‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৪৫
2023-11-22 14:56:07

     

                               

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।       

১.  পেশাগত দক্ষতা প্রতিযোগিতা ‘ওয়ার্ল্ড স্কিল কম্পিটিশন’ 

 

ইয়াং তংহুই , চীনের অত্যন্ত দক্ষ একজন কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল (সিএনসি) প্রশিক্ষক। ৪৪তম ওয়ার্ল্ড স্কিলস বা বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সিএনসি মিলিংয়ে স্বর্ণপদক জেতেন। এ ছাড়া দেশের সেরা খেলোয়াড়েরও খেতাব অর্জন করেন তিনি।

সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের ‘আধুনিককরণের স্ন্যাপশট শীর্ষক তথ্যচিত্রে চীনা এ তরুণের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের নানা সাফল্যের গল্পের তুলে ধরা হয় এ তথ্যচিত্রে।

 

ইয়াং তংহুইয়ের সুযোগ ছিল বিলাসবহুল জীবনযাপনের। সিএনসিতে দক্ষ হওয়ায় ভাল বেতনের বেশ কয়েকটি সুযোগ আসে তার সামনে। কিন্তু সেসব চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিভাবান তরুণদের জীবনে পরিবর্তন আনতে এবং দারিদ্র্য দূর করতে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেন এ তরুণ।

 

বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের মেশিনারি টেকনিশিয়ান কলেজে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

 

শিক্ষকতার ছয় বছরের ক্যারিয়ারে তিনি চীনকে দুজন জাতীয় ও দুজন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উপহার দিয়েছেন। তার সাবেক অনেক শিক্ষার্থী ভাল বেতনের চাকরিও পেয়েছেন। পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি জীবনমান পরিবর্তন করতে ইয়াংয়ের কাছে গ্রামাঞ্চল থেকেই বেশি শিক্ষার্থী আসেন।

 

ইয়াং জানান, তিনি ছাত্র থাকাকালীন বেশ অবাধ্য হলেও সৌভাগ্যবান ছিলেন। কেননা তিনি একটি ভোকেশনাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানকার শিক্ষকরা তার জীবনে পরিবর্তন এনেছিলেন। তবে বর্তমানে ইয়াংয়ের ইচ্ছা তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজের অর্জিত জ্ঞান এবং নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।

 

ওয়ার্ল্ড স্কিলস প্রতিযোগিতা, যা ‘প্রযুক্তিবিদদের অলিম্পিক’ নামেও পরিচিত। বিশ্বব্যাপী পেশাগত দক্ষতা প্রচারের এ প্রতিযোগিতাটি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়।

 

চীনের আধুনিকায়ন হলো কমিউনিস্ট পার্টির সমাজতন্ত্রের আধুনিকীকরণ। এর মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা সমস্ত দেশের আধুনিকীকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

চীনের আধুনিকীকরণের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো- বিশাল জনগোষ্ঠীর আধুনিকীকরণ, সকলের জন্য সমৃদ্ধির আধুনিকীকরণ, বস্তুগত এবং সাংস্কৃতিক-নৈতিক অগ্রগতির আধুনিকীকরণ, মানবতা ও প্রকৃতির মধ্যে সম্প্রীতির আধুনিকীকরণ এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের আধুনিকীকরণ।

 

প্রতিবেদন : শুভ আনোয়ার

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

২. একদল তরুণের হাতে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড

সপ্তমবারের মতো দেশ গঠনে এগিয়ে আসা একদল তরুণের হাতে উঠলো জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩।  বাংলাদেশে তরুণ স্বপ্নবাজদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ঘোষিত ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’  প্রদান করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি ছয়টি ক্যাটাগরিতে তরুণদের ১২টি সংগঠনকে এই পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়।

‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া সংগঠনগুলো ছাড়াও ৩০০টির বেশি সংগঠন নিয়ে ইয়াং বাংলা বর্তমানে তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই সংগঠনগুলোসহ ইয়াং বাংলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক ও ৩ লাখের বেশি সদস্য। ২০২২ সালের মে মাসে ইয়াং বাংলার সদস্য হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

ইয়াং বাংলা’র উদ্যোগে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের’ সপ্তম আসরের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রতি। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়; যা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলে। সারা দেশ থেকে আসা ৭৫০টিরও বেশি সংগঠনের আবেদনের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই ও ফিল্ড ভিজিট শেষে ৬ ক্যাটাগরিতে এবার ১২টি সংগঠনকে প্রদান করা হয় ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’।

 

‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে ধারণ করে তরুণদের দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত প্রদান করা হয় জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। আয়োজকরা জানান, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলতে এবং বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তাদের কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা দিতেই এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। 

২০১৪ সালে প্রথম বারের মতো সমাজে বাল্যবিবাহ বন্ধ, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান ও সুস্থদের সহযোগিতা করা যুবক ও যুব সংগঠনকে '‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’-এর আওতায় পুরস্কৃত করা হয়। গত কয়েক বছরে এই পুরষ্কার পাওয়া ব্যক্তি ও সংগঠন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশকে তুলে ধরা ও অন্যদের মাঝে অনুপ্রেরণা তৈরি করা গেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

চলতি বছর ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোকে যে ৬টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার প্রদান করা হয় সেগুলো হলো- দক্ষতা ও কর্মসংস্থান, শিল্প ও সংস্কৃতি, নিজ সমাজে সুস্থতা ও এ বিষয়ক সচেতনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু ও পরিবেশ এবং উদ্ভাবন ও যোগাযোগ।

সপ্তমবারের এই আয়োজনে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘সম্ভাবনা’ ও ‘ঋতু হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন’; শিল্প ও সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে পেয়েছে ‘অভিনন্দন ফাউন্ডেশন’ ও ‘টং-এর গান’; কমিউনিটর সুস্থতা ক্যাটাগরিতে ‘নপম ফাউন্ডেশন’ ও ‘অলট্রাস্টিক পিপল’স ইউথ অরগানাইজেশন’; সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতে ‘উইমেন'স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’ ও ‘ভালো কাজের হোটেল’; জলবায়ু ও পরিবেশ ক্যাটাগরিতে ‘ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড স্নেইক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ’ ও ‘ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবাল’; উদ্ভাবন ও যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ ও ‘টিম অ্যাটলাস’।

 

প্রতিবেদন : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

সম্পাদক : শান্তা মারিয়া

৩. তরুণদের যোগ্যতার প্রমাণের প্লাটফর্ম দক্ষতা প্রতিযোগিতা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যুগে পরিবেশবান্ধব গাড়ি, ফাইভ-জি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মতো শিল্প ক্ষেত্রগুলো দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। পাশাপাশি এসব শিল্পক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদার কথা মাথায় রেখে চীনের তরুণ প্রতিভা অন্বেষণ ও তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে দেশটির ‘জাতীয় শিল্প এবং তথ্য প্রযুক্তি দক্ষতা প্রতিযোগিতা।’  

 

সম্প্রতি দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশে দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজন করা হয় জাতীয় শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি দক্ষতা প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ তরুণদের খুঁজে বের করতে শিল্প ক্ষেত্রগুলোর চাহিদা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ প্রতিযোগিতা বিভাগ রাখা হয় এবারের প্রতিযোগিতায়। 

 

এ বছর প্রতিযোগিতায় অটোমোটিভ চিপ ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাপ্লিকেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিগ ডাটা অ্যালগরিদম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট সিকিউরিটি এবং ডেভেলপমেন্ট-অ্যাপ্লিকেশান ফাইভ-জি ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এ চারটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ বিষয়গুলো বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

প্রতিযোগিতা চলাকালীন অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে অটোমোটিভ কম্পিউটিং এবং সেন্সিং ফাংশনের জন্য চিপ ডিজাইন ও টেস্ট করতে হয়। মূল পর্বের প্রতিযোগিতায় চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ১ হাজার ৫৫জন অংশগ্রহণ করেন। যাদের সকলেই একই ধরনের ব্যবহারিক পরীক্ষার মুখোমুখি হন।

 

কর্মসংস্থানের হার শতভাগ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানালেন দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের কুয়াংচৌ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ট্রেড টেকনিশিয়ান কলেজের শিক্ষক ইয়াং সু। 

‘অটোমোটিভি চিপ প্যাকেজিং, টেস্টিং এবং ডিজাইন শিল্পে প্রতিভাবান তরুণদের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে আমাদের কলেজ মেকাট্রনিক্স প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত যানবাহন অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে।’   

 

জাতীয় শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি দক্ষতা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত প্রতিযোগীদের সম্পন্ন করা কাজের গুণমান এবং সময়োপযোগীতার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কুয়াংতং প্রদেশের একটি ভিআর প্রযুক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা উ বিয়ান। তিনি তার কোম্পানির জন্য এ প্রতিযোগিতা থেকে দক্ষ তরুণ বাছাই করেছেন বলে জানান। 

 

‘প্রতিযোগিতার ট্রায়াল এবং ফাইনাল রাউন্ডের মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যে কিছু চমৎকার প্রতিযোগীকে বাছাই করেছি। টাস্ক সমাপ্তি এবং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পারফরম্যান্স বেশ চমৎকার ছিল। আমাদের কোম্পানির জন্য তারা রিজার্ভ প্রতিভা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।’

চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এবং শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র উৎপাদন শিল্পের শীর্ষ দশটি প্রধান খাতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন দক্ষ জনবলের অভাব হতে পারে।

 

প্রতিবেদন : শুভ আনোয়ার

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী