এবারের পর্বে রয়েছে
১. বাহারি জাতের সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
২. ২শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চীনের চা শিল্প
৩. ফসল তোলার উৎসবে মেতেছেন কৃষকরা
৪. চীনের কৃষি মেলায় এসে মুগ্ধ বিদেশি ক্রেতারা
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
বাহারি জাতের সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
শাক-সবজি একটু বেশিই পছন্দ করেন চীনা। তাদের খাবার টেবিলজুড়ে থাকে নানা রকম সবজি। আর শীতকাল এলে শাক-সবজির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাইতো এই মৌসুমে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে চলছে শীতের সবজি তোলার কাজ।
ধীরে ধীরে শীত নামছে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে চলছে সবজি সংগ্রহের কাজ।
পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের ত্যচোও সিটির লিনই কাউন্টি। এখানে কৃষকরা ক্ষেত থেকে লেটুস পাতা তুলে বাক্সে ভরছেন। লিনই কাউন্টিতে কয়েকশ হেকটর জমিতে লেটুস পাতা এখন সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। চীনে এটি খুবই জনপ্রিয় সবজি। এর প্যাকেজিংয়ের কায়দাও বেশ চমৎকার। এরফলে পাতাগুলো নষ্ট হয় না।
আরেকটি জনপ্রিয় সবজি হলো সিয়াওপাইচুই ইয়াম। এটি একধরনের কচু।
হ্যপেই প্রদেশের হ্যংশুই সিটির আনফিং কাউন্টির কৃষকরা জমি খুঁড়ে সিয়াও পাইচুই ইয়াম সংগ্রহ করছেন। এবছর আনফিং কাউন্টিতে এই সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। বড় আকারে খামার এবং বড় কৃষি কোম্পানির সঙ্গে কৃষি সমবায় সমিতির যৌথ উদ্যোগে কাজের সুফল ফলেছে।
আনফিংয়ে ১ হাজার ৩৩৩ হেকটর জমিতে কচুর চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে লাভ হয় ৫০০ ইউয়ান পর্যন্ত। এ কি ধরণের সবজি চাষ হচ্ছে, সে সম্পর্কে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক চাং ইয়ানওয়েন ।
কচু চাষ করেও ভালো মুনাফা করছেন এখানকার কৃষকরা। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালটির কৃষকরা এখন সংগ্রহ করছেন পাতাসবজি।
এখানে ফুলিং জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাতা সবজির চাষ করা হয়েছে। এই জেলায় প্রতিদিন ১ হাজার টন সবজি কৃষকের বাজার এবং সুপারমার্কেট গুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
খাবারের টেবিলে শাক-সবজি বেশ পছন্দ করেন চীনারা। আর শীতকালে নানা রকম সতেজ শাক-সবজি তাদের খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
২শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চীনের চা শিল্প
চায়ের দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে চীনের। একেক অঞ্চলের চায়ের রয়েছে রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা এ অঞ্চলের চা শিল্পকে করেছে অনন্য। চীনের চিয়াংসি প্রদেশের কুয়োকুনাও চা দুইশ বছরের বেশি সময় ধরে বিশেষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশ। এখানকার চায়ের রয়েছে বিশেষ সুনাম। বিশেষ করে কুয়োকুনাও টি। গত আট প্রজন্ম ধরে একটি পরবার এই চা তৈরি বিশেষ কৌশল জানেন। তারা এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করেছেন।
এই সংস্কৃতির নতুন ইনহেরিটর বা উত্তরাধিকারী লিয়াং হুয়াফিং। তিনি ১২ বছর বয়সে এই কৌশল শেখা শুরু করেন এবং ১৮ বছর বয়সে এই পদ্ধতিতে তিনি চা বানানো শুরু করেন।
চীনে গ্রিন টি তৈরির বিশেষ গোল্ডেন ট্রায়াংগল এলাকার একটি অংশ হলো চিয়াংসি। এই প্রদেশ অনেক বিখ্যাত ধরনের গ্রিন টির জন্মস্থান। লুওসিয়াও পাহাড়ের দক্ষিণ পাদদেশে এই বিশেষ ধরনের গ্রিনটি পাওয়া যায়।
কুয়োকুনাও চা পাতা সংগ্রহের সময় বিশেষ কিছু বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। কোন পোকায় কাটা পাতা নেয়া চলবে না। বৃষ্টির দিনে অথবা দুপরে তীব্র তাপের সময়ও পাতা সংগ্রহ করা চলবে না। ৫০০ গ্রামের মতো শুকনো চা তৈরি করতে ষাট হাজার বাছাই করা কুঁড়ি দরকার হয়।
খোলা হাওয়ায় সংগ্রহ করা পাতাগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। ছড়িয়ে দেওয়ার বিশেষ পদ্ধতি আছে। ৫ সেন্টিমিটারের ভিতরে ঘনত্ব রাখতে হবে। বেশি ঘনও হতে পারবে না আবার বেশি পাতলা হলেও চলবে না। এরপর চা পাতাগুলো তাপে শুকাতে হবে বা সেঁকে নিতে হবে। এই তাপমাত্রা ৩৬০ ডিগ্রিতে থাকতে হবে। সঠিক তাপমাত্রা না হলে চায়ের সঠিক সৌরভ ও রং খুলবে না।
চা পাতা সেঁকার সময় তার রং কতটা লালচে হবে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এর পরের ধাপ হলো রোলিং। রোলিংয়ের ফলে চা পাতাগুলো একটা আকার পায়। দ্বিতীয় ধাপে আবার পাতাগুলোকে সেঁকা হয়। তবে এবার তাপমাত্রা ১৬০ ডিগ্রিতে রাখতে হবে। পাতার জলীয় অংশ পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে এই প্রক্রিয়ায়।
কয়েক সেটে কুয়োকুনাও চায়ের মান নির্ধারণ করা হয়। চারটি মূল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মান বিবেচনা করা হয়। রং, অ্যরোমা, স্বাদ এবং আকার। চা পাতাগুলোকে শক্ত করে বাঁধতে হয়।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
ফসল তোলার উৎসবে মেতেছেন কৃষকরা
শীতের সৌন্দর্যে মেতেছে চীনের প্রকৃতি। কয়েকদিন আগেই শরৎকাল থেকে নতুন আবহাওয়ায় প্রবেশে করেছে দেশটি। এরইমধ্যে তোলা হয়েছে অধিকাংশ ফসল। সব মিলিয়ে বলা যায় ফসল সংগ্রহের উৎসবে মেতেছে চীনের কৃষকরা।
দেশটির চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ সিটিতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জায়গায় করা হয়েছে ধানের চাষ, যেখান থেকে বেশ ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এক মু পরিমাণ জমি থেকে পাওয়া গেছে প্রায় ৭৫০ কেজি ফসল, যা গেলবারের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
এদিকে পূর্ব চীনের চিয়াংশু প্রদেশের ফুকৌ জেলায় প্রায় ৭০০ হেক্টর জমি থেকে ধান সংগ্রহ করেছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রয় কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় থাকায় তাদের বেশ ভালো উপার্জন হচ্ছে।
এরইমধ্যে উত্তর-পূর্ব চীনে ফসল কেনাবেচাও শুরু হয়ে বলে জানা যায়। হেইলংচিয়াং প্রদেশের ফুচিন সিটির মার্কেটগুলোতে ফসল কিনতে দূর দূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতারা। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ব্যবসার সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা
করছেন কৃষকরা।
প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
চীনের কৃষি মেলায় এসে মুগ্ধ বিদেশি ক্রেতারা
বিশ্বের জনপ্রিয় কৃষি মেলা চায়না ইন্টারন্যাশনাল এগ্রি ফেয়ার সম্প্রতি দেশটির শানতোং প্রদেশের ছিংতাও সিটিতে আয়োজিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের কৃষিপণ্য মেলায় প্রদর্শিত হয় যা আকৃষ্ট করে দেশ বিদেশের ৩০ হাজার ক্রেতাকে।
১ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে মেলা প্রাঙ্গন গড়ে তোলা হয় যেখানে রয়েছে ১১টি বিশেষ প্রদর্শনী জোন।
আন্তর্জাতিক এ মেলায় অংশ নেয় ৩ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রদর্শন করা হয় ২০ হাজারের বেশি কৃষিপণ্য। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ফসল ও তেলজাতীয় পণ্য। এছাড়া বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আনা রসালো ফলগুলো তুলে ধরা হয় প্রদর্শনীতে।
রাশিয়া, ইরান, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের ১৮টি দেশ ও অঞ্চল এ মেলায় অংশ নেয়। ৪ দিন ব্যাপী এ মেলায় বেশ কিছু নতুন ব্র্যান্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী