বেইজিংয়ে সি চিন পিং ও উরুগুয়ের প্রেসিডেন্টের বৈঠক
2023-11-23 11:39:41

নভেম্বর ২৩: বেইজিংয়ের মহাগণভবনে গতকাল (বুধবার) বিকেলে চীন সফররত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট লুই আলবার্তো ল্যাকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দুই প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, চীন ও উরুগুয়ের সম্পর্ককে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করা হবে।

প্রেসিডেন্ট সি প্রথমে প্রেসিডেন্ট ল্যাকেলেকে চীনে স্বাগত জানান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,


“প্রেসিডেন্ট ল্যাকেলের সাথে দেখা করে এবং চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে আপনাকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ২০২৩ সাল হচ্ছে চীন-উরুগুয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে একটি বিশেষ বছর। এটি কেবল দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগে উরুগুয়ের যোগদানের পঞ্চম বার্ষিকী নয়; বরং আপনার পিতা, চীনা জনগণের পুরনো বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট র‌্যাকেলিরা হেরেরার চীন সফরের ৩০তম বার্ষিকীও। প্রেসিডেন্টের এবারের চীন সফর অত্যন্ত তাত্পর্যবহ।”

চীনা জাতি ও উরুগুইয়ান জাতি উভয়েই ঐক্য ও বন্ধুত্বের চেতনার পক্ষে। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৩৫ বছরে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সত্ত্বেও চীন ও উরুগুয়ে সবসময় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আচরণে সমতা এবং পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে কাজে করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করেছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে দু’দেশ একে অপরকে সাহায্য করেছে এবং একসঙ্গে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। চীন ও উরুগুয়ের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে উজ্জীবিত করা হয়েছে। বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমানভাবে দু’দেশের বিভিন্ন মহলের একটি সাধারণ ঐকমত্য হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার নতুন সূচনা এবং নতুন অক্ষ হিসেবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্তর উন্নত করতে, দু’দেশের সহযোগিতার সারবস্তু সমৃদ্ধ করতে এবং দু’দেশের জনগণের কল্যাণ বাড়াতে ইচ্ছুক চীন। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন,


“আমি জনাব প্রেসিডেন্টের সাথে চীন ও উরুগুয়ের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আপনার সাথে অব্যাহতভাবে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক, যাতে চীন ও উরুগুয়ের সম্পর্ককে বিভিন্ন ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার দৃষ্টান্তে পরিণত করা যায়।

প্রেসিডেন্ট সি চীনা শৈলীর আধুনিকায়নের তাত্পর্য তুলে ধরে বলেন, “উরুগুয়ের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি নিয়ে বিনিময় জোরদার করতে, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা বাড়াতে এবং যৌথভাবে উন্নয়নের সুযোগ ভাগাভাগি করতে ইচ্ছুক চীন। সেই সঙ্গে, নিজ নিজ দেশের আধুনিকায়ন এবং বৈশ্বিক আধুনিকায়নকে এগিয়ে নিতে দু’পক্ষের উচিত আইন প্রণয়ন সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় ও সহযোগিতা গভীরতর করা। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের সুযোগে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে হবে এবং পরিষেবা বাণিজ্য, ডিজিটাল অর্থনীতি, দূষণমুক্ত জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতায় নতুন চালিকাশক্তি যোগাতে হবে, যাতে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় চীন ও উরুগুয়ের যৌথ নির্মাণকাজ উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।”

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে চীন ও উরুগুয়ে একই ধারণা পোষণ করে এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য ও অভিন্ন স্বার্থও রয়েছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে পারে দু’পক্ষ। চীন ও উরুগুয়ের সম্পর্কের উন্নয়নের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয় চীন। এছাড়া সবসময় সক্রিয়ভাবে চীন ও লাতিন আমেরিকার সামষ্টিক সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় এবং দক্ষিণের যৌথ বাজারসহ আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংলাপ ও আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় সমর্থন দেওয়ায় উরুগুয়েকে ভূয়সী প্রশংসা করে চীন।

বৈঠকের পর দুই প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ সংক্রান্ত সহযোগিতামূলক কার্যক্রম, বাণিজ্য ও পুঁজি, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এবং কাস্টমস পরিদর্শন ও কোয়ারেন্টিনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। (ওয়াং হাইমান/রহমান)