সাইবেরিয়ান বাঘের জন্য সুন্দর আবাস তৈরি করেছে রক্ষাকারী
2023-11-23 19:01:32

উনত্রিশ জুলাই ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। চীন-রাশিয়ার সীমান্ত এলাকা দিয়ে বন্য সাইবেরিয়ান বাঘসহ অনেক বন্যপ্রাণী প্রতিদিন দুই দেশের মধ্যে অবাধে যাতায়াত করে; খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। ‘সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান’র উদ্যোগে নির্মিত ‘স্বর্গ ও স্থলের সমন্বিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা’র দৃশ্যগুলোতে দেখা যায়, বন্য প্রাণীরা ‘আন্তঃদেশীয় ভ্রমণ’ পছন্দ করে এবং তাদের বাসস্থানগুলো একসাথে সংযুক্ত।

চীনের জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসনের সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের উপ-প্রধান ফোং লি মিন বলেন, “এটি বন্যপ্রাণীর প্রজনন ও বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক। আন্তঃসীমান্ত সুরক্ষা এলাকা প্রতিষ্ঠা করা জাতীয় উদ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। আন্তঃসীমান্ত বাস্তুতান্ত্রিক করিডোর নির্মাণ যৌথভাবে চীন ও রাশিয়ার সাইবেরিয়ান বাঘ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম।”

বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাইবেরিয়ান বাঘ অন্যতম প্রধান প্রজাতি। বাসস্থান ধ্বংস এবং অন্যান্য নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বন্য সাইবেরিয়ান বাঘের সংখ্যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বন্য সাইবেরিয়ান বাঘ সুরক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখে আসছে। প্রথম দফার একটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ‘সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান’ প্রতিষ্ঠা করেছে দেশটি। রাশিয়ায় ‘লেপার্ড ল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক’ও ক্রমাগত বন্য সাইবেরিয়ান বাঘের সুরক্ষার কাজ জোরদার করেছে।  বেইজিং ও মস্কো ২০১০ সালে ‘চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘের আন্তঃসীমান্ত সংরক্ষণ’ বিষয়ে একটি সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করে। তখন থেকে উভয় পক্ষ সাইবেরিয়ান বাঘ সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করে আসছে।

রাশিয়ান লেপার্ড ল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কের পরিচালক ভিক্টর বালজুক বলেন, “গত কয়েক দশকে চীন বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষায় অসামান্য অবদান রেখেছে।”

ভিক্টর বালজুকের মতে, রাশিয়ান লেপার্ড ল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক চীনের সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন। তিনি মনে করেন, দুই পক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বন্যপ্রাণী সুরক্ষা জোরদারে সাহায্য করবে।

২০১৯ সালে চীনের সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান এবং রাশিয়ান লেপার্ড ল্যান্ড জাতীয় উদ্যান পারস্পরিক পরিদর্শন করে। দুই পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ ও চিতাবাঘের আন্তঃসীমান্ত সুরক্ষার জন্য একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা বাঘ ও চিতাবাঘের আন্তঃসীমান্ত চলাচল নিয়ে গবেষণা, যৌথ পর্যবেক্ষণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত ভাগাভাগি, প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বেসরকারি প্রতিনিধিদলের পারস্পরিক পরিদর্শনসহ নানা ক্ষেত্রে গভীর সহযোগিতা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আন্তঃসীমান্ত পরিবেশগত করিডোর নির্মাণের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়া প্রায়ই বাঘ ও চিতাবাঘ রক্ষায় সহযোগিতা করে এবং যোগাযোগ রক্ষা করে। চাও ইয়েন সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক। তিনি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঘ ও চিতাবাঘের উপর কাজ করছেন। তিনি বলেন, “২০০৬ সালের প্রথম দিকে চীনা ও রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা অনেকবার সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, যৌথ জরিপ পরিচালনা করেন এবং বন্য প্রাণীর জিনতত্ত্বের উপর যৌথ গবেষণা চালান।”

চীনের জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসনের সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতাবাঘ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের উপ-প্রধান ফোং লি মিন বলেন, কয়েক বছর ধরে চীন ও রাশিয়ার যৌথ প্রচেষ্টায় সীমান্তের উভয় দিকে বাঘ ও চিতাবাঘের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ধারা দেখা যাচ্ছে।

চীন ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে চীন ও রাশিয়া বিনিময় ও সহযোগিতাকে আরও গভীর করবে এবং বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান ও আচরণের ওপর আরও গভীর গবেষণা চালাতে রিমোট সেন্সিং বা দূর-অনুধাবন ও লিডারসহ আরও উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগাবে।

রুবি/রহমান