আকাশ ছুঁতে চাই ৪৫
2023-11-23 15:35:58

 

১. নকশী কাজে বদলে যাচ্ছে জীবনের নকশা

২. সিটিং ভলিবলে চীনা নারীদের বিশ্ব জয়

৩. পাকিস্তানে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে  বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ

৪. তিব্বতের পশুপালক নারীদের জীবনে সুবাতাস

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

নকশী কাজে বদলে যাচ্ছে জীবনের নকশা

 

 

চীনে এখন চলছে গ্রাম পুনর্জীবনের ধারা। এই ধারায় গ্রামীণ নারীদের জীবনে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। এই ধারাতে ই জাতির নারীদের হাতের নকশী কাজ মন জয় করছে বিশ্ব বাজারের ফ্যাশন প্রেমীদের। চলুন শোনা যাক সেই অবাক করা পরিবর্তনের কথা।

ই জাতির নারীদের হাতে তৈরি নকশীকাজ এখন ইয়ুননান প্রদেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে পৌছে গেছে বিশ্ব বাজারে। এর সুফল পাচ্ছেন নারীরা। চায়না মিডিয়া গ্রুপ সম্প্রতি তাদের নতুন তথ্যচিত্র সিরিজ ‘স্ন্যাপশট অব মর্ডনাইজেশন’ এ তুলে ধরেছেন এই গল্প।

 

চাং ছিয়ংফেন একসময় ছিলেন পার্টটাইম নির্মাণ শ্রমিক। এই এমব্রয়ডারি শিল্প তার জীবনের নকশা নতুন করে বুনন করেছে।

ই জাতির মেয়ে চাং তার মায়ের কাছ থেকে শেখেন এমব্রয়ডারি। এই এমব্রয়ডারি তাদের জাতির নারীদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তারা বংশ পরম্পরায় এই এমব্রয়ডারি শেখেন।

চাংও ছোটবেলা থেকে এই কাজ শিখেছেন। পরে তিনি অস্থায়ী নির্মাণ শ্রমিক হন।

নির্মাণ কাজে তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়।  কিন্তু যখন গ্রাম পুনর্জীবনের ধারা শুরু হয় তখন তিনি গ্রামে ফিরে এসে নকশী কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত কারখানায় প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে কাজ শুরু করেন।

এই কারখানার ম্যানেজার ফান চিইয়ং মনে করেনে এখানে নারীরা শুধু তাদের হাতের কাজের বিনিময়ে বেতনই পাচ্ছেন না, তাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গিয়েছে। এটাকে তারা নিজেদের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা মনে করছেন আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তারা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকেও রক্ষা করছেন।

এই কারখানায় তৈরি কাপড় এখন বিশ্ব বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে।

 ই জাতির নারীদের নকশীকাজ এত বিখ্যাত হয়েছে যে, বেইজিংয়ের ফ্যাশন শো এবং ইতালির মিলানে বিখ্যাত ফ্যাশন শোতেও মডেলরা এই এমব্রয়ডারির পোশাক পরেছেন।

চীনের আধুনিকীকরণ হলো বিশাল জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে। এর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নয়নের মেলবন্ধন ঘটছে। মানবতা ও ও প্রকৃতির মধ্যে সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন ঘটছে গ্রাম ও শহরে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সিটিং ভলিবলে চীনা নারীদের বিশ্ব জয়

প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের একটি বিশেষ ক্রীড়া হলো সিটিং ভলিবল। সম্প্রতি এই ক্রীড়ায় বিশ্বকাপ জয় করেছেন চীনের নারীরা। চলুন শোনা যাক বিস্তারিত।

 

চীনের নারীরা সিটিং ভলিবলে বিশ্ব কাপ খেতাব জিতে নিয়েছেন। সম্প্রতি মিশরের কায়রো সিটিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের  এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কানাডাকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় চীনের মেয়েরা।

 

জয়সূচক শেষ বাঁশিটি বাজার পর অনেকের চোখেই দেখা দেয় আনন্দ অশ্রু। চীনের সু ইসিয়াও  ‘সেরা আক্রমণকারী’ এবং সু লিমেই ‘বেস্ট রিসিভার’ খেতাব পান।

 চীনা খেলোয়াড় লিউ হোংছিন বলেন, আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্য ছিল চীনা দলের প্রধান শক্তি। তবে কানাডার নারীরাও যথেষ্ট শক্তিশালী। বিশেষ করে টোকিও প্যারালিম্পিকের পর তারা আরও উন্নতি করেছে। তাই হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের পরই বিশ্বকাপ জয় করা সম্ভব হয়েছে। প্যারিস প্যারালিম্পিকে আবার মোকাবেলার আশা করছেন চীনা দল।

 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

পাকিস্তানে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে  বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ বিভিন্ন দেশের নারীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প চায়না পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডোর বা সিপেক । এই সিপেক পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের জীবনে নিয়ে এসেছে সমৃদ্ধির সুবাতাস। চলুন শোনা যাক সেই দিন বদলের গল্প।

 

গুলাম খাতুন। পাকিস্তানের দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশের থর মরুভূমির  এক গ্রামের এক দরিদ্র গৃহবধূ ছিলেন কয়েক বছর আগেও। জীবনে দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। একটা বাইসাইকেল চালানোর কথাও চিন্তা করেননি কখনও।

অথচ এখন তিনি নিজে হাতে ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছেন মরুভূমির বুক চিরে যাওয়া প্রশস্ত সড়ক দিয়ে। এই পরিবর্তন তার ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনটা রূপকথার মতোই বদলে দিয়েছে। এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে সিপেক এর ফলে।

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং এর কাশগর শহর থেকে পাকিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমের গাদার স্থল বন্দরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে সিপেক। সিপেক এর থর কোল ব্লক টু কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের একজন পেশাদার ট্রাক চালক হলেন গুলাম খাতুন। গুলাম খাতুন জানান চীনা কোম্পানি ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরি দেয়নি। তারা বিশ্বাসই করতে পারেনি গ্রামের একজন দরিদ্র গৃহবধূ থর মরুভূমির ভিতর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারবে।

কিন্তু গুলাম খাতুন তার উপরে আস্থা রাখা মানুষদের হতাশ করেননি। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অনুশীলন করেছেন। এরফলে  যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

 তার রোজগারে পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। শিশুরা ভালো শিক্ষা পাচ্ছে, পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছে। তাদের পরিবারে সুখ শান্তি এসেছে। শুধু গুলাম খাতুনই নন, আরও কয়েক ডজন নারী এই সিপেক প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে, জীবনে এসেছে সমৃদ্ধি।

চীন প্রস্তাবিত বেল্ট  রোড উদ্যোগ এভাবেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তনের কাহিনী সৃষ্টি করছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

  

 

 

 

তিব্বতের পশুপালক নারীদের জীবনে সুবাতাস

 

চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত বা সিচাং এর অনেক মানুষের জীবিকা  পশুপালন। তারা অধিকাংশই যাযাবর। যাযাবর নারী পুরুষ দুজনকেই প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সেইসঙ্গে রয়েছে অস্থায়ী বাসস্থানের সমস্যা।  তবে সেই সমস্যা সমাধানে এখন হাউজিং প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার। কিভাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে যাযাবর নারীদের জীবনে  কিছুটা স্বস্তি এসেছে এখন শুনবো সেই গল্প।

চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত বা সিচাং। এই অঞ্চলের ডামসুং কাউন্টি। তিব্বতি ভাষায় এর অর্থ সাবধানে বাছাই করা চারণভূমি। নাইয়াইনছেনতাংইহা পর্বতমালার দক্ষিণ পাদদেশে অবস্থিত এই স্থানের গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০০ মিটার। এখানে মূলত পশুপালকদের বাস। পুরুষরা প্রধানত পশুপাল নিয়ে গ্রীষ্মে চারণভূমিতে যান। শীতের শুরুতে তারা পশুপাল নিয়ে নিচের শীতকালীন চারণভূমিতে আসেন।

পশুপালক পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা আগে ছিল অত্যন্ত কঠিন। যাযাবর জীবনে তাদের বাড়িরঘরের অবস্থা ভালো ছিল না। পরিবারের নারীদের ভীষণ কঠিন শ্রম করতে হতো। শিশুদের স্কুলের লেখাপড়াও যাযাবর জীবনের কারণে বাধাগ্রস্ত হতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিচাংয়ে কৃষক ও পশুপালকদের জন্য হাউজিং প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। চমরী গরুর  পশম দিয়ে তৈরি তাবুর পরিবর্তে এখন ইট পাথরের বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। কখনও কখনও বোর্ডের বাড়ি তৈরি হয়েছে যেগুলো এমনিতে মজবুত অথচ জায়গা বদল করা যায়। এসব নতুন বাড়িতে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো। এর ফলে জীবন এখন অনেক সহজ হয়েছে। নারীদের জন্য সহজ হয়ে উঠেছে গৃহস্থালি কাজ।

 শিশুদের যত্নও হচ্ছে ভালোভাবে। স্থানীয় এক পশুপালক ইয়োনতেন। এখন ইয়োনতেন পরিবারের আয় বেড়েছে। স্ত্রী ও সন্তানদের মুখে ফুটেছে হাসি। ইয়োনতনের স্ত্রী একজন পরিশ্রমী নারী।

 তিনি  ডাবুক নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা। শীতকালীন চারণভূমিতে এখন তার বাড়িঘরের কাজ অনেক সহজ হয়েছে আগের সেই তাঁবুতে বাস করার দিনগুলোর তুলনায়। তাকে চমরী গরুর দুধদোয়ানো, মাংস কেটে শুকানো, পশুপালের যত্ন থেকে শুরু করে অনেক কাজই করতে হয়। তবে ঘরের পরিবেশ উন্নত হওয়ায় কাজগুলো সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। নারীর জীবনে এসছে কিছুটা আরাম ও স্বস্তি।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  শান্তা মারিয়া,  শুভ আনোয়ার, রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল