমস্টে হোটেলের মাধ্যমে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন চাইলে স্থানীয় সম্পদ প্রাণবন্ত করতে হয়, যাতে টেকসই উন্নয়নের চালিকাশক্তি অর্জন করা যায়।
শি থিং গ্রাম থেকে শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হুয়াং শি সি গ্রাম। এ গ্রামের একটি হোমস্টে হোটেলের মালিক ছেন রান ওয়াং চিন ইয়োং’র মতোই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, বিশাল ও সমৃদ্ধ আন হু্ই প্রদেশের সংস্কৃতি এখানকার হোমস্টে হোটেলের বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে। এটিই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হোমস্টে হোটেল গঠনের মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষমতা। ছেন রানের হোমস্টে হোটেলে দেখা যায়, পাথর দিয়ে তৈরি দরজা, দেহাতি আনহুই-স্টাইলের কাঠের ঘর এবং বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি ঝুলন্ত সেতু। অতিথিরা হয় চারপাশে খেলছেন না হয় চুলার চারপাশে চা তৈরি করছেন। সবাই নিজের মতো সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন।
চলতি বছরের প্রথম দিকে ছেন রানের হোমস্টে হোটেল ২০২২ সালে সারা চীনে প্রথম শ্রেণির হোমস্টে হোটেলের স্বীকৃতি পেয়েছে, যা গ্রামবাসীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং কৃষিপণ্য বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি দূরের পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত এ গ্রামকে আবার প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
ছেন রান বলেন, “স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে হোমস্টে হোটেলকে গ্রামাঞ্চলের প্রাণশক্তির দ্বারে পরিণত করতে হয়, যাতে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের নতুন পথ আবিস্কার করা সম্ভব হয়।”
প্রাচীন বাড়িঘর রক্ষার সঙ্গে হোমস্টে হোটেল যুক্ত করার মাধ্যমে আন হুই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ চাঙ্গা করেছে এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রদেশটি সুন্দর পাহাড় ও নদ-নদীর সুবিধা কাজে লাগিয়ে ‘কৃষি পরিবার অর্থনীতি’ সৃষ্টি করেছে। কৃষকের বাড়িকে হোমস্টে হোটেলে এবং কৃষিপণ্যকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা হয়েছে এবং কৃষককে মালিক বানানো হয়েছে। পুরো প্রদেশে ৬০০০টিও বেশি হোমস্টে হোটেল রয়েছে।
আন হুই প্রদেশের হুয়াং শান শহরের মেয়র হ্য ই জানান, গ্রামের জন্য হোমস্টে হোটেল যেন একটি জানালা, যার কারণে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মানুষ, পণ্য, অর্থ ও তথ্যের প্রবাহ গ্রামে আসে। বর্তমানে হুয়াং শান শহরে রয়েছে ৩ হাজার ১শটিরও বেশি হোমস্টে হোটেল। গত ২০২২ সালে এসব হোটেলে থেকেছেন ৩৩ লাখ পর্যটক, যার মধ্য দিয়ে আয় হয়েছে ৬৫০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি।
কৃষি-পরিবার অর্থনীতির উন্নয়নের ফলে গ্রাম ছেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। কৃষকের বাড়ি বর্তমানে অতিথির হোটেলে পরিণত হয়েছে। উদ্ভাবনশীল এ ধারণা বর্তমানে খুব ভাল ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে।
(রুবি/রহমান)