চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-11-24 15:10:04

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

 

চলতি বাণিজ্যের ৪৫তম পর্বে থাকছে:

১. ‘চায়না রেডি’কৌশল: পর্যটনখাতে চীনা বিপ্লবের মূলমন্ত্র

২. কঙ্গোতে মহাসড়ক নির্মাণ করেছে চীন

৩. ইউয়ান-ভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড ছাড়ছে মার্কিন কোম্পানি মাস্টারকার্ড

 

‘চায়না রেডি’ কৌশল: পর্যটনখাতে চীনা বিপ্লবের মূলমন্ত্র

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পূর্ব এশিয়ার দেশ ক্যাম্বোডিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিয়েম রিপ প্রদেশে চীনা অর্থায়নে গড়ে উঠেছে ‘সিয়েমরিপ অ্যাংকর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয় এই বিমানবন্দর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ক্যাম্বোডিয়ার অর্থনীতির অন্যতম ৪টি স্তম্ভের একটি পর্যটনখাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই বিমানবন্দর।

ইউনেস্কোর তালিকাভূক্ত ক্যাম্বোডিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট অ্যাংকর আর্কেওলজিক্যাল পার্ক। ক্যাম্বোডিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিয়েম রিপ প্রদেশে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে প্রতি বছর এখানে ঘুরতে আসেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। বিশেষ করে এই এলাকার পর্যটনস্থানগুলো মনোযোগ আকর্ষণ করেছে চীনা পর্যটকদের। তাইতো পর্যটকদের যাতায়াত সহজ করতে এখানেই বিমানবন্দর নির্মাণ করে ক্যাম্বোডিয়া সরকার।

চীনা অর্থায়নে গড়ে ওঠা এই ‘সিয়েমরিপ অ্যাংকর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট সম্প্রতি কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়। এই বিমান বন্দর তৈরিতে অর্থায়ন করে চীনের ইউননান ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড।

৭শ’ হেক্টর জমির উপর গড়ে ওঠা এই বিমানবন্দরের ডিজাইন করা হয়েছে ক্যাম্বোডিয়ার জাতীয় স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী। ৩৬শ’ মিটার লম্বা রানওয়ে বিশিষ্ট এই বিমানবন্দরটি বর্তমানে ক্যাম্বোডিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটির মাধ্যম ২০২৪ সাল নাগাদ বছরে ৭০ লাখ যাত্রী এবং ২০৪০ সাল নাগাদ ৮২ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়ার কাজ করা সম্ভব হবে।

এর আগে গেল ১৬ অক্টোবর প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় এই বিমানবন্দর থেকে। সেদিন প্রথম এখানে এসে নামে ব্যাংকক এয়ারওয়েজের একটি বিমান। এরপর ১২ নভেম্বর চীনের কুনমিং চাংশুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আসে প্রথম সরাসরি কোন ফ্লাইট।

মূলত ক্যাম্বোডিয়ার পর্যটনখাতের জন্য সহায়ক হয়ে উঠেছে ২০১৬ সালে চীনের নেওয়া ‘চায়না রেডি’ কৌশল। এই কৌশলে উল্লেখ আছে চীন সরকারের নেওয়া পর্যটন সম্পর্কিত নানা নীতি-কাঠামোগত পদক্ষেপের কথা। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে চীনা পর্যটকদের গমন সহজ করা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, পর্যটনে চীনা ভাষা ও মুদ্রার ব্যবহারকে উৎসাহিত করা, পর্যটকদের জন্য আবাসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়। 

চীনের এসব পদক্ষেপের সুবিধা নিয়েছে ক্যাম্বোডিয়া সরকারও। আরও বেশি চীনা পর্যটক আকর্ষণের অংশ হিসেবে নতুন বিমানবন্দর স্থাপনসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ক্যাম্বোডিয়া সরকার।

 

ভিনদেশে চীন:

কঙ্গোতে মহাসড়ক নির্মাণ করেছে চীন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে এক বিশাল মহাসড়ক। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত মেয়াদের ৬ মাস আগেই শেষ হয়েছে এ সড়কের নির্মাণ কাজ। রাজধানী কিনশাসার ভেতর দিয়ে নির্মাণ করায় এটি পুরো দেশের যানবাহন চলাচল ব্যবস্থায় গতি এনে দিয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আফ্রিকার হত দরিদ্র দেশ হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিলো ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো’র। ছিলোনা ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, ছিলো না মানুষের বসবাসের উন্নত পরিবেশ। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে দেশটির রাজধানী কিনশাসা’র ভেতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক বিশাল সড়ক। চীনা কোম্পানির তৈরি করা এ অ্যাভিনিউটি সম্প্রতি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, কঙ্গো

“আমরা এখানে বসবাস করছি ১৯৭০ সাল থেকে। সে সময় আমরা কোন রাস্তা দেখিনি, কোন গাড়ি দেখিনি। তখন নিজেদের মনে হতো জঙ্গলের বাসিন্দা। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের এখানে মানুষ বেড়াতে আসে।“

উন্নত মানের নির্মাণ কাজের প্রশংসা করেছে কঙ্গোর প্রেসিডন্ট ফেলিক্স শিসেকেডি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সড়কটি নির্মাণে অর্থায়ন করেছে সিনো কঙ্গোলিজ ডেস মাইনস বা সিকোমাইনস কোম্পানি। এটি গঠন করা হয় কঙ্গো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনি কোম্পানি জিকামাইনস ও চায়না রেলওয়ে নাম্বার এইট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানির সমন্বয়ে।

নিকোডেম জাও জাও, কঙ্গোলিজ এজেন্সি ফর মেজর ওয়ার্কস

“কঙ্গোলিজ এজেন্সি ফর মেজর ওয়ার্কস ও চীনা কোম্পানির যেসব কর্মী আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের এই প্রকল্প আগামী বছর মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তার ৬মাস আগেই এ কাজ শেষ হয়েছে। এটা সত্যিই এক বিশাল অর্জন।“

খুলে দেওয়ার পর বর্তমানে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। চায়না রেলওয়ে রিসোর্স গ্রুপের পরিচালক লু হেইউ জানান, এই সড়কটি বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে চীন-কঙ্গো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

ইউয়ান-ভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড ছাড়ছে মার্কিন কোম্পানি মাস্টারকার্ড

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ইউয়ান-ভিত্তিক ব্যাংক কার্ড প্রবর্তন করতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেডিটকার্ড সেবা প্রদানকারী সংস্থা মাস্টারকার্ড। সম্প্রতি এ ঘোষণা দেয় মাস্টারকার্ড। এরইমধ্যে মাস্টারকার্ডের আবেদন গ্রহণ করেছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চীনের স্থানীয় অংশীদার কোম্পানি নেটসইউনিয়ন ক্লিয়ারিং করপোরেশন –এনইউসিসি’র সঙ্গে যৌথভাবে এ সেবাদান কার্যক্রম শুরু করছে মাস্টারকার্ড।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেডিটকার্ড সেবা প্রদানকারী সংস্থা মাস্টারকার্ড। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি কিছু দিন আগে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে ইউয়ানভিত্তিক ক্রেডিটকার্ড ছাড়ার বিষয়ে। সেই আবেদন এখন গ্রহণ করেছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক অব চায়না -পিবিওসি। পিপলস ব্যাংক অব চায়না জানায়, জাতীয় অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে মাস্টারকার্ডের কার্যক্রম আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।

তবে চীনের স্থানীয় মুদ্রায় ছাড়া এই কার্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে দেশটির দেশীয় প্রতিষ্ঠান নেটসইউনিয়ন ক্লিয়ারিং করপোরেশন –এনইউসিসি’র সঙ্গে যৌথভাবে। যৌথভাবে গঠিত এই কোম্পানির নাম মাস্টারকার্ড এনইউসিসি ইনফরমেশন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সারা বিশ্বের ১০০ মিলিয়ন মার্চেন্ট এই কার্ড ব্যবহারের সুযোগ পাবে।

কোম্পানিটি বলছে, এই পেমেন্ট সিস্টেম অনেক নিরাপদ, সহজে ব্যবহার যোগ্য। একইসঙ্গে বলা হয় চীনা বাজারের উন্নয়নে প্রযুক্তিনির্ভর এই কার্ড ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান তারা।

চীনের বাজারে দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে কাজ শুরু করলো মার্কিন এই সংস্থা। এর আগে ২০২০ সালে অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস চীনে যৌথভাবে কার্যক্রম শুরু করে। এক দশক আগে যাত্রা শুরুর পর বর্তমানে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ব্যাংক কার্ড ছেড়েছে মাস্টারকার্ড। বর্তমানে সারা বিশ্বে ১০০ মিলিয়ন শাখা আছে মাস্টারকার্ডের।

মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্যাংক ও আঞ্চলিক ব্যাংক কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের লেনদেন সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় মাস্টারকার্ড। ১৯৫০ সালে ব্যাংক অব অ্যামেরিকার ইস্যু করা ব্যাংক-অ্যামেরিকার্ড এর প্রতিযোগী হয়ে ওঠে মাস্টারকার্ড। ব্যাংকঅ্যামেরিকার্ড পরে ভিসা নামে বাজারে কার্যক্রম শুরু করে। এখনো ভিসা কার্ডের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মাস্টারকার্ড।